Category Archives: রীতিনীতি

ঈসায়ীরা কি কোরানকে অশ্রদ্ধা করে?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

না, ঈসায়ীরা এসব হীনম্মন্য কাজ করে না।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

কেউ কেউ প্রচার করে যে, কোন ব্যক্তিকে ঈসায়ী হতে হলে, তাকে কোরান শরিফকে পায়ে মাড়াতে হয় অর্থাৎ অশ্রদ্ধা করতে হয়। কিন্তু আসলে এ কথা এবং ধারণা কোনভাবেই সঠিক নয়। কারণ কোরান শরিফ একটি বিশাল জনগোষ্ঠীর ধর্মগ্রন্থ। এই ধর্মগ্রন্থকে অশ্রদ্ধা করা কারো উচিত নয় বলে আমরা মনে করি। এছাড়া কোরান শরিফের মধ্যে রয়েছে তৌরাত, জবুর ও ইঞ্জিল শরিফের কথা। যদি কেউ কোরান শরিফের অমর্যাদাকর কিছু করে, তবে সে ব্যক্তিগতভাবে দায়ী এবং অপরাধী। একজন সত্যিকারের ঈসায়ী কখনও এমন কাজ করে না এবং অন্যকে করতে উৎসাহিত করে না। শুধু কোরান কেন, একজন সুস্থ বিবেকবান মানুষ সাধারণ কোন বইকেও পায়ে মাড়াতে পারে না।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

গলায় ক্রুশ ঝোলানো কী ধর্মীয় কোন নিয়ম?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

না, এটি কোন ধর্মীয় নিয়ম নয়।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

কোন ধাতব পদার্থ দিয়ে বানানো ক্রুশ একটি অলংকার মাত্র। মানুষ শখের বশে তা পরে থাকে। আবার কেউ কেউ হজরত ঈসার প্রতি সাধারণ ভক্তি দেখানোর জন্য ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু ব্যবহার যেভাবেই হোক না কেন এর কোন কিতাবি ভিত্তি নেই। হজরত ঈসা ইঞ্জিল শরিফে যে ক্রুশ বহনের কথা বলেছেন, তার সাথে গলায় ক্রুশ ঝোলানোর কোন সম্পৃক্ততা নেই। ক্রুশ দুঃখকষ্টের প্রতীক; হজরত ঈসা তাঁর অনুসারীদের বলেছিলেন যে, যে কেউ তাঁর অনুসরণ করতে চায়, তার দুঃখকষ্টকে সাথি করেই পথ চলতে হয়। তিনি যেমন মানুষকে ভালোবেসে নিজের জীবন দিয়েছিলেন, তেমনি মানুষকে ভালোবাসতে হলে দুঃখকষ্ট স্বীকার করতে হবে, তিনি তা-ই বুঝিয়েছিলেন।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসায়ী হলে কি নাম পরিবর্তন করতে হয়?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

না, ঈসায়ী হলে নাম পরিবর্তন করতে হয় না।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

মানুষের নাম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আল্লাহ আদমের নাম রেখেছিলেন। আদম মানে মাটি, আদমকে মাটি দিয়ে তৈরি করেছিলেন বলে তার নাম আদম রাখা হয়েছিল। আল্লাহ সব জিনিস সৃষ্টি করার পর আদমের কাছে নিয়ে এসেছিলেন যেন তিনি তাদের প্রত্যেকের নাম রাখেন। আর আদম বুদ্ধিমত্তার সাথে সকল জিনিসের নাম রেখেছিলেন।

হজরত ঈসা শিমোনের নাম পরিবর্তন করে কৈফা বা পিতর রেখেছিলেন, যার মানে হলো পাথর। তাই বলে তিনি সব সাহাবিদের নাম পরিবর্তন করেননি। আগেকার ঈসায়ীদের মধ্যে কিতাবের চরিত্রের সাথে মিল রেখে নাম রাখার প্রবণতা দেখা যেতো। এখনও কেউ কেউ কিতাবের চরিত্রের সাথে মিল রেখে নাম রাখতে পছন্দ করে। নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম রাখা বা না রাখা একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। হজরত ঈসা কোথাও একথা বলেননি যে, তাঁর উপর ঈমান আনার পর নাম পরিবর্তন করতে হবে। তিনি গুরুত্ব দিয়ে বলতেন যে মন পরিবর্তন করতে হবে, নাম নয়। অতএব, কোন ঈসায়ীর জন্য নাম পরিবর্তন করা জরুরি কোন বিষয় নয়।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসায়ীদের খাবারদাবারের নিয়ম কী?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

আপাত দৃষ্টিতে ঈসায়ীদের খাবারদাবারের কোন নিয়ম নেই।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

পৃথিবীর সব মানুষ সবকিছু খায় না। আবার এমন কোন জিনিষ নেই যা কোন না কোন মানুষ খায় না। কোন কোন মানুষের কাছে যা অখাদ্য অন্যকোন মানুষের কাছে সুখাদ্য। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, স্থান, কাল ও পাত্রভেদে মানুষের খাবার এবং রুচি বিচিত্র রকমের। খাদ্য-অখাদ্য বিষয়টি খাদ্যের পাক-নাপাক ধারণা থেকে এসেছে। কোন কোন লোক মনে করে, কোন কোন খাবার জায়েজ আবার অপর কোন কোন খাবার না-জায়েজ। হজরত ঈসা বলেন, মানুষের বাহির থেকে যা ভেতরে যায়, তা মানুষকে নাপাক করে না বরং ভেতর থেকে যা বেরিয়ে আসে, যেমন কুচিন্তা, রাগ, ঘৃণা, হিংসা, ব্যভিচার, লোভ ইত্যাদিই মানুষকে নাপাক করে। খাবার বাইরে থেকে ভেতরে যায় আবার বাইরে বেরিয়ে যায়, তা মানুষের শরীরকে স্পর্শ করে গেলেও অন্তরকে স্পর্শ করতে পারে না। আর যা মানুষের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে, তা মানুষের অন্তরকে নাপাক করে এবং তা মানুষের জন্য ক্ষতিকর।

একথাও ঠিক যে, একসময় আল্লাহ কোন কোন পশু-পাখি মানুষের জন্য হারাম ঘোষণা করেছিলেন। যেমন থাবা দিয়ে ধরে এমন হিংস্র জীবজন্তু, কীটপতঙ্গ, জাবর না কাটা জীবজন্তু, এক ক্ষুরওয়ালা জীবজন্তু, মাংসাসি জীবজন্তু ইত্যাদি মানুষের জন্য হারাম করে দিয়েছিলেন। কিন্তু হজরত ঈসার সময়কাল থেকে সেই সব নিষেধাজ্ঞা আর বলবৎ নেই। তার কারণ হলো, একসময় অর্থাৎ হজরত আদমের গুনাহ করার আগে হারাম বলতে কোন কিছুই ছিল না। মানুষের জন্যই আল্লাহ সবকিছু তৈরি করেছিলেন আর মানুষ তার সবই ইচ্ছানুযায়ী ভোগ করতে পারতো। কিন্তু দুনিয়াতে গুনাহর ফলে পশুর মধ্যে হিংস্রতা আসল, আসল নানা রকম ভেদাভেদ। হজরত ঈসার দুনিয়াতে আগমন এবং কাফফারা দানের মধ্যদিয়ে সেই বিধিনিষেধ উঠে গেছে। আসলে মানুষের গুনাহ খাবারদাবারের মধ্যদিয়ে হয় না, হয় তার কর্মের মধ্যদিয়ে। এই কারণে শুধু খাবার নয়, ঘুষের অর্থ দিয়ে কেনা যে কোন ভালো খাবারই হারাম হয়ে যেতে পারে। আবার মানুষের জীবন রক্ষার তাগিদে ঘোষিত হারাম জিনিষও হালাল হয়ে যেতে পারে। যেমন অনেক ঔষধের মধ্যে তথাকথিত হারাম জিনিষ রয়েছে অথচ মানুষ প্রয়োজন অনুযায়ী বাঁচার জন্য তা খায়।

কোন খাবারের জন্য যদি অন্যকোন লোক বিঘœ পায়, তবে তার পক্ষে সেই খাবার খাওয়া নিষেধ রয়েছে। আবার কোথাও কেউ কোন খাবার দিলে, তাকে মনোকষ্ট না দেবার জন্য সেই খাবার কী রকমের তা জিজ্ঞাসা না করেই খাবার নির্দেশনাও কিতাবে পাওয়া যায়। অতএব, ঈসায়ীদের জন্য খাবারের কোন বাধ্যবাধকতা নেই।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসায়ীদের প্রধান প্রধান সামাজিক উৎসবগুলো কী কী?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

ঈসায়ীদের প্রধান সামাজিক উৎসব তিনটি। যথা বড়দিন, পুণ্য শুক্রবার এবং পুনরুত্থান দিবস।

ব্যাখ্যমূলক উত্তর

বড়দিন: হজরত ঈসার জন্মদিনকেই বড়দিন বলা হয়। তাত্ত্বিক দিক থেকে বিবেচনা করলে, এই দিনকে ছোট দিন বলতে হয়, কারণ হজরত ঈসার জন্মদিন পালন করা হয় ২৫ ডিসেম্বর। ডিসেম্বর মাস ঋতুচক্রের হিসাবে শীতকাল। শীতকালে সাধারণত রাত বড় ও দিন ছোট হয়। এইদিক থেকে বলতে গেলে, হজরত ঈসার জন্মদিনকে ছোট দিন বলা যায়। আসলে গুণ ও মানের দিক বিবেচনা করেই এই দিনকে বড় দিন বলা হয়। একটি নির্দিষ্ট দিনে হজরত ঈসার জন্মদিন হলেও এর পরিকল্পনা ছিল সৃষ্টির আগে থেকে। আল্লাহ মানুষের উদ্ধারের পরিকল্পনা করেছিলেন সৃষ্টির আগে। উদ্ধারের কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন, হজরত ঈসা, যার নামের মানেই হলো উদ্ধারকর্তা। তাঁর যে জন্ম হবে তা বিভিন্ন নবিদের দিয়ে আল্লাহ জানিয়েছিলেন; জানিয়েছিলেন স্থান, কাল, পাত্র নির্বিশেষে। ফলে তিনি যেমন মানব ইতিহাসের কেন্দ্রবিন্দু তেমনি তাঁর জন্মের সময়কালও হয়েছে সময় গণনার কেন্দ্রবিন্দু। যার কারণে আমরা হজরত ঈসার জন্মদিনকে কেন্দ্র করেই খ্রিস্টপূর্ব এবং খ্রিস্টাব্দ বলে থাকি।

পুণ্য শুক্রবার: পুণ্য শুক্রবার হলো হজরত ঈসার মৃত্যু বা ওফাত দিবস। এই শুক্রবারকে একদিক থেকে ইতিহাসের সবচেয়ে কালোদিন বলা যায়। কারণ এই দিনে পাপী মানুষেরা একজন নিষ্পাপ মানুষকে ক্রুশে দিয়ে হত্যা করেছিলেন। যার বিচার করতে গিয়ে, বিচারক কোন দোষ খুঁজে না পেলেও জনরোষ থেকে বাঁচার জন্য তাঁকে হত্যার আদেশ দিয়েছিলেন। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, যাদের উদ্ধার করতে তিনি দুনিয়াতে এসেছিলেন সেই গুনাহগার মানুষেরাই তাঁকে হত্যা করেছিল। কিন্তু এই দিনকে কালো শুক্রবার না বলে পুণ্যশুক্রবার বলার কারণ হলো, এই মৃত্যুর দ্বারা মানুষের নাজাত বা উদ্ধার এসেছে। হজরত ঈসা মানুষের চক্রান্তের স্বীকার হয়ে, মৃত্যু বরণ করলেও আল্লাহর ইচ্ছাতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে এবং একদিক থেকে আল্লাহর পরিকল্পনাই বাস্তবায়িত হয়েছে। হজরত ঈসার জন্মের বিষয়ে যেমন আগের কিতাবে ভবিষ্যতবাণী করা হয়েছিল, তেমনি তাঁর মৃত্যু সম্পর্কেও ভবিষ্যতবাণী করা হয়েছিল। আল্লাহ ঠিক করেছিলেন যেন মানুষের উদ্ধারের জন্য কাফফারাস্বরূপ হজরত ঈসার মৃত্যু হয়। উক্ত দিনে তা-ই ঘটেছিল। হজরত ঈসা আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী মানুষের গুনাহর বোঝা তুলে নিতে, স্বেচ্ছায় মৃত্যু বরণ করেছিলেন। সুতরাং এই দিন পুণ্যদিন, এই বার পুণ্য শুক্রবার।

পুনরুত্থান দিবস: পুনরুত্থান দিবস হলো হজরত ঈসার মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে ওঠার দিন। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে আশ্চর্য বিষয় ছিল হজরত ঈসার পুনরুত্থান। মানুষ মরে যায়, মাটির সাথে বিলীন হয়ে যায়। রাজা, মহারাজা, সম্রাট, নবি-পয়গাম্বর সবারই মাটির দেহ মাটিতে মিশে গিয়ে, একাকার হয়ে গিয়েছে। ব্যতিক্রম কেবল ঈসা মসীহ। তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন কিন্তু মৃত্যুকে জয় করে, আবার কবর থেকে উঠেছেন। পাককিতাব বলে, এই পুনরুত্থান হলো মানবজাতির পুনরুত্থানের প্রথম ফল। তিনি পুনরুত্থিত না হলে, কোন মানুষেরই পুনরুত্থান সম্ভব হতো না। তিনি পুনরুত্থিত হয়েছেন বলেই বর্তমানে আল্লাহর কাছে আছেন এবং আবার ফিরে আসবেন। ঈসায়ীদের বিশ্বাসের মূলশক্তি হলো পুনরুত্থান এবং ঈমানের ভিত্তি হলো হজরত ঈসা মসীহের মৃত্যু, কবর ও পুনরুত্থান।

উপরিউক্ত তিনটি উৎসব ছাড়াও ঈসায়ীদের মধ্যে আরো কিছু অনুষ্ঠান পালন করা হয়। যেমন- ধন্যবাদ সভা, পারিবারিক মুনাজাত সভা, সাপ্তাহিক এবাদত সভা, আলোকিত স্কুল, শিশু উৎসর্গ, মৃত্যু পরবর্তী অনুষ্ঠান ইত্যাদি।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

কে তরিকাবন্দি দিতে পারেন?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

ঈসা মসীহের উপর ঈমান এনে নাজাত লাভ করেছেন এবং নিজে তরিকাবন্দি নিয়েছেন, এমন যে কোন ব্যক্তি তরিকাবন্দি দিতে পারেন।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

হজরত ঈসা বলেছিলেন, তোমরা সারা দুনিয়াতে যাও, শিক্ষা দাও এবং তরিকাবন্দি দাও। হজরত ঈসা তাঁর উম্মতদের সরাসরি তরিকাবন্দি দিতে বলেছেন। কিন্তু যেহেতু এটি ঈসায়ীদের একটি সামাজিক-ধর্মীয় অনুষ্ঠান সেহেতু সমাজের পরিচালকই সাধারণত তরিকাবন্দি দেন। এছাড়া পরিচারক (খাদেম) বা যাকে কোন সমাজ কর্তৃক দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তেমন ব্যক্তি তরিকাবন্দি দিতে পারেন। তবে স্থান-কাল-পাত্রভেদে এর ব্যতিক্রমও হতে পারে। এমন অনেক জায়গা রয়েছে, যেখানে কোন স্বীকৃত সমাজ নেই কিংবা সমাজের কোন স্বীকৃতি নেই। সেই ক্ষেত্রে ঈমানদারিত্বের বিষয়টি পরিষ্কার থাকলেই যেকোন ঈসায়ী ঈমানদারই তরিকাবন্দি দিতে পারেন।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

কে তরিকাবন্দি নিতে পারেন?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

যে ব্যক্তি উপরিউক্ত পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ দিতে পারে, সে ব্যক্তিই তরিকাবন্দি নেবার উপযুক্ত?

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

উদ্ধারপ্রাপ্ত যে কোন ব্যক্তিই তরিকাবন্দি নিতে পারে। অর্থাৎ হজরত ঈসার উপর ঈমান এনে নাজাত পেয়েছে এমন ব্যক্তিই তরিকাবন্দি নেবার জন্য উপযুক্ত। কোন অঈমানদারকে তরিকাবন্দি দেবার মধ্যে কোন বিশেষত্ব নেই। একজন অঈমানদারকে তরিকাবন্দি দেওয়া আর কোন কৃত্রিম দেহে কাপড় পড়ানো সমান কথা; যেমন কাপড়ের দোকানগুলোতে দেখা যায়। অনেকে ভুল করে এই ভেবে তরিকাবন্দি নেয় যে, এর মাধ্যমেই নাজাত পাওয়া যায়। এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ যে নাজাত পায়নি তার নাজাত পাবার বিষয়টি দেখাবার বা স্বীকার করার কোন প্রশ্নই আসে না। যে মুখে স্বীকার করে সে নাজাত পেয়েছে কিন্তু তার জীবনের মধ্যে যদি কোন লক্ষণ দেখা না যায়, তবে তরিকাবন্দি নেবার বিষয়টি প্রশ্নসাপেক্ষ হয়। তরিকাবন্দি নিয়ে যদি সেই ব্যক্তির সামাজিক কোন সমস্যা দেখা দেয়, তবে তরিকাবন্দি পরেও নেওয়া যায়। কোন নির্দিষ্ট সময়ে যে তরিকাবন্দি নিতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

তরিকাবন্দি হবার বিশেষ কোন নিয়ম আছে কি?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

হ্যাঁ সাধারণ নিয়ম আছে, তবে ব্যতিক্রমও আছে।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

সাধারণত পানিতে ডুবিয়ে তরিকাবন্দি দেওয়া হয়। যে ব্যক্তিকে তরিকাবন্দি দেওয়া হয়, তাকে আগে ঈসায়ী ঈমান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হয়। তরিকাবন্দির সময় সাধারণত যে প্রশ্নগুলো করা হয়, তা হলো: ১) আপনি কি পবিত্র আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন, এবং বিশ্বাস করেন যে তিনি নিষ্পাপ এবং ধার্মিক? ২) আপনি কি বুঝতে পেরেছেন যে, আপনি একজন গুনাহগার এবং আল্লাহর সাথে আপনার সম্পর্ক নেই? ৩) আপনি কি জানেন যে, আপনি কোনভাবেই নিজের ধার্মিকতায় গুনাহ থেকে উদ্ধার পেতে পারেন না? ৪) আপনি কি বিশ্বাস করেন যে, আল্লাহ আপনাকে উদ্ধার করার জন্য হজরত ঈসাকে পাঠিয়েছেন, যিনি তাঁর নিষ্পাপ জীবন দিয়ে আপনার গুনাহর কাফ্ফারা দিয়েছেন? ৫) আপনি কি তাঁকে মুখে প্রভু এবং মসীহ বলে স্বীকার করেন এবং হৃদয়ে বিশ্বাস করেন যে, আল্লাহ তাঁকে মৃত্যু থেকে জীবিত করে তুলেছেন? উপরিউক্ত পাঁচটি প্রশ্নের উত্তরে যে ব্যক্তি সত্য সত্যই হ্যাঁ বলতে পারে, তাকেই তরিকাবন্দি দেওয়া হয়। সাধারণত যিনি তরিকাবন্দি দেন তিনি কিতাব থেকে তরিকাবন্দিবিষয়ক অংশগুলো পাঠ করেন, তরিকাবন্দির উদ্দেশ্যমূলক শিক্ষাগুলো ব্যাখ্যা করেন এবং তরিকাবন্দি নিতে আগ্রহী ব্যক্তিকে উপরিউক্ত প্রশ্নগুলো করেন, হ্যাঁ’সূচক উত্তর পেলে, তার মাথায় হাত রেখে পিতা পুত্র ও পাকরুহের নামে পানিতে ডুবিয়ে তরিকাবন্দি দেন। পানি থেকে ওঠার পর আবারো নতুন জীবন যাপন অর্থাৎ আল্লাহর পথে জীবন কাটানোর পরামর্শ দেন ও মুনাজাত করেন। উল্লেখ্য যে, কেউ তরিকাবন্দি নিতে ইচ্ছুক হলে, তাকে এ বিষয়ে কিতাবত থেকে শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

তরিকাবন্দি তো বাহ্যিক অনুষ্ঠান, এর আবার গুরুত্ব কী?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

এই অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে আমরা আমাদের ঈমানকে প্রকাশ করি।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

ঈসায়ী জীবনে তরিকাবন্দির গুরুত্ব অপরিসীম। আমরা যে হজরত ঈসা মসীহের উপর ঈমান এনেছি, তা এই তরিকাবন্দি অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে দেখানো যায় বা প্রকাশ করা যায়। ইঞ্জিল শরিফ বলে, “এই কথা কি জানো না যে, আমরা যারা মসীহ ঈসার মধ্যে তরিকান্দি নিয়েছি, আমরা তাঁর মৃত্যুর মধ্যে অংশ গ্রহণ করেই তা নিয়েছি? আর সেই জন্য সেই তরিকারন্দির দ্বারা মসীহের সঙ্গে মরে আমাদের দাফন করা হয়েছে, যেন পিতা তাঁর মহাকুদরতি দ্বারা যেমন মসীহকে মৃত্যু থেকে জীবিত করেছিলেন, তেমনি আমরাও যেন নতুন জীবনের পথে চলতে পারি” (ইঞ্জিল শরিফ, রোমীয় ৫:৩,৪)। হজরত ঈসা মৃত্যু বরণ করেছিলেন, কবরে ছিলেন এবং তৃতীয় দিন কবর থেকে পুনরুত্থিত হয়েছিলেন। তরিকাবন্দির মাধ্যমে হজরত ঈসার সাথে নিজের একাত্মতার কথা আমরা ঘোষণা করি। হজরত পৌল বলেন, “আমাকে মসীহের সঙ্গে ক্রুশের উপরে হত্যা করা হয়েছে। তাই আমি আর জীবিত নই, মসীহই আমার মধ্যে জীবিত আছেন। এখন এই শরীরে আমি যে জীবন কাটাচ্ছি তা ইব্নুল্লাহর উপর ঈমানের মধ্যদিয়েই কাটাচ্ছি। তিনি আমাকের মহব্বত করে আমার জন্য নিজেকে দান করেছিলেন” (গালাতীয় ২:২০) এই চরম সত্যটি কেবল তরিকাবন্দির মধ্য দিয়ে প্রকাশ করা যায়।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসায়ীদের প্রধান প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং উৎসবগুলো কী কী?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

ঈসায়ীদের কিতাব স্বীকৃত ধর্মীয় অনুষ্ঠান দুটি, একটি তরিকাবন্দি এবং দ্বিতীয়টি প্রভুর মেজবানি।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

আরও কয়েকটি অনুষ্ঠান আছে যা ধর্মীয় অনুষ্ঠান না বলে সামাজিক উৎসব বলা যায়। সামাজিক উৎসব তিনটি। প্রথমটি বড়দিন বা হজরত ঈসা মসীহের জন্মদিন; দ্বিতীয়টি পুণ্য শুক্রবার বা হজরত ঈসার মৃত্যু দিন এবং তৃতীয়টি পুনরুত্থান দিন অর্থাৎ হজরত ঈসার কবর থেকে জীবিত হয়ে ওঠার দিন। এছাড়াও ঈসায়ীদের মধ্যে আরো কিছু অনুষ্ঠান পালন করা হয়, যেমন- ধন্যবাদ সভা, পারিবারিক মুনাজাত সভা, সাপ্তাহিক এবাদত সভা, আলোকিত স্কুল, শিশু উৎসর্গ, মৃত্যু পরবর্তী অনুষ্ঠান বা স্মৃতিসভা ইত্যাদি।

কিতাব স্বীকৃত ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ১ম ধর্মীয় অনুষ্ঠান: তরিকাবন্দি। হজরত ঈসা কর্তৃক নির্ধারিত দুটি অনুষ্ঠানের প্রথমটি তরিকাবন্দি অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানের সাথে ঈসায়ীদের ঈমানের একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এই অনুষ্ঠান পালনের জন্য হজরত ঈসা সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “…তোমরা গিয়ে সমস্ত জাতির লোকদের আমার উম্মত কর। পিতা, পুত্র ও পাকরুহের নামে তাদের তরিকাবন্দি দাও” (ইঞ্জিল শরিফ, ১ম সুরা মথি ২৮:১৯)। আমরা হজরত ঈসা মসীহের সাহাবিগণের জীবন ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখতে পাই, তাঁরা এই আদেশ পালন করেছিলেন। অর্থাৎ তারা তরিকাবন্দি দিয়েছিলেন এবং তরিকাবন্দি দিতে শিক্ষাও দিয়েছিলেন। যার ফলে, সাধারণ মানুষ জানতো যে, ঈসা মসীহকে বিশ্বাস করলে তরিকাবন্দি নিতে হয়। একবার ফিলিপ নামের একজন ঈমানদার ইথিওপিয়ার এক রাজকর্মচারীর কাছে ঈসা মসীহের সুখবর প্রচার করেছিলেন। এই রাজকর্মচারী পরজাতি ছিলেন। ফিলিপের কথা বলা শেষ হলে, সেই রাজকর্মচারী বলেছিলেন, “এই দেখুন, এখানে পানি আছে; আমার তরিকাবন্দি নেবার বাধা কি আছে” (ইঞ্জিল শরিফ, প্রেরিত ৮:৩৭)? এ থেকে বুঝা যায় ঈসায়ী ঈমানদার হবার পর তরিকাবন্দি নেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০