হজরত ঈসার পুনরুত্থানের রহস্য কী? আসলেই কি তিনি মৃত্যু থেকে পুনর্জীবিত হয়ে উঠেছেন?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

হজরত ঈসার পুনরুত্থান কোন রহস্য নয়। বাস্তবিকই তিনি মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হয়েছেন।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

একদিক থেকে ভাবলে মসীহের পুনরুত্থান এক বিরাট রহস্য। প্রকৃতির অমোঘ নিয়ম হচ্ছে মৃত্যু। ‘জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা রবে?’ চারণ কবির এই ছত্রকে ভুল প্রমাণিত করে আর এক জ্বলন্ত সত্যকে হজরত ঈসা মসীহ বাস্তবায়ন করেছেন। সেই জ্বলন্ত সত্য হলো নিষ্পাপকে কবরস্থ করে রাখা যায় না। ইঞ্জিল কিতাবে লেখা আছে, “গুনাহের বেতন মৃত্যু” (রোমীয় ৩:২৩)। আমরাও কথায় কথায় বলি, ‘লোভে পাপ পাপে মৃত্যু’। আসলেই তাই, গুনাহর কারণেই এই দুনিয়াতে মৃত্যু এসেছে। কিন্তু হজরত ঈসা তো গুনাহর স্বাদ গ্রহণ করেননি, তবে কি করে তাঁর মৃত্যু হবে। এজন্য তিনি জীবিত থাকাকালে নিজেই ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলেন যে, তিনি মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠবেন। তিনি ইউনুস নবির উদাহরণ দিয়ে বলেছিলেন, ইউনুস যেমন তিনদিন মাছের পেটে ছিলেন তেমনি তিনিও তৃতীয় দিবসে কবর থেকে উঠে আসবেন।

সাহাবিদের জীবন পরিবর্তন: মানুষ যত বেশি মানসিক শক্তির অধিকারী হোক না কেন, মৃত্যুর কাছে হার মানতে বাধ্য। হজরত ঈসা মসীহের সাহাবিরা তাঁর যন্ত্রণাদায়ী মৃত্যুতে হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিলেন এবং অনেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। হজরত ঈসার সাহাবি পিতর মসীহকে প্রাণের ভয়ে অস্বীকার করেছিলেন। সেই একই পিতর যখন দেখলেন যে হজরত ঈসা কবর থেকে উঠেছেন তখন তাঁর জীবনে এমন পরিবর্তন এসেছিল যে, তিনি মৃত্যুর মুখে যেতে ভয় পান নি। এমন কি রোমীয় শাসনকর্তাদের বিরুদ্ধে হজরত ঈসাকে মৃত্যুদণ্ড দেবার জন্য অভিযুক্ত করে বক্তব্য দিয়েছিলেন। এই কারণে অত্যাচারিত ও নির্যাতিত হতে কখনও আর পিছ পা হননি; অবশেষে সাক্ষ্য দিতে দিতে তিনি মৃত্যুবরণ করতেও প্রস্তুত ছিলেন এবং মৃতুকে আলিঙ্গন করেছেন। মূলত সাহাবিদের ভগ্নপ্রায় ঈমান এই পুনরুত্থানের মধ্য দিয়েই চাঙ্গা হয়ে উঠেছিল।

তাঁর বেহেস্তে চলে যাওয়া: একেশ্বরবাদীদের প্রায় সকলেই জানে ও বিশ্বাস করে যে, ঈসা মসীহকে আকাশে তুলে নেয়া হয়েছে। যুক্তির খাতিরে যদি ধরে নেয়া হয় যে, তিনি মৃত্যু থেকে উঠেননি, তবে তিনি কীভাবে আসমানে উঠে গেলেন? মানব বংশে জন্মগ্রহণকারী হিসাবে সকল মানুষের মৃত্যু তো অবধারিত। এও তো প্রাকৃতিক নিয়ম। ইঞ্জিল শরিফ অনুসারে হজরত ঈসা মানুষ হিসাবে জন্মেছিলেন, আর প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে আমাদের হয়ে তিনি মৃত্যু বরণ করেছিলেন। যেহেতু তিনি নিজে নিষ্পাপ ছিলেন সেহেতু মৃত্যুর সাধ্য ছিল না তাঁকে ধরে রাখার। কবর থেকে জীবিত হয়ে ওঠার পর তিনি ৪০ দিন যাবৎ পৃথিবীতে ছিলেন এবং একসাথে ৫০০এরও বেশি লোককে দেখা দিলেন। অতপর সাহাবিদের সামনেই তিনি আসমানে উঠে গেলেন।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।