নবিরা কী পাপ করতে পারেন?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

হজরত ঈসা ব্যতীত সকল নবিই পাপের শিকার হয়েছেন।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

যাঁরা কোন মানুষ, দেশ, ঘটনা ও পরিস্থিতি সম্পর্কে ভবিষ্যতের কথা বলেন তাঁদের নবি বলা হয়। কিতাবি ইতিহাস থেকে জানা যায়, এই নবিরা শুধু ভবিষ্যতের কথাই বলতেন না, তাঁরা পাকরুহের পরিচালনায়, যে কোন সময় সম্পর্কে বিচারের, শাস্তির, ধ্বংসের ও পুরস্কারের কথা বলতেন। তাঁরা আল্লাহর কালাম শিক্ষা দিতেন, ব্যাখ্যা করতেন এবং মানুষকে আল্লাহর সত্যে পরিচালনা করতেন। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, এই নবিদের কেমন করে গুনাহগার বলা যেতে পারে কিংবা তাঁরা আসলেই গুনাহগার ছিলেন কিনা।

সাধারণ বিবেচনায় নবিদের গুনাহগার বলাটা অস্বাভাবিক, কারণ তাঁরা মানুষকে আল্লাহর কাছ থেকে পাওয়া বাণী শোনাতেন, আল্লাহ ও তাঁর কালামের বিষয়ে শিক্ষা দিতেন। কিন্তু বাস্তবতা অনেক কঠিন। আমরা যাকে স্বাভাবিক মনে করি তা অনেক সময় অস্বাভাবিক, আর যাকে অস্বাভাবিক মনে করি তাই স্বাভাবিক। কেননা নবিগণ নিজেরাই তাঁদের গুনাহর জন্য তওবা করেছেন, আল্লাহর কাছে মাগফেরাত কামনা করেছেন। হজরত আদমের অবাধ্যতা এবং তার শাস্তির কথা (তৌরাত, পয়দায়েশ ৩) আমরা জানি। এছাড়া হজরত নুহের মদ্যপান (তৌরাত শরিফ, পয়দায়েশ ৯:২০-২১) হজরত ইব্রাহিম ও ইসহাকের মিথ্যা বলা (তৌরাত শরিফ, পয়দায়েশ ১২:১০-১৩, ২০:১-২, ২৬:৬, হজরত লূতের মদ্যপান ও ব্যভিচার (তৌরাত শরিফ, পয়দায়েশ ১৯:৩০-৩৪), বিবি রেবেকা ও হজরত ইয়াকুবের ছলনা (তৌরাত শরিফ, পয়দায়েশ ২৭:৫-২৫, হজরত মুসার নরহত্যা (তৌরাত শরিফ, হিজরত ২:১১-১২), হজরত হারুনের মূর্তিপূজা (তৌরাত শরিফ, হিজরত ৩২:১-৭) হজরত দাউদের নরহত্যা ও ব্যভিচার (নবিদের কিতাব, ২শামুয়েল ১১ অধ্যায়), হজরত দাউদের ক্ষমা প্রার্থনা (জবুর শরিফ ৫১ অধ্যায়), হজরত সোলায়মানের বিলাসিতা, ব্যভিচার ও প্রতিমাপূজা (নবিদের কিতাব, ১বাদশাহনামা ১০:১৪-১১:১-১১), হজরত ইউনুসের অবাধ্যতা, পলায়ন ও শেষে মাছে গিলে খাওয়ার সত্য ঘটনা প্রমাণ করে যে, সকল নবি গুনাহগার ছিলেন। ইশাইয়া নবি আল্লাহর পবিত্রতার দর্শন দেখে বলেছিলেন, “হায় হায় আমি ধ্বংস হয়ে গেলাম, কারণ আমার মুখ নাপাক এবং আমি এমন লোকদের মধ্যে বাস করি, যাদের মুখ নাপাক” (নবিদের কিতাব, ইশাইয়া ৬:৫)। ইয়ারমিয়া কিতাবে আল্লাহ বলেন, “দেশের মধ্যে খুব ভয়ংকর ঘটনা ঘটেছে। নবিরা মিথ্যা কথা ঘোষণা করে, ইমামেরা নিজের হাতেই ক্ষমতা নিয়ে শাসন করে, আর আমার বান্দারা এই রকমই ভালবাসে। কিন্তু হে আমার বান্দারা, শেষে তোমরা কি করবে?” (নবিদের কিতাব, ইয়ারমিয়া ৫:৩০-৩১)।

তবে এখানে একটি কথা বলে রাখা খুবই জরুরি যে, আমরা যেন একই পাল্লায় নবিদের সাথে নিজেদের না মাপি। যদি তা করি, তবে জঘন্য অন্যায় হবে। তার কারণ তাঁরা অনেক দিক থেকে আমাদের চেয়ে অনেক অনেক আলাদা এবং বিশেষ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। অন্তত নিচের ৫টি কারণে আমাদের চেয়ে নবিগণ অনেক সম্মানের এবং অনেক গৌরবের:

  1. নবিদের আল্লাহ তাঁর বিশেষ কাজের জন্য বেছে নিতেন।
  2. পাকরুহের মধ্য দিয়ে নবিরা আল্লাহর বাণী বলতেন।
  3. নবিগণ বিনাস্বার্থে আল্লাহর কাজে জীবনের ঝুঁকি নিতেন।
  4. সারা জীবনে দু’একটি ব্যতিক্রম ছাড়া মানুষকে সত্যিকারভাবে ভালবাসতেন।
  5. কোনভাবে পতিত হলে, তওবা করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতেন।
উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।