Category Archives: কিতাব

ইঞ্জিল শরিফ সম্পর্কে কোরান কী শিক্ষা দেয়?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

ইঞ্জিল সম্পর্কে কোরান ভালো শিক্ষা দেয়।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

কোরান শরিফ প্রায় ৬১০ খ্রিস্টাব্দের পরে নাজেল হতে শুরু করে। এই সময় সমাজে তাওরাত, জবুর ও নবিদের কিতাব পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যেতো ও মানুষ তা ব্যবহার করতো। কোরান শরিফের আগে ইঞ্জিল শরিফই নাজেল হয়েছিল। তাই সেই কিতাব আরো বেশি পরিমাণে ছিল। ফলে এই কিতাবের কথা বলা আরো সমীচীন ছিল। তাই আল্লাহ কোরানে সন্দেহবাদীদের উত্তর দেবার জন্য হজরত মুহম্মদকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, “আমি তোমার প্রতি যাহা অবতীর্ণ করিয়াছি উহাতে যদি তুমি সন্দেহ পোষণ করে থাকো তবে তোমার পূর্বের কিতাব যাহারা পাঠ করে তাহাদিগকে জিজ্ঞাসা কর; তোমার প্রতিপালকের নিকট হইতে তোমার নিকট সত্য অবশ্যই আসিয়াছে। তুমি কখনও সন্দিগ্ধচিত্তদের অনন্তর্ভুক্ত হইও না” (সুরা ইউনুস ৯৪ আয়াত)।

ইঞ্জিল শরিফের গ্রহণযোগ্যতা ছিল প্রশ্নাতীত। হজরত ঈসা ও ইঞ্জিল শরিফ সম্পর্কে তাই আরো স্পষ্ট করে কোরানে বলা হয়েছে। লেখা আছে, “মারইয়াম-তনয় ঈসাকে তাহার পূর্বে অবতীর্ণ তাওরাতের সমর্থকরূপে উহাদের পশ্চাতে পেরণ করিয়াছিলাম এবং তার পূর্বে অবতীর্ণ তাওরাতের সমর্থকরূপে এবং মুত্তাকিদের জন্য পথের নির্দেশ ও উপদেশরূপে তাহাকে ইঞ্জিল দিয়াছিলাম; উহাতে ছিল পথের নির্দেশ ও আলো (সুরা মায়িদা ৫৬ আয়াত)।

অতএব, এ আয়াতগুলো থেকে বোঝা যায়, কোরানের শিক্ষানুসারে আগের কিতাবগুলোকে সন্দেহ করা উচিত নয় বরং মানুষের জন্য তা সত্য এবং আলো হিসাবে গ্রহণ করা উচিত।

কোরানি শিক্ষার বিষয়ে ঈসা মসীহ কী বলেছেন?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

কোরানি শিক্ষার বিষয়ে হজরত ঈসা কিছুই বলেননি।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

কোরান নাজেল হওয়ার প্রায় ৬১০ বছর আগে হজরত ঈসা এই দুনিয়াতে এসেছিলেন। তিনি যখন শিক্ষা দিতেন তখন তাওরাত, জবুর, ইঞ্জিল এবং অন্যান্য নবিগণের সহিফা ব্যবহার করতেন। অর্থাৎ হজরত ঈসা তাঁর আগে আসা নবিদের কিতাব বিশ্বাস করতেন এবং সেগুলোর ভিত্তিতে মানুষকে সত্য শিক্ষা দিতেন। এছাড়া হজরত ঈসা নিজে থেকেও অনেক শিক্ষা দিতেন। তিনি এসেছিলেন মানুষের গুনাহ থেকে নাজাতের জন্য। অন্যান্য নবিগণের শিক্ষায় মানুষের অনন্তকালীন নাজাত প্রাধান্য পায়নি। এই দুনিয়াতে কীভাবে শৃঙ্খলার সাথে বাঁচতে পারে, তাই ছিল তাদের প্রতিপাদ্য বিষয়। কিন্তু হজরত ঈসার আগমনের মূল কারণই ছিল মানুষের নাজাত; গুনাহ থেকে চিরকালীন মুক্তি অর্থাৎ নাজাত। তাই তিনি নাজাতের উপরই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। নাজাত লাভের ক্ষেত্রে বা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার ক্ষেত্রে আগেকার লোকদের জাগতিক ধর্মকর্মের অকার্যকারিতা তিনি প্রমাণ করেছেন।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসায়ীরা কি কোরান বিশ্বাস করে?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

কোরান বলে যে মুসলমানদের একটি ধর্মগ্রন্থ আছে ঈসায়ীরা তা বিশ্বাস করে।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

কোন একজন মুসলমানকে যদি প্রশ্ন করা হয়, “আপনি কি ইঞ্জিল বিশ্বাস করেন?” তিনি নির্দ্বিধায় উত্তর দেন যে তিনি বিশ্বাস করেন। কোরানেই সকল আসমানি কিতাবকে বিশ্বাস করতে বলা হয়েছে। কিন্তু দেখা যায় এই প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ বোধক দিলেও ইঞ্জিল শরিফ তিনি মানেন না। এদিক থেকে যুক্তির খাতিরে, ঈসায়ীরাও বলতে পারে যে, তারাও কোরান বিশ্বাস করে কিন্তু এর আদেশ নিষেধ তারা মানে না। এর আগের প্রশ্নোত্তরে বলা হয়েছে যে কোরানের মধ্যে অনেক সত্য কথা রয়েছে, রয়েছে আগের কিতাব থেকে নানা ঘটনার উল্লেখ। সত্য চিরকালই সত্য, যে সত্য হাজার হাজার বছর আগে হজরত মুসাকে, হজরত দাউদকে, হজরত সোলায়মানকে, হজরত ঈসাকে আল্লাহ দিয়েছেন, তা যদি কোরানে থাকে তা বিশ্বাস না করার কিংবা না মানারও কিছু নেই।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

কোরান সম্পর্কে ঈসায়ীদের ধারণা কী?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

কোরান সম্পর্কে ঈসায়ীদের ধারণা হলো, কোরান মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ যা হজরত মুহম্মদের মধ্যদিয়ে এসেছে।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

কোরান মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ হলেও হজরত ঈসা, ইঞ্জিল শরিফ ও ঈসায়ীদের সম্পর্কে কোরানে অনেক কিছুই বলা হয়েছে। হজরত ঈসা সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তিনি নিষ্পাপ ছিলেন, তিনি অবিবাহিতা মেয়ের গর্ভে জন্ম গ্রহণ করেছেন, জন্মের পরই তিনি তাঁর অলৌকিক জন্মের বিষয়ে মানুষের সাথে কথা বলেছেন। তিনি অনেক আশ্চর্য কাজ করেছেন এবং তিনি শেষকালে আবার আসবেন। কোরান থেকে বোঝা যায়, ইঞ্জিল কিতাব বিশুদ্ধ এবং তা মানুষের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি ধর্মগ্রন্থ ছিল। কোরানে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন মানুষ ইঞ্জিল শরিফ পড়ে। কোরান শরিফ অনুসারে ঈসায়ীরা গুরুত্বপূর্ণ, তারা আল্লাহ ও তার কালাম সম্পর্কে অনেক জানে। আর তাই প্রয়োজনীয় জ্ঞান লাভ করার জন্য ঈসায়ীদের কাছে যাবার পরামর্শও কোরান দিয়েছে। অতএব, এদিক থেকে কোরান ঈসায়ীদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসায়ীদের জন্য কি কোন হাদিস আছে?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

ঈসায়ীদের কাছে ইঞ্জিল শরিফের বাইরে হাদিস বলতে কিছু নেই।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

কোন নবিকে কেউ কিছু বলতে শুনেছেন, করতে দেখেছেন কিংবা কোন নবি কোন বিষয়ে মৌন থেকেছেন বা সরাসরি আদেশ করেছেন অথবা নিষেধ করেছেন বলে, প্রকাশ করা হয়, তা-ই হাদিস। ঈসায়ীদের কাছে এ ধরনের কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই। যারা হাদিসে বিশ্বাসী, তারা সাধারণত হাদিসকে জীবন-যাপনের নির্দেশনা বলে মানে। তারা ভাবে যে, হাদিস তাদের মূল ধর্মগ্রন্থকে ব্যাখ্যা করার সহায়ক হিসাবে কাজ করে এবং হাদিস ছাড়া জীবন-যাপন প্রায় অসম্ভব। তাই হাদিসকে আল্লাহর কালামের সাথে সমতুল্য করা হয়।

এ ধরনের কোন হাদিস বিশ্বাস না করলেও ঈসায়ীরা আল্লাহর কালামের ব্যাখ্যার উপর গুরুত্ব আরোপ করে। ঈসায়ীদের মধ্যে কালামের লক্ষ লক্ষ তফসিরকারক বা ব্যাখ্যাকারক রয়েছেন, যারা প্রতিনিয়ত আল্লাহর কালামের চর্চার জন্য আত্মনিয়োজিত আছেন। ঈসায়ীরা বিশ্বাস করে যে, আল্লাহর কালাম তফসির করার জন্য আল্লাহ মানুষকে ব্যবহার করতে পারেন। একদিক থেকে এধরনের তফসিরকে হাদিস বলা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে যে, এসব তফসির কোনভাবেই আল্লাহর কালামের সমতুল্য নয় এবং তুলনা করাও অসমীচীন। কিতাবুল মোকাদ্দসের মতো আর কোন লিখিত কালামের অস্তিত্ব নেই, প্রয়োজনও নেই। তবে ঈসায়ীদের বিশ্বাস হলো, এখনও আল্লাহ পাকরুহের মধ্য দিয়ে মানুষের সাথে কথা বলেন। তার মানে হলো, তফসিরকারকগণ আল্লাহর পাকরুহের চেতনা পেয়ে, মানুষের শিক্ষার জন্য আল্লাহর কালাম ব্যাখ্যা করেন।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

হজরত পৌলের কথা ঈসায়ীরা কেন বিশ্বাস করে?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

হজরত পৌলের কথা কিতাবুল মোকাদ্দস এবং হজরত ঈসার শিক্ষার সাথে সংগতিপূর্ণ ও শিক্ষামূলক, তাই তা বিশ্বাস করে।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

ইঞ্জিল শরিফের মধ্যে হজরত পৌলের লেখা সিপারাই সবচেয়ে বেশি। তিনি মানবজীবনের প্রয়োজনীয় প্রত্যেক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন, অনেক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধান দিয়েছেন, ঈসায়ী ঈমানের মূলসত্যকে ঈমানদারগণের কাছে জীবন্ত করে তুলেছেন। তাঁর শিক্ষার মধ্যদিয়ে ঈসায়ী ধর্মতত্ত্বের প্রধান প্রধান দিকগুলো উন্মোচিত হয়েছে। আল্লাহ, হজরত ঈসা, পাকরুহ, সমাজ, সমাজের নেতৃত্ব, সামাজিক জীবন, ঈসায়ী জীবন ইত্যাদি কোনটাই তাঁর শিক্ষা থেকে বাদ পড়েনি।

একসময় হজরত পৌল ছিলেন ঈসায়ীদের অত্যাচারী। তিনি ঈসায়ীদের ধরে ধরে হত্যা করার নেতৃত্ব দিতেন। তিনি স্তিফান নামক একজন নামকরা ঈমানদারকে হত্যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। একদিন হজরত ঈসা তাঁকে দর্শন দেন, তিনি অন্ধ হয়ে যান। এই সময় তিনি হজরত ঈসাকে দেখতে পান এবং তাঁর কাছ থেকে সরাসরি সাহাবিত্ব লাভ করেন। অতঃপর হজরত ঈসার আদর্শ প্রচার এবং শিক্ষা দেবার জন্য তিনি আজীবন দুঃখ-কষ্ট ও অত্যাচার ভোগ করেন। শেষে এই বিশ্বাসের জন্য তাঁকে হত্যাও করা হয়। হজরত ঈসা যে কারণে দুনিয়াতে এসেছিলেন এবং যে বিষয়ে তিনি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছিলেন হজরত পৌল তারই ব্যাখ্যা দেন। অতএব, হজরত পৌলের শিক্ষা ঈসায়ীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

কিতাবুল মোকাদ্দস কি সবাই পড়তে পারে?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

হ্যাঁ, কিতাবুল মোকাদ্দস সবাই পড়তে পারে।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

আমাদের দেশে হিন্দু সমাজের মধ্যে একটি প্রচলন ছিল যে, ব্রাহ্মণ ছাড়া সাধারণ লোক হিন্দু শাস্ত্র পড়তে পারতো না এমন কি স্পর্শও করতে পারতো না। ঈসায়ীদের মধ্যেও একসময় ছিল সাধারণ মানুষকে কিতাবুল মোকাদ্দস পড়তে দেয়া হতো না। বিশেষ বিশেষ ধর্মীয় নেতারা তা পড়তে ও শিক্ষা দিতে পারতেন। কিন্তু এটি কিতাবি সত্য অনুসারে সঠিক নয়। আল্লাহ তাঁর কালাম সবার জন্য দিয়েছেন। সবার মঙ্গলের কথা এখানে লেখা আছে। কেউ যদি আল্লাহর কালাম না পড়ে, তবে সে আল্লাহর ইচ্ছা জানা থেকে বঞ্চিত হয়। তাই একসময় এই অপব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আসে; মানুষ এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। অবশেষে কিতাব পড়া এবং শিক্ষা দেবার সুযোগ সাধারণ মানুষের হাতে ফিরে আসে। আল্লাহ চান যেন সবাই তাঁর কিতাব পড়ে এবং তাঁর ইচ্ছা জেনে তাঁর বাধ্য হয়। তাওরাত কিতাবে ছেলেমেয়েদের আল্লাহর কালাম শিক্ষা দেবার কথা বলা হয়েছে। দিনে রাতে, উঠতে, বসতে সবসময় তাদের সাথে কিতাবের বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে বলা হয়েছে। অনেকে পড়তে জানতো না বলে, নবিরা লোকদের সামনে কিতাব থেকে পাঠ করে শোনাতেন এবং তাদের জীবনে কিতাবের গুরুত্ব বুঝিয়ে দিতেন। তার মানে এই নয় যে, একজন পড়বে বা শিক্ষা দেবে আর সবাই পড়বে না। শোনার অধিকার যেমন আছে, আল্লাহর কালাম পড়ার অধিকারও সকলের রয়েছে।

কোন কোন সময় বলা হয়ে থাকে যে, কোন একটি বিশেষ ধর্মগ্রন্থ অন্যধর্মের লোক ধরতে পারে না, কারণ সে বা তারা নাপাক। আর ধরতে পারে না মানেই হলো পড়তেও পারে না। আল্লাহর ইচ্ছাও কি তাই? একজন লোক যদি কালাম পড়তেই না পারলো তবে সে পাক-নাপাক সম্বন্ধে কীভাবে জানবে? তাই কিতাবুল মোকাদ্দস ঈসায়ী-অঈসায়ী, জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষ সবাই পড়তে পারে।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ইঞ্জিল শরিফ ও কিতাবুল মোকাদ্দসের মধ্যে পার্থক্য কী?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

ইঞ্জিল শরিফ হলো হজরত ঈসার সাহাবিদের কাছে নাজেল হওয়া ২৭ সুরার আসমানি কিতাব আর কিতাবুল মোকাদ্দস হলো ইঞ্জিল শরিফসহ আগের কিতাবের সমষ্টি। অর্থাৎ তৌরাত, জবুর ও অন্যান্য নবিদের সহিফাসহ মোট ৬৬ সুরার আসমানি কিতাব।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

নাজেল হওয়ার দিক থেকে ইঞ্জিল শরিফ ও কিতাবুল মোকাদ্দসের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। সচচেয়ে বড় পার্থক্য যা, তা হলো ইঞ্জিল শরিফ কিতাবুল মোকাদ্দসেরই একটি বড় অংশ। তারপর যে বড় পার্থক্য তা হলো ইঞ্জিল শরিফ ২৭টি সুরার সমন্বয়ে একটি আসমানি কিতাব আর কিতাবুল মোকাদ্দস হলো ইঞ্জিল শরিফসহ তিনটি প্রধান আসমানি কিতাব এবং সহিফাগুলোর সমন্বয়ে একটি আসমানি কিতাব। এছাড়া যেভাবে ইঞ্জিল শরিফ বিভিন্ন লোকের মারফত নাজেল হয়েছে ঠিক সেভাবে কিতাবুল মোকাদ্দসের লেখকরাও ছিলেন বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ। সাধারণ রাখাল বালক (হজরত মুসা ও হজরত দাউদ) থেকে শুরু করে, দেশের রাজা মহারাজারাও (হজরত মুসা, বাদশাহ দাউদ ও বাদশাহ সোলায়মান) কিতাবুল মোকাদ্দসের লেখকের মর্যাদা লাভ করেছেন। অর্থাৎ তাঁদের মধ্যদিয়ে আল্লাহ তাঁর কিতাব নাজেল করেছেন।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

নাজেল হওয়ার দিক থেকে কোরান ও ইঞ্জিলের পার্থক্য কী?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

নাজেল হওয়ার দিক থেকে ইসলামি শিক্ষা অনুযায়ী বলা হয়, কোরান সরাসরি আল্লাহর কথা, এখানে মানুষের কোন হাত নেই। আর ইঞ্জিল শরিফের দিক থেকে বলা যায়, ইঞ্জিল শরিফ আল্লাহর সরাসরি কথা নয়, আল্লাহ কিছু মানুষকে পাকরুহের দ্বারা অনুপ্রণিত করেছেন। আর সেই অনুপ্রেরণা পেয়ে, লেখকগণ আল্লাহর কথা নিজেদের ভাষায় লিখেছেন।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

কোরানকে বলা হয় আল্লাহর সরাসরি কালাম। এর ভাষা, প্রত্যেকটি দাড়ি, কমা, জের, জবর সবই আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে। কোরান হজরত মুহম্মদের উপর তাঁর ৪০ বছর বয়সে নাজেল হয় প্রথমে হেরা পর্বতের গুহায় এবং পরবর্তিতে বিভিন্ন স্থানে। জিবরাইল ফেরেশতা এসে হজরত মুহম্মদকে বলতেন আর তিনি তা মনে রেখে অন্যদের বলতেন। আর তারা তা শুনেশুনে মুখস্থ রাখতেন এবং পরবর্তিতে তা লিখতেন। ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকরের সময়, কোরানের বিভিন্ন লিপি সংরক্ষণের তেমন জোড়ালো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। অতপর দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমরও এ বিষয়ে তেমন কাজ করেননি। কিন্তু তৃতীয় খলিফা হজরত ওসমানের সময়েই কোরানের লেখা সংগ্রহ ও সন্নিবদ্ধ করা হয়। কোরান নাজেল হয় শুধু একজনের কাছে, আর তিনি হলেন হজরত মুহম্মদ। তিনি তাঁর বিশেষ সাহাবিগণকে বলেছেন আর তারা মনে রেখেছেন ও সময় ও সুযোগ পেয়ে তা লিপিবদ্ধ করেছেন। ধারণা ও বিশ্বাস করা হয় যে, কোরানের কথা যেভাবে আছে, আল্লাহ ঠিক সেভাবে বলেছেন।

ইঞ্জিল শরিফের বেলায় ব্যাপারটি ভিন্ন রকমের। বিশ্বাস করা হয় যে, আল্লাহ বেশকিছু লোককে বাছাই করেছেন ই্িঞ্জল শরিফ লেখার জন্য। এই লেখকরা পাকরুহের অনুপ্রেরণায় নিজেদের দক্ষতা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি, আচার-ব্যবহার, রীতি-নীতি ইত্যাদি ব্যবহার করে, নিজেদের ভাষায় তা লিখেছেন। অর্থাৎ আল্লাহ এই লেখকদের পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করেছেন। ইঞ্জিল শরিফের লেখকদের মধ্যে আছেন মাছ ধরার জেলে ও ক্রীতদাস থেকে শুরু করে সুশিক্ষিত পন্ডিত ব্যক্তিবর্গ। এই লেখকদের মধ্যে রয়েছেন হজরত ঈসার ঘনিষ্ঠ সাহবিদের মধ্যে কয়েকজন এবং তাঁর আপন ভাই, যিনি প্রথম জামাত বা সমাজের প্রথম ইমাম ছিলেন। এই লেখকেরা খুব কাছে থেকে তাঁকে দেখেছেন ও তাঁর সাথে থেকেছেন এবং আল্লাহর পাকরুহের পরিচালনায় লিখেছেন।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ইঞ্জিল শরিফ কীভাবে নাজেল হলো?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

আল্লাহর পাকরুহের দ্বারা পরিচালিত হয়ে, হজরত ঈসার সাহাবিরা ইঞ্জিল শরিফের বাণীগুলো লিখেছেন।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

আরবি উঞ্জালা শব্দ থেকে বাংলায় নাজেল শব্দের উৎপত্তি। উঞ্জালা মানে অনুপ্রেরণা সুতরাং নাজেল মানে অনুপ্রাণিত। ঈসায়ীদের বিশ্বাস হলো, হজরত ঈসার উম্মতেরা যা স্বচক্ষে দেখেছেন, যার মুখের কথা শুনেছেন তা পাকরুহের পরিচালনায় সাক্ষ্য দিয়েছেন ও লিখেছেন। আর তা-ই হলো ইঞ্জিল শরিফ (১ ইউহোন্না ১:১-৩)। ইঞ্জিল শরিফের মধ্যে রয়েছে ২৭টি সুরা। তার মধ্যে ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ সুরাকে বলা হয় ইঞ্জিল বা সুখবর। পরের ২৩টি সুরার মধ্যে শেষ সুরা হলো প্রকাশিত কালাম বা ভবিষ্যৎবাণী। আর বাকী ২২টি সুরা হলো সমাজ বা জামাতের জন্য শিক্ষামূলক পত্র। এই ২৭টি সুরার লেখক ছিলেন হজরত ঈসার সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্ট জন, যারা খুব নিকট থেকে তাঁকে দেখেছেন, তাঁর সাথে থেকেছেন এবং তাঁর শিক্ষা সরাসরি শুনেছেন।

এই লেখকদের মধ্যে একজনই শুধু ব্যতিক্রম ছিলেন। তিনি হলেন হজরত পৌল। তিনি হজরত ঈসার সাথে ছিলেন না ও তাঁর শিক্ষা তিনি সরাসরি শোনেননি। বরং তিনি হজরত ঈসার উম্মতদের অত্যাচার করেছিলেন, তিনি স্তিফান নামে একজন উম্মতকে হত্যা করার কাজে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সেইসময় হজরত ঈসা তাঁকে সরাসরি দর্শন দিয়ে তাঁর সাথে কথা বলেছেন। এই দর্শনের মধ্যদিয়েই তাঁর জীবন পরিবর্তিত হয়। এরপর থেকে তিনি হজরত ঈসার বিষয়ে শিক্ষা দিতে থাকেন, একসময় মসীহের জন্য তাঁর জীবনও উৎসর্গ করেন। পাকরুহের অনুপ্রেরণায় তিনি ইঞ্জিল শরিফের বেশ কয়েকটি সুরা লিখেন।

যদিও বিভিন্ন লেখক ইঞ্জিল শরিফের কথাগুলো লিখেছেন, তথাপি আমরা বিশ্বাস করি যে, তা আল্লাহর কালাম। কেননা আল্লাহর পাকরুহের পরিচালনায় অনুপ্রাণিত হয়েই তাঁরা সেই কথাগুলো লিখেছেন। আগের কিতাব এবং ইঞ্জিল শরিফ মিলে যে একটি কিতাব, তাকে বলা হয় কিতাবুল মোকাদ্দস বা পাককিতাব। এই পাককিতাবের লেখাগুলো সম্পর্কে উল্লেখ করতে গিয়ে, ইঞ্জিল শরিফ বলে, “পাককিতাবের প্রত্যেকটি কথা আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে এবং তা শিক্ষা, চেতনা দান, সংশোধন এবং সৎ জীবনে গড়ে উঠবার জন্য দরকারি” (২ তীমথিয় ৩:১৬)।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০