Category Archives: রাজনীতি

ঈসায়ীরা কি পোপের নির্দেশে জীবন যাপন করে?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

না, প্রকৃত ঈসায়ীরা পোপের নির্দেশে জীবন যাপন করে না।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

আল্লাহর কালাম বলে, ধার্মিক কেউ নেই, একজনও নেই, সকলেই গুনাহ করেছে এবং আল্লাহর গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। ঈসায়ী হবার পর অর্থাৎ আল্লাহর দেয়া ধার্মিকতা লাভের পর, ঈসায়ীদের মধ্যে কোন বড় ছোট নেই। তারা সকলেই সরাসরি আল্লাহর সাথে যোগাযোগ করতে পারে। কোন পোপ বা কোন ইমামের মধ্যস্থতা নিয়ে ঈসায়ীদের আল্লাহর কাছে যেতে হয় না। আল্লাহর কালাম অনুযায়ী, ঈসায়ীদের মধ্যস্থ একজনই আছেন, তিনি ঈসায়ীদের খোদাবন্দ ঈসা মসীহ। আল্লাহ ব্যতীত একমাত্র তিনিই নিষ্পাপ হিসাবে জন্মেছিলেন। এবং তিনি গুনাহগারদের হয়ে ক্রুশে কাফফারাস্বরূপ মৃত্যু বরণ করেছিলেন।

সামাজিকভাবে ধর্মীয় জীবন যাপন করার জন্য বিশেষ করে আল্লাহর কালাম শিক্ষা দেবার জন্য ঈসায়ীদের মধ্যে ইমাম বা খাদেম থাকলেও তারা তাদের মধ্যস্থ মনে করে না বা কিতাব সেভাবে বর্ণনা করে না। ইমাম সমাজে নৈমিত্তিক শিক্ষা দেবার কাজ করেন এবং রুহানি নিয়ম শৃঙ্খলা মানার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেন। সামাজিক দিক দিয়ে তাঁর ইমাম পদমর্যাদা থাকলেও তিনি কোনভাবে আল্লাহর চোখে সাধারণ ঈমানদারের চেয়ে বেশি কিছু নন।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসায়ীরা কি ইয়োরোপ আমেরিকার পক্ষপাতিত্ব করে?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

না, ঈসায়ীরা ইয়োরোপ আমেরিকার পক্ষপাতিত্ব করে না।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

পৃথিবীর প্রত্যেক দেশেই ভালোমন্দ মানুষ আছে। পৃথিবীর প্রত্যেক দেশেই ঈসায়ী আছে এবং অ-ঈসায়ী আছে। সাধারণ মানুষের ধারণা হলো, পশ্চিমা দেশগুলোর সব মানুষই ঈসায়ী। তাই এ দেশের ঈসায়ীরা ইউরোপ আমেরিকার পক্ষপাতিত্ব করে। পর্যপেক্ষণে দেখা গেছে যে, পশ্চিমা দেশের মানুষের মধ্যে শতকরা মাত্র ২০ ভাগই প্রকৃত ঈসায়ী। প্রকৃত অর্থে ইউরোপ আমেরিকার অর্ধেক লোকই ধর্মকর্মে বিশ্বাসী নয়। আর যারা ঈসায়ী ধর্মকর্ম করে, তাদের মধ্যে জন্মসূত্রে ধর্মাধিকার পাওয়ার দাবিদারই বেশি। তারা পারিবারিক ঐতিহ্য ও নিয়ম আছে বলেই ধর্মকর্ম করে। আসলে ধর্মের মূল বিষয় যে ঈসা মসীহের উপর ঈমান আনা, সে বিষয়ে অনেকেই তেমন কিছু জানে না।

ঈসায়ীদের দায়িত্ব হলো প্রত্যেক দেশের ঈসায়ী এবং অ-ঈসায়ীদের জন্য মুনাজাত করা যেন তারা প্রকৃত সত্যের পথে আসে। তাই, কোন বিশেষ দেশ বা জাতির পক্ষপাতিত্ব করা ঈসায়ীদের জন্য সমীচীন নয়।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসায়ীরা কি ইসরাইলদের পক্ষপাতিত্ব করে?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

না, ঈসায়ীরা অন্যায়ভাবে ইসরাইল বা অন্যকোন জাতির পক্ষপাতিত্ব করে না।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

আল্লাহ পক্ষপাতদুষ্টকে ঘৃণা করেন। তিনি চান যেন আমরাও অকারণে কোন জাতির বা কারো পক্ষপাতিত্ব না করি। পক্ষপাত বেশিরভাগ সময়ই অন্যায়ের হাতিয়ার হিসাবে কাজ করে। সাধারণত মানুষ আত্মীয় বা ঘনিষ্ঠজনের কিংবা বন্ধুর পক্ষপাতিত্ব করে; এমন কি অন্যায় হলেও তাকে ন্যায় বলে চালিয়ে দেয় কিংবা ন্যায় হলেও অন্যায় সিদ্ধান্ত দিয়ে চেপে রাখে। পবিত্র এবং ন্যায়বান আল্লাহ কখনও এরূপ কাজকে সমর্থন করতে পারেন না।

হজরত ঈসার জীবনকালে ইসরাইল জাতির মন্দ অভ্যাস ও কাজের জন্য তিনি তাদের ধিক্কার দিয়েছেন। তাদের ভণ্ড, কপটি ও শয়তানের সন্তান বলেছেন। দৈনন্দিন কাজে আল্লাহর মহব্বত না দেখানোর জন্য তাদের ভর্ৎসনা করেছেন। তিনি তাদের মিথ্যা প্রেমহীন ধর্মকর্ম থেকে মন পরিবর্তনের ডাক দিয়েছেন। হজরত ঈসা তাঁর সাহাবিদের ইহুদি ও ফরিশিদের খামি থেকে সাবধান থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

হজরত পৌল বলেছেন যে, যাদের হৃদয়ে সুন্নত করানো হয়েছে তারাই আসল ইহুদি। যারা বাহ্যিক সুন্নতের উপর অর্থাৎ যারা আল্লাহভক্তিহীন ধর্মকর্মের উপর নির্ভর করে, তারা আসল ইহুদি নয়। সত্যিকারের ইহুদি আল্লাহর ইচ্ছা মতো চলে। অথচ আমরা দেখতে পাই তথাকথিত ইহুদিরাই হজরত ঈসাকে ক্রুশে দিয়ে হত্যা করতে, রোমীয় সরকারকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহযোগিতা করেছে। অতএব, ঈসায়ীদের কোনভাবেই ইসরাইল জাতির পক্ষপাতিত্ব করার প্রশ্ন আসে না।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

জাতীয় দিবসগুলো কি ঈসায়ীরা পালন করে?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

হ্যাঁ, ঈসায়ীরা জাতীয় দিবসগুলো পালন করে।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন। জাতীয় দিবসগুলো কি সত্যই ঈসায়ীরা পালন করে?

ইহুদিজাতির কোন এক প্রশ্নের উত্তরে হজরত ঈসা শিক্ষা দিয়েছিলেন; যা সম্রাটের তা সম্রাটকে দাও আর যা আল্লাহর তা আল্লাহকে দাও। এই সামাজিক জীবনে বাঁচার জন্য আমাদের যা দরকার তা শৃঙ্খলার তাগিদে মানা উচিত। আল্লাহর কালাম বলে, “যা সত্য, যা উপযুক্ত, যা সৎ, যা খাঁটি, যা সুন্দর, যা সম্মান পাবার যোগ্য, মোটকথা যা ভালো এবং প্রশংসার যোগ্য, সেইদিকে তোমরা মন দাও” (ইঞ্জিল শরিফ, ফিলিপীয় ৪:৮)। ঈসায়ীরা বাংলাদেশে বাস করে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় অনেক ঈসায়ী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। সেই কাজ তখনকার প্রেক্ষাপটে তাদের জন্য উপযুক্ত ছিল। ঠিক তেমনি দেশের সুনাগরিক হিসাবে সরকার যা তাদের কাছ থেকে আশা করে, তা পালন করা উচিত। আল্লাহর সম্মান আল্লাহকে দেওয়া ব্যতীত সরকার নাগরিক হিসাবে তাদের কাছ থেকে যা ন্যায়সংগতভাবে দাবি করে, তা ঈসায়ীদের পালন করা উচিত। অতএব, জাতীয় দিবসগুলো যেহেতু আমাদের সরকারই প্রজ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে জারি করে, সেহেতু নাগরিক হিসাবে ঈসায়ীদের তা পালন করা উচিত। এছাড়া জাতীয় দিবসগুলো সমাজ চেতনামূলক এবং স্বদেশপ্রেম উদ্দীপক। অতএব, জাতীয় দিবসগুলো পালন করা একজন ঈসায়ীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

সাদা মানুষেরাই ঈসায়ী, বাঙালি কি ঈসায়ী হতে পারে?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

যেকোন রংএর, জাতির ও দেশের মানুষই ঈসায়ী হতে পারে।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

ঈসায়ী হবার জন্য সাদা কালোর কোন শর্ত নেই। যেকোন মানুষই ঈসায়ী হতে পারে। যে বা যারা ইঞ্জিল শরিফের শিক্ষা অনুসারে হজরত ঈসার উপর ঈমান আনে, সে-ই ঈসায়ী। হজরত ঈসা মধ্যপ্রাচ্যের লোক ছিলেন। মধ্যপ্রাচ্যের কৃষ্টি, সভ্যতা; ভৌগলিক, ধর্মীয় এবং পরিবেশগত কারণে ইয়োরোপ আমেরিকার লোকদের কৃষ্টি সভ্যতার চেয়ে আরো কাছের, আরো ঘনিষ্টতর। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও এ কথা সত্য যে, আমরা যে ধনের মূল্য বুঝতেও পারিনি, তারা সেই মহারতœ লুফে নিয়েছে এবং সুদূর পাশ্চাত্য থেকে আমাদের কাছে প্রচার করেছে। যেহেতু পাশ্চাত্যের সাদা লাল বর্ণের লোকেরা ঈসা মসীহের কথা আমাদের দেশে প্রথম প্রচার করে, সেহেতু লোকের ধারণা হয় এটি পাশ্চাত্যের ধর্ম। একথা বলা বাহুল্য যে, ঈসা মসীহের বাণী প্রচারের সাথে সাথে, পাশ্চাত্যের লোকেরা তাদের দেশের রীতিনীতি, আচার আচরণও নিয়ে এসেছিল। ফলে, সাধারণ লোকের কাছে ঈসায়ী বা খ্রিস্টান মানে হলো পাশ্চাত্য কৃষ্টি-সভ্যতা জড়িত বিদেশী লোক।

একথা ইসলামি প্রচারের ক্ষেত্রেও সত্য। এদেশে ইসলামও প্রচারিত হয় মধ্যপ্রাচ্য থেকে। মধ্যযুগে মুহম্মদ বিন-কাশিমের সিন্ধু বিজয়ের মধ্যদিয়ে, পাক-ভারত উপমহাদেশে ইসলাম প্রচারের শুরু হলে, একইভাবে মধ্যপ্রাচ্যের কৃষ্টি-সভ্যতা রীতিনীতি আমাদের সমাজে প্রবেশ করে। আমানত শাহ্, বদর শাহ্, পন্থিশাহ্, মোহছেন আউলিয়া, খান জাহান আলী, শাহ্ জালাল, খাজা মঈনুদ্দীন চিশ্তি প্রমুখ ইসলাম প্রচারকগণ মধ্যপ্রাচ্য থেকেই আগত। হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকায়, পাক-ভারতের অধিবাসীরা একসময় ইসলামকেও বিদেশি ধর্ম ভাবতো আর মূসলমান মানে মধ্যপ্রাচ্যের লোক বলে মনে করতো। কালক্রমে ইসলামের এতো বেশি প্রসার হয় যে, সেই ধারণা লোপ পেতে থাকে। অতএব, আমরা বাঙালিরা তো কালো নই, তামাটে; অধিকন্তু আফ্রিকার কুচ্কুচে কালো লোকেরাও ঈসা মসীহকে বিশ্বাস করে, ঈসায়ী হয়।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

মধ্যপ্রাচ্যের ঈসায়ীরা নিজেদের কি নামে পরিচয় দেয়?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

মধ্যপ্রাচ্যের ঈসায়ী ঈমানদারগণ নিজেদের ঈসায়ী হিসাবে পরিচয় দেন।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর: ইঞ্জিল শরিফ গ্রিক ভাষায় রচিত হয়। হজরত ঈসার মাতৃভাষা অরামিক হলেও তিনি গ্রিক ভাষায়ও কথা বলতেন এবং শিক্ষা দিতেন। গ্রিক ভাষায় হজরত ঈসার নাম ‘ইয়েসো’। এথেকে আরবিতে ঈসা হয়েছে। যারা ঈসাকে নাজাতদাতা হিসাবে গ্রহণ করেছে, তারা ঈসায়ী হিসেবে পরিচিত হয়। কোরান শরিফে ঈসায়ীদের নাসারা বলা হয়েছে। নাসরতে জন্ম গ্রহণ করার কারণে হজরত ঈসাকে নাসরতীয় বলা হতো। এই নাসরতীয় ঈসার অনুসারী হিসাবে ঈসায়ীদের নাসারা বলা হতে পারে। হজরত ঈসার আর একটা নাম ছিল খ্রিস্ট আর সেই কারণে যারা হজরত ঈসাকে অনুসরণ করতো, তাদের খ্রিস্টান বলা হতো। কালক্রমে মধ্যপ্রাচ্যে হজরত ঈসার উম্মতেরা ঈসায়ী হিসেবে পরিচিত হয়।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

রাজনৈতিক আগ্রাসনের সাথে কি ঈসায়ীদের কোন সম্পর্ক আছে?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

রাজনৈতিক আগ্রাসনের সাথে ঈসায়ীদের কোন সম্পর্ক নেই।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

অনেকে মনে করেন, দেশে দেশে যে যুদ্ধ হচ্ছে, রাজনৈতিক উত্থান পতন ঘটছে, সরকার পরিবর্তন হচ্ছে, এই সব কিছুর মদদ দাতাদের প্রথম সারিতে আছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। যেহেতেু এই দুটো দেশই খ্রিস্টান দেশ, সেহেতু খ্রিস্টান কিংবা ঈসায়ীরা এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত কিংবা এসব কার্যকলাপের প্রতি ঈসায়ীদের সমর্থন আছে। আসলে এই ধারণা কোন অর্থেই সঠিক নয়। এর কারণ হলো, রাজনীতি এবং ধর্মনীতি এক নয়। রাজনীতি বিভিন্ন কিছুর উপর নির্ভর করে, আর প্রকৃত ধর্মনীতি নির্ভর করে আল্লাহর উপর। উল্লিখিত দেশগুলোর মধ্যে যারা রাজনীতি করছে কিংবা ক্ষমতায় আছে, তাদের মধ্যে সাধারণ ধর্মকর্ম করলেও অনেকেই সত্যিকার ঈমানদার নয়। অন্য যেকোন সাধারণ লোকের মতো হয়তো তারা তাদের ধর্মীয় কিতাব পাঠ করে, এবাদতে যোগ দেয়, দান খয়রাত করে আবার সেই একই সাধারণ লোকের মতো কিছু অন্যায়ও করে; এমনকি অনেকের প্রকৃত ঈমানও নেই। এইসব লোকদের সাথে প্রকৃত ঈসায়ী ঈমানের কোন বাস্তব সম্পর্ক নেই। তাদের দিয়ে সকল ঈসায়ী ঈমানদারের বিচার করাও যুক্তিসঙ্গত নয়।

উদাহরণস্বরূপ, বুশের ইরাক আক্রমণের সময়, অনেক ঈসায়ী বুশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। রাস্তায় নেমে তার বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়। ইউরোপ, আমেরিকাতে তার ও তার সরকারের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করে। ঈসায়ী নেতৃবৃন্দ বুশকে একাজ থেকে সরে আসার আমন্ত্রণ জানায়। এমন কি আমেররিকসহ পুরো খ্রিস্টান দেশগুলোতেই বুশের জনসমর্থন নিম্নগতির দিকে যায়। ঈসায়ীরা যেকোন কর্তপক্ষের জন্য দোয়া মুনাজাত করে। কারণ তাদের বিশ্বাস, আল্লাহ নিজেই কর্তৃপক্ষকে মনোনীত করেন। তাই বলে কর্তৃপক্ষের আল্লাহর ইচ্ছাবিরুধী অপকর্মকেও সমর্থন করবে এমন নয়। আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন সত্য, তাই বলে তার পাপ কাজকে সমর্থন করতে পারেন না। যুগে যুগে ঈসায়ী ঈমানদাররা সত্যের জন্য অনেক রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এমন কি নামধারী অনেক ঈসায়ী রাজাও অত্যাচারী রাজা ছিল, যারা ঈমানদারদের উপরও অত্যাচার করতো। সুতরাং খ্রিস্টান বা ঈসায়ী হলেই যে ঈসায়ীরা তাদের সমর্থন করবে কিংবা তাদের খারাপ কাজের স্বীকৃতি দেবে, এমন নয়।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসায়ীরা কোন্ দেশের নাগরিক?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

ঈসায়ীরা যেকোন দেশের নাগরিক হতে পারে, তবে আসল কথা হলো, তারা চূড়ান্তভাবে বেহেস্তের নাগরিক।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

জনৈককবি বলেন, ‘দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।’ আমাদের দেশের সাধারণ লোকদের ধারণা হলো ঈসায়ীরা বিদেশী, কোন কারণে এদেশে এসেছে, কিছুদিন পর চলে যাবে। এর কারণও সংগত। প্রথমত, এই ধর্মীয় বিশ্বাস মূলত আমাদের দেশের নয়, বাইরে থেকে আগত। দ্বিতীয়ত, আমাদের দেশে যে মণ্ডলী স্থাপিত হয়েছে, তাদের চালচলন, রীতিনীতি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের দেশের আদলে নয়; অনেকটা বিদেশী। তাদের নাম-ধাম, কথা বলার ধরণ, পোশাক-পরিচ্ছদ, চাল-চলন প্রায় সবকিছুই যেন অন্যরকম। তৃতীয়ত, মণ্ডলীর লোকদের সাথে কোন না কোন সময়, কোন লাল কিংবা সাদা লোককে দেখা যায়। চতুর্থত, তারা সাধারণ লোকদের চেয়ে অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছল। আমাদের দেশের খেটে খাওয়া মানুষের দল থেকে এমনকি নিম্ন ধর্মবর্ণ থেকে আসলেও ভালো চাকরি ও সুযোগ সুবিধা পেয়ে, তারা এমন পর্যায়ে উঠে যায় যে, তাদের জীবন-যাপন বদলে যায়। আর তারা সাধারণ মানুষের চেয়ে আলাদা হয়ে যায়। ফলে, মানুষ মনে করে এরা বিদেশী লোক।

কিন্তু এমন মনে করার কোন কারণ নেই যে, বাংলাদেশে বসবাসকারি সকল ঈসায়ীরা বিদেশী। অনেকের ধারণা, ঈসা নবির উম্মত হলে, তারা ইউরোপ আমেরিকার নাগরিকত্ব লাভ করে। কেউ কেউ হয়তো কোন কারণে অন্যকোন দেশের নাগরিক হতে পারে, যা যেকোন ধর্মের লোক করতে পারে কিন্তু তাতে ধর্মবিশ্বাসের কোন সম্পর্ক নেই।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০