Category Archives: অন্য ধর্ম

পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি লোক কোন্ ধর্মে বিশ্বাসী?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি লোক ঈসা নবির উম্মত তথা ঈসাতে বিশ্বাসী।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

সংখ্যার দিক বিচার করে, কোন ধর্মকে কিংবা ধর্মের ভালমন্দকে বিচার করা যায় না। কেননা অনেক সময় দেখা যায় বেশিরভাগ লোকই কোন কোন খারাপ জিনিসকেই ভাল বলে স্বীকৃতি দেয়, তাই বলে সেই খারাপটি ভাল হয়ে যায় না। যেমন কিতাবে লেখা আছে- সবাই পাপ করেছে, তাই বলে কি পাপ ভাল জিনিস হবে। তবু অনেকে পৃথিবীর জনসংখ্যার ভিত্তিেেত কোন্ জাতির কত লোক আছে তা জানতে চায়। বিশেষত ঈসায়ীদের সংখ্যা কত তা জানতে চায়। পৃথিবীর জনসংখ্যার বিচারে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি লোক ঈসায়ী, দ্বিতীয় মুসলমান তৃতীয় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী, চতুর্থ নাস্তিক এবং পঞ্চম পৌত্তলিক। একথা বলা বাহুল্য যে, অনেকে ঈসায়ী পরিবারে জন্মের কারণে নিজেদের ঈসায়ী হিসাবে পরিচয় দেয়। এছাড়া অনেকে বংশগত এবং পরিবারগতভাবে ঈসায়ী কিন্তু তারা ঈসা মসীহের আদর্শ অনুসারে চলে না। আবার ঈসায়ীদের মধ্যে রয়েছে নানা মত ও মতবাদ। কোন কোন ঈসায়ী আছে তারা কিতাবের আয়াতকে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে ব্যাখ্যা করে এবং সেভাবে জীবন যাপন করতে চেষ্টা করে। অবশ্য এই অবস্থা প্রত্যেক ধর্মের কিংবা যেকোন মতবাদী দলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এতদসত্তেও পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি লোক ঈসা মসীহকে এবং তাঁর নির্দেশিত পথকেই সঠিক বলে গ্রাহ্য করে।

দেশ ও মহাদেশ হিসেবে বিবেচনা করলেও ইউরোপ মহাদেশের প্রায় সকল দেশ, উত্তর আমেরিকা মহাদেশের প্রায় সকল দেশ, দক্ষিণ আমেরিকার প্রায় সকল দেশ, অস্ট্রেলিয়ার প্রায় সকল দেশ খ্রিস্ট ধর্মের চর্চা করে। এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যেই মুসলমানদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য দেখা যায়। তবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ছাড়া এসব অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে মুসলামানদের পাশাপাশি হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান ও ঈসায়ীদের সংখ্যাও দেখা যায়।

এ কথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে, অন্যান্য ধর্মের লোকদের মতো ঈসায়ী বিশ্বাস তথা খ্রিস্টধর্মেও কাজের ঈসায়ীর চেয়ে নামের ঈসায়ীর সংখ্যাই বেশি। তা হলেও তুলনামূলকভাবে ঈসায়ীর সংখ্যাই সারা পৃথিবীতে বেশি। ইঞ্জিল শরিফের প্রতিজ্ঞা অনুসারে, সারা পৃথিবী হজরত ঈসার নাম প্রচারিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি দুনিয়াতে দ্বিতীয়বার ফিরে আসবেন না।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ক্যাথলিক ও প্রোটেস্টান মতবাদ কী?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

কিতাবের সত্য ও আধিপত্য মানা বা না মানা বিষয়ে দুটি আলাদা মতবাদ।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

ক্যাথলিক মানে সর্বজনীন। এক সময় ছিল হজরত ঈসার উম্মত মানে রোমান ক্যাথলিক তথা খ্রিস্টান। হজরত ঈসার বেহেস্তে চলে যাবার পর, তাঁর উম্মতেরা সারা পৃথিবীতেই ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে প্রথম দলভিত্তিক এবাদত যেহেতু রোম দেশের জেরুজালেমেই শুরু হয়, সেহেতু কারণে অকারণে রোমই যোগাযোগের কেন্দ্রে পরিণত হয়। রোমের জেরুজালেম জামাতকে ঘিরে পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলে ঈসার উম্মতেরা ক্যাথলিক খ্রিস্টান নামে বৃদ্ধি পেতে থাকে। রোমের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, নেতারা ক্রমে অনৈতিকতার দিকে পা বাড়ায় আর এই ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য অনেক নিয়মকানুন গড়ে তোলে। কালক্রমে নেতারা কিতাবের পাশাপাশি কিছু রীতিনীতি ও নিয়ম বেঁধে দিতে শুরু করে। এইভাবে চলতে চলতে একসময় ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে অনেকে আল্লাহর কালামকে ভুলে গিয়ে, রীতিনীতি ও নিয়মনির্ভর হয়ে ওঠে এবং অন্যায় অবিচারে সমাজ কলুষিত হয়। ফলে ঈসার উম্মতের সংখ্যা বিশ্বব্যাপী বিস্তার লাভ করলেও ভুলশিক্ষার কারণে পাপাচারও বহুগুণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এমনও সময় আসে, যখন ধর্মীয় নেতারা বেহেশতের টিকেট বিক্রি থেকে শুরু করে, হেন অপকর্ম নেই যে তারা করেনি। কিতাবুল মোকাদ্দসের কোন গুরুত্বই ছিল না। সাধারণ লোকদের কিতাব পড়া নিষিদ্ধ ছিল। কিতাবের শিক্ষা বাদ দিয়ে তারা মানুষের মনগড়া নানা নিয়ম-নীতি পালনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিল। বলা যায়, ঈসায়ী সমাজে তখন এক অন্ধকারময় অবস্থা বিরাজ করছিল।

এমনি অস্বস্তিকর সময় একজন নির্ভীক লোককে আল্লাহ ব্যবহার করেছিলেন, যার নাম মার্টিন লুথার। তিনিই সর্বপ্রথম অনাচারের বিরুদ্ধে কথা বলেন এবং খ্রিস্টিয় সমাজে মানুষের গড়া নিয়মের পরিবর্তে, আল্লাহর কালামকে প্রতিষ্ঠিত করার পক্ষে, কালাম ভিক্তিক যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। অর্থাৎ অনাচার ও অবিচারের বিরুদ্ধে প্রটেস্ট বা প্রতিবাদ করেন। অনেক আলাপ-আলোচনা, বাক-বিতণ্ডা, যুক্তিতর্কের পর, মার্টিন লুথার তাঁর সমর্থকদের নিয়ে, রোমান ক্যাথলিকদের মধ্য থেকে বের হয়ে আসেন। চিরাচরিত কিতাব বহির্ভূত পন্থার বিরুদ্ধে প্রোটেস্ট করেন বলে, তাদেরকে প্রটেস্টান নাম দেয়া হয়। এই প্রোটেস্টান দলের মধ্যে আবার কালামের গুরুত্বের দিক ঠিক রেখে, কিছু বিশ্বাসগত মতভেদ দেখা দেয়। ফলে প্রটেস্টান দল লুথারেন, এ্যাংলিক্যান, প্রেসবিটারিয়া, ব্যাপ্টিস্ট ইত্যাদি দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। তবে প্রোটেস্টান দলের মধ্যে ছোটখাটো কিছু মতভেদ থাকলেও প্রত্যেক দলই হজরত ঈসার মসীহত্ব ও প্রভুত্ব স্বীকার করে এবং এই বিষয়ে কোন আপোষ করে না।

ঈসায়ীদের মধ্যে প্রধান প্রধান দলগুলো কী কী?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

ঈসায়ীদের মধ্যে প্রধান প্রধান দলগুলো হলো: খ্রিস্টান, ঈসায়ী, ঈসায়ী মুসলমান ও মুসলমান।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

বিশ্বব্যাপী হজরত ঈসা মসীহের উম্মতেরা বিভিন্ন পরিচয়ে পরিচিত। এ দেশে নিজেদের পরিচয় দিতে গিয়ে, হজরত ঈসার উম্মতেরা চারভাবে পরিচিত: খ্রিস্টান, ঈসায়ী, ঈসায়ী মুসলমান এবং মুসলমান।

খ্রিস্টান: এদেশে হজরত ঈসার ধর্মমত প্রচারের ইতিহাস প্রায় ৩০০ বছরের। প্রায় দুই’শ বছর আগে ব্রিটিশরা আসার আগেও ইউরোপিয়ানরাসহ অন্যান্য দেশ এবং জাতির লোকেরাও এই অঞ্চলে ব্যবসা করতে আসতো। আর সেই ব্যবসার সাথে সাথে ধর্মের সাথেও যুক্ত হতো আমাদের এদেশের লোকেরা। ব্রিটিশরা পাক-ভারতে আসার পর ব্যাপকভাবে হজরত ঈসার সুখবর প্রচার ও প্রসার ঘটে। তবে সেই সময় কিছু সাধারণ হিন্দু ছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণের হিন্দু এবং আদিবাসীরা এই ধর্ম গ্রহণ করে এবং পাশ্চাত্যের প্রভাবে ও হিন্দু এবং আদিবাসী ভাষা ও সংস্কৃতির মিশ্রণে তারা খ্রিস্টান পরিচয় লাভ করে। নিজের নামের সাথে একাধিক বিদেশী নাম যুক্ত করে তারা পূর্বেকার ধর্মীয় লোকদের থেকে নিজেদের আলাদা করে নেয়। তারা ইংরেজি ‘চার্চ’ শব্দকে মণ্ডলী, আল্লাহকে ঈশ্বর, ঈসাকে যিশু ইত্যাদি শব্দে অনুবাদ করে, দলগতভাবে বসবাস ও উপাসনাদি পালন করতে থাকে। মুসলমানদের মধ্য থেকেও কিছু লোক ঈসাকে বিশ্বাস করে এইরূপ মণ্ডলীর সাথে যুক্ত হয়। তারাও তাদের নাম ও মুসলিম ধর্মীয় রীতিনীতি পরিবর্তন করে, হিন্দু ধর্মীয় ভাষা-সংস্কৃতি ও রীতিনীতিতে অভ্যস্থ হয়ে ওঠে। পঞ্চাশের দশকে পাক-ভারত স্বাধীন হয়, ইংরেজরা এদেশ ছেড়ে চলে যায় কিন্তু তাদের স্থাপিত মণ্ডলীগুলো থেকে যায়। বেশিরভাগ রোমান ক্যাথলিক মণ্ডলীর লোকদের সাপোর্ট অভ্যাহত থাকে। বৃটিশ শাসনামলে রোমান ক্যালিক ও চার্চ অফ বাংলাদেশ মণ্ডলী স্থাপনের পাশাপাশি বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। ফলে তাদের দ্বারা গণসংযোাগও হয় বেশি। খ্রিস্টান বলতে এদেশের মানুষ তাদেরকেই চেনে। লুথারেন, এ্যাংলিকান, প্রেসবিটারিয়ান ও ব্যাপ্টিস্ট চার্চগুলো মণ্ডলী স্থাপন করলেও তাদের এরূপ প্রতিষ্ঠান খুব একটা না থাকার কারণে, সমাজে তাদের পরিচিতি কম। যেভাবেই হোক না কেন বৃহত্তর সমাজ থেকে আগত লোকেরা খ্রিস্টান নামেই পরিচিতি পায়।

পরিবর্তন! ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করলেও ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট, দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত পাকিস্তান আলাদা হয়ে যায়। আর এই আলাদা হওয়ার মূলমন্ত্র ছিল ধর্ম ও সংস্কৃতি। হিন্দু ধর্মের ভাষা ও সংস্কৃতি মুসলমানদের ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে কোনভাবেই মেলে না। পাকিস্তানবাসীরা সবাই ভেবেছিল একই ধর্মীয় লোক হয়ে তারা একই ভাষা-সংস্কৃতি চর্চা করে, নিজেদের উন্নতি করবে। কিন্তু এও ছিল ভুল। কারণ পাকিস্তান অখণ্ড ভৌগলিক সীমায় না থাকার কারণে এবং দুই অংশের দূরত্বের কারণে এখানেও আলাদা কৃষ্টি-সংস্কৃতি, রাজনীতি ও ভাষার সমস্যা দেখা দেয়। পশ্চিম পাকিস্তানিরা পূর্বপাস্তিানিদের নিগৃহীত করে। এই সময় পাকিস্তানি ভাবধারায় এমনভাবে ইসলাম চর্চা হতো যে, কোন মুসলমান ইসলাম ছেড়ে অন্য ধর্ম গ্রহণ করবে তা কল্পনাই করা যেত না। তাই অতি সঙ্গোপনে যারা ঈসার পথে আসতো, তারা তাদের পরিচয় সম্পূর্ণ মুছে ফেলতো, নামধাম পরিবর্তন করে, একেবারে খাঁটি খ্রিস্টান হয়ে যেতো। মুসলমান থেকে খ্রিস্টান হবার পর, স্বাভাবিক কারণেই তাদের সাথে তাদের নিজের পরিবারের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যেতো। হিন্দু সংস্কৃতি লালন পালনের কারণে, অনেকে খ্রিস্টান নাম নিয়ে মা-বাবা, আত্মীয়-পরিজন থেকে চিরদিনের জন্য আলাদা হয়ে যেতো এবং এখনও অনেকে আলাদা হয়ে আছে।

ঈসায়ী-অগ্রগতির প্রথম সোপান: উগ্র মৌলবাদিতা ও ধর্মান্ধতার কারণে পাকিস্তানি শাসনের ২৪ বছর ধরে, একই ধরণের সমস্যা চলছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকে পরিবর্তনের হাওয়া লাগে। ভাষা-সংস্কৃতির প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের সংবিধানে, ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার কারণে ধীরে ধীরে আরো বেশি লোক ঈসার উপর ঈমান আনে। আর এভাবে খ্রিস্টান মণ্ডলীগুলোতেই সংখ্যাগরিষ্ঠ দল থেকে আগত লোকের সংখ্যা ক্রমে বৃদ্ধি পেতে থাকে। তবে যেভাবে বাড়া দরকার ছিল সেভাবে বাড়েনি বরং যারা আসতো তারাও বাহ্যিক পরিবর্তনের ভয়ে, অনেকে ফিরে যেতো এবং অনেকে অনেকটা আত্মগোপন করার মতো খ্রিস্টান সমাজে বর্ণচোরা হয়ে থাকতো। কালক্রমে এই নতুন সমাজে আগত লোকেরাই আবিস্কার করল যে, তাদের ভাষা সংস্কৃতির বিষয় ভাবতে হবে। প্রচলিত চিন্তাধারা বাদ দিতে হবে। আর এই ভাবনা থেকেই শুরু হয় ইসলামি ভাষায় কিতাব অনুবাদের কাজ। অবশ্য ছোট ছোট অনুবাদের কাজ পাকিস্তান আমলের শেষদিকে কিছুকিছু শুরু হয়েছিল। নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে সেগুলো আলোর মুখ দেখেনি। স্বাধীনতার পর অনুবাদের কাজ দ্রুত চলতে থাকে। প্রথমে ইঞ্জিল শরিফের আলাদা আলাদা খণ্ড বের হয় এবং শেষে ১৯৭৬ সালে পূর্ণ ইঞ্জিল শরিফ প্রকাশিত হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল থেকে আসা লোকদের জীবনে নতুন সূর্য দেখা দেয়। তারা ঈসায়ী হিসাবে পরিচিতি লাভ করে।

ঈসায়ী মুসলমান: প্রায় সকল নবিগণ ইহুদি ধর্ম থেকে আসলেও মুসলমানরা প্রায় সকল নবিদেরই তাদের নবি হিসেবে মানে এবং সকল নবিকেই মুসলমান দাবি করে। এতে নবিদের উম্মতেরা মুসলমান দাবি করতেই পারেন। নবিদের কথা কোরান শরিফে অনেকবার উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষত হজরত ঈসার কথা, তাঁর মা বিবি মরিয়মের কথা এবং হজরত ঈসার দুনিয়াতে প্রথম আগমন, কাজ, বেহেশতে চলে যাওয়া এবং দ্বিতীয় আগমনের কথা বহুবার বহুভাবে কুরান শরিফে উল্লেখ করা হয়েছে। যেহেতু বৃহত্তর সমাজ থেকে আগত ভাইবোনেরা আগে থেকেই হজরত ঈসার উপর ঈমান রাখে এবং মুসলমান হিসেবে পরিচিত, সেহেতু অনেকে নিজেদের ঈসায়ী মুসলমান হিসেবেও পরিচয় দেয়। একথা পরিষ্কার যে, হজরত ঈসার উপর ঈমানদার ঈসায়ীদের বিশ্বাস এবং মুসলমানদের বিশ্বাস আলাদা। কারণ ঈসায়ীরা হজরত ঈসাকে কেবল নবি হিসেবে বিশ্বাস করে না বরং নাজাতদাতা, মসীহ ও প্রভু বলে বিশ্বাস করে। ফলে ঈসার উপর এই আলাদা বিশ্বাসের কারণে ঈসায়ী; আবার আংশিক ইসলামি বিশ্বাস, রীতিনীতি ইত্যাদির কারণে নিজেদের ঈসায়ী মুসলমান দাবি করে।

মুসলমান: ঈসা নবির উম্মতদের প্রধান চারিত্রিক বৈশিষ্ট হলো আত্মসমর্পণ। এই আত্মসমর্পণের অনন্য উদাহরণ যিনি সৃষ্টি করেন তিনি হলেন হজরত ইব্রাহিম (আ.)। হজরত ঈসার উম্মতেরা ঈমানের দিক থেকে হজরত ইবরাহিমকে তাদের রুহানি পিতা বলে ডাকে। যে কোরবানি তিনি দিয়েছিলেন, তা দিয়ে তিনি প্রমাণ করেছিলেন যে, মানুষ ঈমান দ্বারাই নাজাত পায়, কোন ধর্মকর্মের মধ্যদিয়ে নয়। আসলে হজরত ইবরাহিমের আমলে কোন প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মকর্মই ছিল না। আল্লাহর প্রতি বাধ্য হয়ে জীবন কোরবানির (ঈমান-বাধ্যতা) মাধ্যমেই তিনি দেখিয়েছিলেন যে, মানুষকে ঈমানের মধ্যদিয়েই নাজাত পেতে হবে। আর সেই ধারা হজরত ঈসার শিক্ষার মধ্যেও রয়েছে। মসীহের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে নিজেকে সঁপে দেবার মধ্যদিয়েই ঈসায়ীদের নতুন জীবন শুরু হয়। আর জীবন চলে প্রতিদিনের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে। ইঞ্জিল শরিফ বলে, “তোমরা তোমাদের দেহকে জীবিত, পবিত্র ও আল্লাহর গ্রহণযোগ্য কোরবানি হিসেবে আল্লাহর হাতে তুলে দাও।” মুসলমান শব্দের অর্থ আত্মসমর্পণকারী। হজরত ঈসা মসীহ নিজেও আল্লাহর প্রতি সমর্পিত হয়ে বেহেশত ছেড়ে দুনিয়াতে এসেছিলেন এবং নির্দোষ হয়েও দোষী মানুষের জন্য নিজের জীবন কোরবানি দিয়েছিলেন। একজন ঈসায়ীর জীবন হলো পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণের জীবন। তাই একজন ঈসায়ী নিজেকে মুসলমান পরিচয় দেওয়ার মধ্যে কোন বাধা নেই বরং সত্য ও সুন্দরের ছোঁয়া আছে।

যারা মুসলমান হিসেবে পরিচয় দেয়, তাদের মধ্যে কেউ কেউ আছে, যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, রোজা রাখে, পশু কোরবানিসহ মুহম্মদি মুসলমানদের মতো সব করে। তাদের মতে তারা এসব করে হজরত ঈসার নামে। এরূপ করার কারণ হিসেবে যা পাওয়া যায়, তা হলো- সামাজিক শান্তি রক্ষা, প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা, সুখবর প্রচারের পরিবেশ তৈরি করা, অহেতুক ঝামেলা এড়ানো এবং ব্যাপক প্রচার ও প্রসার।

তাদের মতে, হজরত ঈসা নিজে ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করে, ভিন্ন ধর্মমত প্রচার করলেও এবং রুহানিভাবে আলাদা জীবনযাপন করলেও সামাজিকভাবে ইহুদির মতো চলতেন। দেখা যায়, তিনি ইহুদি সমাজঘরে যেতেন, শিক্ষা দিতেন এবং ইহুদিদের সাধারণ নিয়ম মানতেন। যদিও তাঁর ধর্মমত ইহুদি ধর্মমতের সম্পূর্ণ বিপরীত তবু তিনি তাঁর কোন সাহাবিকে ভিন্নতর সামাজিক জীবন যাপনে উৎসাহী করতেন না। যে বিষয়ে তিনি জোর দিতেন, তা হলো রুহানি পরিবর্তন। হজরত পৌলও নিজের জীবন দিয়ে শিক্ষা দিয়েছেন, ‘আমি ইহুদিদের কাছে ইহুদি এবং পরজাতির কাছে পরজাতির মতো হয়েছি’।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসায়ী এবং খ্রিস্টানদের মধ্যে পার্থক্য কী?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

ঈসায়ী এবং খ্রিস্টানদের মধ্যে পার্থক্য হলো ভাষা ও সংস্কৃতিগত।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

ঈসায়ী এবং খ্রিস্টানদের মধ্যে পার্থক্য কী, অনেকে এই প্রশ্নও করেন। অনেকে ঈসায়ী মানে খ্রিস্টান মনে করেন। কিন্তু ঈসায়ী মানে খ্রিস্টান নয়। খ্রিস্টানদের মধ্যে বিভিন্ন দল রয়েছে। খ্রিস্টানদের প্রধান দুই দলের মধ্যে প্রটেস্টান এবং রোমান ক্যাথলিক প্রধান। আবার প্রটেস্টানদের মধ্যে বেশ কয়েকটি ভাগ রয়েছে। এই ভাগগুলোর মধ্যে ব্যাপ্টিস্ট, এ্যাংলিকান, লুথারেন ও প্রেসবিটারিয়ান প্রধান। ঈসায়ীরা মূলত এই প্রটেস্টান দলের কোন না কোন ভাগের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। তবে ব্যাপ্টিস্টদের উদারপন্থি মনোভাবের কারণে ঈসায়ীদের বেশির ভাগই এই দলেরই অন্তর্ভুক্ত হয়। তবে ভাষা-সংস্কৃতির প্রতিবন্ধকতার কারণে তারা ঈসায়ী নামে আলাদা জীবন যাপন করে। নিচে ঈসায়ী ও খ্রিস্টানদের মধ্যে সাধারণ পার্থক্যগুলো দেখানো হলো:

ক্রমিক বিষয় প্রটেস্টান ক্যাথলিক
সৃষ্টিকর্তা এক আল্লাহ বিশ্বাস করে এক আল্লাহ বিশ্বাস করে এক আল্লাহ বিশ্বাস করে
নেতা হজরত ঈসা যিশু বিশপ যিশু/মেরি/পোপ/বিশপ
ধর্মের নাম ঈসায়ী খ্রিস্টধর্ম রোমান ক্যাথলিক
ধর্মীয় কিতাব পুরো কিতাবুল মোকাদ্দস পবিত্র বাইবেল বাইবেল + এপোক্রিপা
পোশাক বাধা-ধরা নিয়ম নেই কোন কোন দলে আছে বিশেষ কাপড় আছে
খাবার খাবারটা বড় বিষয় নয় খাবারটা বড় বিষয় নয় খাবারে বিধি নিষেধ আছে
এবাদতখানা যেকোন নাম গির্জা / চার্চ/ মণ্ডলী গির্জা / চার্চ/ মণ্ডলী
এবাদতের দিক কোন নির্দিষ্ট দিক নেই কোন নির্দিষ্ট দিকে মুখ করে না যিশু ও মেরির মূর্তির দিক
উপায় কিতাব পাঠ/ ব্যাখ্যা ও মুনাজাত গান বাইবেল পাঠ/ব্যাখ্য ও প্রার্থনা/বিশেষ বাণী উচ্চারণ বিশেষ বাণী উচ্চারণ মন্ত্র পাঠ, ধূপ জ্বালানো, প্রার্থনা / মিসা / দীক্ষাস্থান
ধর্মকর্ম কিতাব অনুসারে জীবন যাপন বাইবেল অনুসারে জীবন নানা বাহ্যিক নিয়মকানুন পালন করা
নবিদের বিষয়ে নবিদের বিশ্বাস করে ভাববাদীদের বিশ্বাস ভাববাদীদের বিশ্বাস নবিদের / ক্যানন বহির্ভূত ব্যক্তি
স্থানীয় নেতা ইমাম / পালক / পরিচালক পরিচালক পালক / ফাদার / বিশপ ব্রাহ্মণ / ঠাকুর / পুরোহিত
উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসায়ী বিশ্বাসের সঙ্গে হিন্দুধর্মের পার্থক্য কী?

পাককিতাব তথা কিতাবুল মোকাদ্দস বহুত্ববাদ বা পৌত্তলিকতাবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। হজরত মুসার শরিয়তের মূল কথাই হলো, আল্লাহর স্থানে যেন কোন দেব-দেবী বা প্রতিমূর্তি রাখা না হয়। এই জন্য যেমন শিক্ষা দেওয়া হতো তেমনি অবাধ্যদের সরাসরি শাস্তিও দেওয়া হতো। এই মূর্তিপূজার কারণেই বনি-ইসরাইজাতির লোকদের আল্লাহ অন্যান্য জাতির মধ্য থেকে আলাদা করে নিয়েছিলেন। কিন্তু মাঝে মাঝে এই জাতির লোকেরা বিজাতীয়দের মতো মূর্তিপূজায় লিপ্ত হতো এবং কঠিন শাস্তিও পেতো। আমাদের দেশের হিন্দু এবং আদিবাসী লোকদের মধ্যে প্রতিমাপূজার প্রচলন দেখা যায়। নিচে ঈসায়ী ও হিন্দু ধর্মের পার্থক্য দেখানো হলো:

ক্রমিক বিষয় ঈসায়ী হিন্দু
সৃষ্টিকর্তা এক আল্লাহ বিশ্বাস করে বহুত্ববাদে বিশ্বাসী
নেতা হজরত ঈসা শ্রী কৃষ্ণসহ বহু দেবতা
ধর্মের নাম ঈসায়ী / খ্রিস্টধর্ম সনাতন/ হিন্দু
ধর্মীয় কিতাব পুরো কিতাবুল মোকাদ্দস (ইঞ্জিল শরিফ) শ্রীমৎ ভগবত গীতা
পোশাক বাধা-ধরা নিয়ম নেই বিশেষ কাপড় আছে
খাবার খাবারটা বড় বিষয় নয় খাবারে বিধি নিষেধ আছে
এবাদতখানা স্থান-কাল-পাত্রভেদে যেকোন নাম মন্দির
এবাদতের দিক কোন নির্দিষ্ট দিকে মুখ করতে হয় না মূর্তির দিকে মুখ করতে হয়
উপায় গান, কিতাব পাঠ/ব্যাখ্যা ও মুনাজাত মন্ত্রপাঠ, ধূপ জ্বালানো, সিঙাধ্বনি, উলুধ্বনি, কীর্তন
ধর্মকর্ম কিতাব অনুসারে জীবন যাপন নানা বাহ্যিক নিয়মকানুন পালন করা
নবিদের বিষয়ে নবিদের বিশ্বাস করে যত মত তত পথ
স্থানীয় নেতা ইমাম / পালক / পরিচালক ব্রাহ্মণ / ঠাকুর / পুরোহিত
উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসায়ীদের সঙ্গে মুসলমানদের পার্থক্য কী?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

ঈসায়ী ও মুসলমানদের পার্থক্য গুনাহ থেকে উদ্ধার পাওয়ার ভিত্তি।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

ঈসায়ীরা হজরত ঈসা মসীহের উম্মত আর মুসলমানগণ হজরত মুহম্মদের উম্মত। কিন্তু মুসলমানগণ যেহেতু হজরত ঈসা মসীহকে নবি হিসেবে দাবি করেন সেহেতু তাঁদের দৃষ্টিতে ঈসা মসীহের উম্মতদের অবস্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ঈসায়ী এবং মুসলমানের মধ্যে নিম্নোক্ত পার্থক্যগুলো দেখা যায়:

ক্রমিক বিষয় ঈসায়ী মুসলমান
সৃষ্টিকর্তা এক আল্লাহ বিশ্বাস করে এক আল্লাহ বিশ্বাস করে
নেতা হজরত ঈসা হজরত মুহম্মদ
ধর্মের নাম ঈসায়ী / খ্রিস্টধর্ম ইসলাম
ধর্মীয় কিতাব পুরো কিতাবুল মোকাদ্দস কোরান শরিফ
পোশাক বাধা-ধরা নিয়ম নেই বিশেষ পোশাক আছে
খাবার খাবারটা বড় বিষয় নয় খাবারে বিধি নিষেধ আছে
এবাদতখানা স্থান-কাল-পাত্রভেদে যেকোন নাম মসজিদ
এবাদতের দিক কোন নির্দিষ্ট দিকে মুখ করতে হয় না কাবার দিকে মুখ করতে হয়
উপায় গান, কিতাব পাঠ/ব্যাখ্যা ও মুনাজাত শারীরিক নিয়ম
ধর্মকর্ম কিতাব অনুসারে জীবন যাপন নানা বাহ্যিক নিয়মকানুন পালন
নবিদের বিষয়ে নবিদের বিশ্বাস করে নবিদের বিশ্বাস করে
স্থানীয় নেতা ইমাম / পালক / পরিচালক পরিচালক ইমাম
উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসায়ী এবং ইহুদির মধ্যে কি কোন পার্থক্য আছে?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

ঈসায়ী এবং ইহুদির পার্থক্য হলো ঈমান এবং শরিয়তের।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

পৃথিবীর ধর্মগুলোকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়। একেশ্বরবাদী ধর্ম, বহুত্ববাদী ধর্ম এবং মানবতাবাদী ধর্ম। একেশ্বরবাদী ধর্মগুলোর মধ্যে ইহুদি, ঈসায়ী এবং মুসলমানরা পড়ে। অনেকে ঈসায়ী এবং ইহুদি ধর্মকে এক বলে মনে করে। কিন্তু এ দুটি আসলে কোন ক্রমেই এক নয় বরং এদের পার্থক্য দিন রাতের পার্থক্যের মতো। এই দুই ধর্মে দুইএকটি ক্ষেত্রে মিল থাকলেও অমিল অনেক বেশি। হজরত ঈসা নিজে ইহুদি বংশে জন্মগ্রহণ করলেও এবং অনেক ইহুদি তাঁর উপর ঈমান আনলেও ইহুদি নেতারাই শেষে রোমীয়দের সাথে ষড়যন্ত্র করে, হজরত ঈসা মসীহকে ক্রুশে দিয়েছিলেন। ইহুদিদের ধর্মীয় কিতাব অনুসারে হজরত ঈসাই ছিলেন তাদের মসীহ কিন্তু মর্ধান্ধতা, কুসংস্কার এবং রুহানিকতার অভাবে তারা তাঁকে চিনতে পারেনি।

নিচে ঈসায়ীদের সাথে ইহুদিদের পার্থক্যগুলো দেখানো হলো:

ক্রমিক বিষয় ঈসায়ী ইহুদি
সৃষ্টিকর্তা এক আল্লাহ বিশ্বাস করে এক আল্লাহ বিশ্বাস করে
নেতা হজরত ঈসা হজরত মুসা
ধর্মের নাম ঈসায়ী / খ্রিস্টধর্ম ইহুদি
ধর্মীয় কিতাব পুরো কিতাবুল মোকাদ্দস তৌরাতসহ প্রথম ৩৯ খণ্ড
পোশাক বাধা-ধরা নিয়ম নেই বিশেষ পোশাক আছে
খাবার খাবারটা বড় বিষয় নয় খাবারে বিধি নিষেধ আছে
এবাদতখানা স্থান-কাল-পাত্রভেদে যেকোন নাম "সিনাগগ"
এবাদতের দিক কোন নির্দিষ্ট দিকে মুখ করতে হয় না নির্দিষ্ট দিকে মুখ করতে হয়
উপায় গান, কিতাব পাঠ/ব্যাখ্যা ও মুনাজাত গান, কিতাব পাঠ, ব্যাখ্যা ও মুনাজাত
ধর্মকর্ম কিতাব অনুসারে জীবন যাপন বাহ্যিক নিয়মকানুন পালন করতে হয়
নবিদের বিষয়ে নবিদের বিশ্বাস করে প্রায় সব নবিই ইহুদি ধর্মের
স্থানীয় নেতা ইমাম / পালক / পরিচালক পুরোহিত / রাব্বি

উল্লেখ্য যে, ইসরাইলিদের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমেরিকা এবং কিছু ইউরোপীয় দেশের বাস্তব সাহায্যের কারণে অনেকে ধারণা করতে পারে যে, ঈসায়ী এবং ইহুদিরা এক। কিন্তু মনে রাখা প্রয়োজন, বর্তমানকার এই পরিস্থিতি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং মাঝে মাঝে ব্যক্তিগত। এর সাথে ঈসায়ীদের কোন সম্পর্ক নেই। বরং কিতাবুল মোকাদ্দস অনুসারে স্বৈরাচারী, স্বেচ্ছাচারী, অত্যাচারী কোন দলকে কোনভাবে সাহায্য সহযোগিতা দেওয়া সম্পূর্ণ অন্যায় ও গর্হিত কাজ; কোন কিতাবি লোক এই কাজ করতে পারে না।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

অন্যান্য একেশ্বরবাদীদের সঙ্গে ঈসায়ীদের মৌলিক পার্থক্যগুলো কী কী?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

অন্যান্য একেশ্বরবাদীরা আল্লাহকে খোঁজে কিন্তু ঈসায়ী ধর্মে আল্লাহ মানুষকে খোঁজেন।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

ধর্মে ধর্মে পার্থক্য চিরকালের। এই পার্থক্য থাকা নিয়ে হিংসা, রাগারাগি, মারামারি এমনকি ধর্মযুদ্ধও হয়েছে। যদিও প্রত্যেক ধর্মের মূলকথা শান্তি, তথাপি বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ নানা পার্থক্যের কারণে একধর্মের লোকের সাথে আর একধর্মের অশান্তি লেগেই আছে। মানুষ ছোটবড় অনেক পার্থক্যের মধ্যদিয়ে, নিজেদের অপর ধর্ম থেকে আলাদা করে নিয়েছে। এই পার্থক্যগুলো ভাষা, সংস্কৃতি, পোশাক, খাবার, এবাদতের উপায়, নাজাতের উপায় ইত্যাদি প্রত্যেক ক্ষেত্রে রয়েছে। ধর্মের পার্থক্য জানতে হলে, সংশ্লিষ্ট ধর্মগুলো কী, নেতা কে, কিতাব কী, ধর্মকর্ম কী, বিশ্বাস কী ইত্যাদি জানতে হবে। প্রকৃত ঈসায়ীদের সাথে মানুষের সাথে পার্থক্য বিশ্বাসের; বাহ্যিক নয়, আভ্যন্তরীণ। অন্য কথায় বলা যায়, সেই পার্থক্য হলো, উদ্ধারপ্রাপ্ত এবং উদ্ধারহীন ঈসায়ীর।