ইসমাইল নাকি ইসহাক?

আল্লাহ্ হযরত ইব্রাহীমের কোন পুত্রকে কোরবানি দিতে বলেছিলেন, ইসহাককে নাকি ইসমাইলকে? বাইবেলে লেখা আছে ইসহাককে অপরদিকে কুরআনে লেখা আছে ইসমাইলকে। প্রকৃতপক্ষে কোনটি সঠিক?

ইসহাকই ছিল। প্রচলিত মুসলমান ধারণা হচ্ছে যে কোরআন অনুযায়ী ইসমাইলকে কোরবানী দিতে বলেছেন, কিন্তু আসলে
কোরআন শরীফে সেটা কোথাও লেখা নেই। এই ঘটনার সম্বন্ধে একটি আয়াত আছে কোরআন শরীফে:

وَقَالَ إِنِّي ذَاهِبٌ إِلَى رَبِّي سَيَهْدِينِ رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ فَبَشَّرْنَاهُ بِغُلَامٍ حَلِيمٍ فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ السَّعْيَ قَالَ يَا بُنَيَّ إِنِّي أَرَى فِي الْمَنَامِ أَنِّي أَذْبَحُكَ فَانظُرْ مَاذَا تَرَى قَالَ يَا أَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُ سَتَجِدُنِي إِن شَاء اللَّهُ مِنَ الصَّابِرِينَ فَلَمَّا أَسْلَمَا وَتَلَّهُ لِلْجَبِينِ وَنَادَيْنَاهُ أَنْ يَا إِبْرَاهِيمُ قَدْ صَدَّقْتَ الرُّؤْيَا إِنَّا كَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ إِنَّ هَذَا لَهُوَ الْبَلَاء الْمُبِينُ وَفَدَيْنَاهُ بِذِبْحٍ عَظِيمٍ
৯৯সে বললঃ আমি আমার পালনকর্তার দিকে চললাম, তিনি আমাকে পথপ্রদর্শন করবেন। ১০০হে আমার পরওয়ারদেগার! আমাকে এক সৎপুত্র দান কর। ১০১সুতরাং আমি তাকে এক সহনশীল পুত্রের সুসংবাদ দান করলাম। ১০২অতঃপর সে যখন পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হল, তখন ইব্রাহীম তাকে বললঃ বৎস! আমি স্বপ্নে দেখিযে, তোমাকে যবেহ করছি; এখন তোমার অভিমত কি দেখ। সে বললঃ পিতাঃ! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন। আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে সবরকারী পাবেন। ১০৩যখন পিতা-পুত্র উভয়েই আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইব্রাহীম তাকে যবেহ করার জন্যে শায়িত করল। ১০৪তখন আমি তাকে ডেকে বললামঃ হে ইব্রাহীম, ১০৫তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে! আমি এভাবেই সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।১০৬নিশ্চয় এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা। ১০৭আমি তার পরিবর্তে দিলাম যবেহ করার জন্যে এক মহান জন্তু। (সূরা সাফফাত ৩৭:৯৯-১০৭)

লক্ষ্য কর যে এই বর্ণনায় পুত্রের নামের উল্লেখ নেই, বরং শুধু লেখা আছে যে তিনি একটি “সুসংবাদের” পুত্র।

وَتَرَكْنَا عَلَيْهِ فِي الْآخِرِينَ سَلَامٌ عَلَى إِبْرَاهِيمَ كَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ إِنَّهُ مِنْ عِبَادِنَا الْمُؤْمِنِينَ وَبَشَّرْنَاهُ بِإِسْحَقَ نَبِيًّا مِّنَ الصَّالِحِينَ وَبَارَكْنَا عَلَيْهِ وَعَلَى إِسْحَقَ وَمِن ذُرِّيَّتِهِمَا مُحْسِنٌ وَظَالِمٌ لِّنَفْسِهِ مُبِينٌ
১০৮আমি তার জন্যে এ বিষয়টি পরবর্তীদের মধ্যে রেখে দিয়েছি যে, ১০৯ইব্রাহীমের প্রতি সালাম বর্ষিত হোক। ১১০এমনিভাবে আমি সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। ১১১সে ছিল আমার বিশ্বাসী বান্দাদের একজন। ১১২আমি তাকে সুসংবাদ দিয়েছি ইসহাকের, সে সৎকর্মীদের মধ্য থেকে একজন নবী। ১১৩তাকে এবং ইসহাককে আমি বরকত দান করেছি। তাদের বংশধরদের মধ্যে কতক সৎকর্মী এবং কতক নিজেদের উপর স্পষ্ট জুলুমকারী। (সূরা সাফফাত ৩৭:১০৮-১১৩)

এর কয়েক আয়াত পরে লেখা আছে যে “সুসংবাদের” পুত্র হচ্ছে ইসহাক। এখানে ইসমাইলের নামের কোন উল্লেখ নেই।

هَلْ أَتَاكَ حَدِيثُ ضَيْفِ إِبْرَاهِيمَ الْمُكْرَمِينَ إِذْ دَخَلُوا عَلَيْهِ فَقَالُوا سَلَامًا قَالَ سَلَامٌ قَوْمٌ مُّنكَرُونَ … فَأَوْجَسَ مِنْهُمْ خِيفَةً قَالُوا لَا تَخَفْ وَبَشَّرُوهُ بِغُلَامٍ عَلِيمٍ فَأَقْبَلَتِ امْرَأَتُهُ فِي صَرَّةٍ فَصَكَّتْ وَجْهَهَا وَقَالَتْ عَجُوزٌ عَقِيمٌ قَالُوا كَذَلِكَ قَالَ رَبُّكِ إِنَّهُ هُوَ الْحَكِيمُ الْعَلِيمُ
“২৪আপনার কাছে ইব্রাহীমের সম্মানিত মেহমানদের বৃত্তান্ত এসেছে কি? ২৫যখন তারা তাঁর কাছে উপস্থিত হয়ে বললঃ সালাম, তখন সে বললঃ সালাম। এরা তো অপরিচিত লোক। … ২৮অতঃপর তাদের সম্পর্কে সে মনে মনে ভীত হলঃ তারা বললঃ ভীত হবেন না। তারা তাঁকে একট জ্ঞানীগুণী পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিল।২৯অতঃপর তাঁর স্ত্রী চীৎকার করতে করতে সামনে এল এবং মুখ চাপড়িয়ে বললঃ আমি তো বৃদ্ধা, বন্ধ্যা। ৩০তারা বললঃ তোমার পালনকর্তা এরূপই বলেছেন। নিশ্চয় তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।”    (সূরা আয-যারিয়াত ৫১:২৪-২৫;২৮-৩০)

প্রাচীন যুগের ব্যাখ্যাকারীর মধ্যে অনেকেই বলত যে সেই কোরবানীর ঘটনার পুত্র ছিল ইসহাক। কিন্তু মূল প্রমাণ তো
তৌরাত শরীফের সুস্পষ্ট বাণী।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।