Category Archives: ঈসায়ীগণ

ঈসায়ীরা কি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

না, ঈসায়ীদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার বিধান নেই।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

হজরত ঈসাকে ভোরে, সন্ধ্যায় ও মাঝে মাঝে সারারাত মুনাজাত (এবাদত বা নামাজ) করতে দেখতে পাই। কিন্তু তিনি কখনও বলেননি কতবার মুনাজাত করতে হবে। বারের প্রশ্ন যখন আসে তখন নিয়মের প্রশ্ন এসে দাঁড়ায়। আর নিয়ম আসলেই নিয়ম ভাঙার কথা এবং নিয়মের দাস হওয়ার বা নিয়মতান্ত্রিকতার কথা আসে। মানুষ নিয়ম মানতে পারেনি বলেই মসীহ এসেছিলেন নিয়মের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি দিতে। আসলে নামাজ বা এবাদত নিয়মের বিষয় নয়। হজরত দাউদ একবার বলেছিলেন, তিনি দিনে সাতবার মুনাজাত করেন। কিন্তু তিনি শত্রুর তাড়ায় যখন বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতেন, তখন নৈমিত্তিক এবাদত করতে পারতেন না। আসলেই কি পারতেন না? অবশ্যই পারতেন ও করতেন। তিনি তখন হয়তো নিয়ম হিসাবে এবাদত করতেন না। অবশ্যই পথ চলতে চলতে, হাঁটতে হাঁটতে, বসতে বসতে আল্লাহর এবাদত করতেন। আল্লাহর এবাদত হাঁটতে হাঁটতে, চলতে চলতে, কাজ করতে করতেও করা যায়। ঈসায়ী ঈমানদারদের জন্য আল্লাহর পক্ষে যে কোন কাজ করাই এবাদত। অতএব, ঈসায়ী এবাদত গণনার বিষয় নয়। তবে ঈসায়ীরা সাধারণত সকালে ও সন্ধ্যায় ব্যক্তিগত ও পারিবারিক এবাদত করে এবং সপ্তায় একবার সম্মিলিত এবাদত করে।

কীভাবে বলা যায় যে নাজাতের নিশ্চয়তা আছে?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

আল্লাহর কালামে বহুবার নাজাতের নিশ্চয়তার কথা বলা হয়েছে।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

মানুষের নাজাতের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য হজরত ঈসা এসেছিলেন। যে কাজ করার জন্য তিনি এসেছিলেন তা তিনি সম্পন্ন করতে পেরেছিলেন। সেই কাজ হলো, মানুষের জন্য কোরবানি হওয়া। এই কোরবানি ছিল মানুষের পরিবর্তে কাফফারা। আল্লাহর কালামে লেখা আছে, “আল্লাহ যে আমাদের মহব্বত করেন তার প্রমাণ এই যে, আমরা গুনাহগার থাকতেই মসীহ আমাদের জন্য প্রাণ দিলেন” (রোমীয় ৫:৮)। হজরত ঈসা নিজেই বলেছেন, “আমি আপনাদের সত্যই বলছি, যে কেউ আমার উপর ঈমান আনে সে তখনই অনন্ত জীবন পায়” (ইউহোন্না ৬:৪৭)।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসায়ীরা খাবার আগে মুনাজাত করে কেন?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

আল্লাহকে শুকরিয়া জানাবার জন্য ঈসায়ীরা খাবার আগে মুনাজাত করে।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

খাবার আগে মুনাজাত করতেই হবে কিংবা না করলে তার ধর্মকর্ম সব মিথ্যা হয়ে যাবে এমন কোন কথা নেই। যেহেতু আমরা আল্লাহর সৃষ্টি এবং তিনিই আমাদের জন্য খাবারসহ প্রয়োজনীয় সবকিছুর ব্যবস্থা করেন, সেহেতু আমাদের তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত। এটি কোন ধরাবাঁধা মন্ত্র নয়। শুধু আল্লাহ যে দয়া করে, উপযুক্ত সময়ে খাবার যোগান দিয়েছেন, তার জন্য ধন্যবাদ দেওয়া কিংবা কৃতজ্ঞতা জানানো।

খাবার আগে মুনাজাত করতে হবে কিনা সুনির্দিষ্ট কোন নিয়ম না থাকলেও আমরা দেখতে পাই, হজরত ঈসা খাবার আগে, খাবার নিয়ে আল্লাহকে শুকরিয়া জানিয়েছিলেন (ইঞ্জিল শরিফ, লুক ৯:১৬)। এছাড়া হজরত ঈসাকে একবার তাঁর সাহাবিরা মুনাজাত শেখাতে বললে, তিনি যে মুনাজাত শিখিয়েছিলেন (মথি ৬ অধ্যায়) তাতেও খাবারের জন্য আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানাবার বিষয় দেখা যায়।

ঈসায়ীরা কেন বাংলা ভাষায় এবাদত করে, কেন আরবিতে নয়?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

আল্লাহ সব দেশের মানুষের মাতৃভাষা বোঝেন।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

আল্লাহর কাছে কোন একটি বিশেষ ভাষার বিশেষ কোন মূল্য নেই। তাঁর কাছে সব ভাষাই সমান। কিতাবের ইতিহাস থেকে জানা যায়, আল্লাহ নিজেই বিভিন্ন ভাষার সৃষ্টি করেছেন যেন মানুষ কৃষ্টি-সংস্কৃতি-ভাষা নিয়ে অহংকার করতে না পারে। হজরত ঈসার মাতৃভাষা ছিল অরামিক। তিনি হিব্রু এবং গ্রিক ভাষাও জানতেন এবং ব্যবহার করতেন। তাঁর সাহাবিরা গ্রিকেই কিতাব লিখেছিলেন। এই কারণে ইঞ্জিল শরিফের ভাষা হলো গ্রিক ভাষা।

ইহুদি জাতির ভাষা ছিলো হিব্রু বা ইবরানী এবং এই ভাষাতেই তাওরাত, জবুরসহ আগের প্রায় সব কিতাব লেখা হয়। হজরত ঈসা যে কিতাব ব্যবহার করতেন তা হিব্রু ভাষাতেই লেখা। তিনি এবাদতখানায় সেই ভাষায় কিতাব পড়ে লোকদের কাছে অরামিক ও গ্রিক ভাষায় বুঝিয়ে দিতেন। অতএব, ঈসায়ীদের কাছে হিব্রু এবং গ্রিক খুবই মূল্যবান। কেননা এই দু’টো ভাষাতেই কিতাবুল মোকাদ্দস নাজেল হয়। মূল্যবান এই অর্থে যে, প্রকৃত সত্য জানতে হলে মূল ভাষা জানা থাকলে কিতাব বুঝতে সুবিধা হয়। কিন্তু সেই ভাষাতেই এবাদত করতে হবে তার কোন মানে নেই এবং এব্যাপারে আল্লাহও কোন নির্দেশ দেননি। আল্লাহর কাছে ভাষা বড় বিষয় নয়, বড় বিষয় হলো মানুষের অন্তর। আরব দেশের লোকদের জন্য আরবি ভাষায় এবাদত করা প্রয়োজন, বাঙালির বাংলাভাষাতেই এবাদত করা উচিত, এই ভাষাতেই সে মনের কথা খুলে বলতে পারে। অতএব, বাঙালি ঈসায়ীদের জন্য বাংলা ভাষায় এবাদত করাই সমীচীন।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসায়ীরা কি এবাদতের সময় মদ খায়?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

প্রকৃত অর্থে ঈসায়ীরা এবাদতের সময় মদ খায় না।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

ঈসায়ীরা এবাদতের সময় মদ খায় না। কারণ মদেমত্ত মানুষ আল্লাহর এবাদত করতে পারে না। মদাসক্ত লোক বা মাতাল কখন কী বলে বা করে তা সে নিজেই জানে না। অতএব, কোন মাতালের পক্ষে এবাদত করা সম্ভব নয়। প্রকৃত ঈসায়ীর কাছে আল্লাহর এবাদত একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। ঈসায়ী জীবন মানেই এবাদতপূর্ণ জীবন। এবাদতের মধ্যদিয়েই একজন ঈসা আল্লাহর সাথে কথা বলেন এবং আল্লাহ যা বলেন তা শোনেন। ঈসায়ী এবাদতের বৈশিষ্ট্য হলো রুহানি গান, প্রশংসা, কিতাব পাঠ ও মুনাজাত ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহর এবাদত করা। গান, প্রশংসা ও মুনাজাতের মধ্যদিয়ে আল্লাহর সাথে কথা বলা হয়। আর কিতাব পাঠের মধ্য দিয়ে আল্লাহ কী বলছেন তা শোনা হয়। এবাদতের উপায় একএক দেশে সেই দেশের ভাষা-কৃষ্টি-সংস্কৃতির উপর নির্ভর করে। প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজনিজ ভাষায় এবং নিজ নিজ উপায়ে এবাদত করতে পারে।

মদ খাওয়ার প্রশ্নটি কেন আসে? একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের কারণেই হয়তো এই প্রশ্নটি এসেছে। অনুষ্ঠানটির নাম প্রভুর ভোজ বা মেজবানি। প্রভুর ভোজ হলো হজরত ঈসার স্থাপিত দুটি অনুষ্ঠানের মধ্যে একটি। এই অনুষ্ঠানটি মূলত হজরত ঈসার নির্দেশে, তাঁর মৃত্যুর ঘটনাকে স্মরণ করার জন্য পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রয়োজন হয় রুটি এবং রস। রুটির বেলায় যে কোন সাধারণ রুটি বা চাপাতি কিংবা বিশেষভাবে তৈরি রুটি ব্যবহার করা হয়। আর রসের বেলায় যেকোন স্কোয়াশ বা শরবত ব্যবহার করা হয়। রুটি ব্যবহার করা হয় হজরত ঈসার দেহের প্রতীক হিসাবে। তিনি মানব জাতির মুক্তির জন্য তাঁর দেহকে কোরবানি করেছিলেন। আর স্কোয়াশ বা শরবতকেও রক্তের প্রতীক হিসেবে একই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। কারণ তিনি তাঁর রক্তের মূল্য দিয়ে আমাদের কিনে নিয়েছেন। এখন সেই স্কোয়াশ বা রস খাওয়ার সময় যদি কেউ দেখে, তখন সে ভাবতে পারে যে, ঈসায়ীরা এবাদতে বসে মদ খাচ্ছে। আসলে তা মদ নয়, এ হলো সাধারণ পানীয় বা স্কোয়াশ। কোন কোন শীতপ্রধান দেশে এই রসের পরিবর্তে আঙুর রসও ব্যবহার করতে পারে। তবে তা অবশ্যই মাতাল হবার জন্য নয়, অনুষ্ঠান পালনের জন্য।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসায়ীরা কি প্রতিমা পূজা সমর্থন করে? তারা এবাদতখানায় মূর্তি রাখে কেন?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

ঈসায়ীরা প্রতিমাপূজা করে না এবং সমর্থনও করে না।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর: ঈসায়ীদের জন্য প্রতিমাপূজা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ একটি কাজ। প্রতিমা পূজা তো দূরের কথা, প্রতিমা বানানো কিংবা প্রতিমার সামনে উৎসর্গীকৃত কোন খাবারও খাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। পাককিতাবে লেখা আছে, “…মূর্তির কাছে কোরবানি করা খাবার খাওয়ার বিষয়ে বলছি, আমরা জানি, দুনিয়াতে মূর্তি আসলে কিছুই নয় আর আল্লাহও মাত্র একজন ছাড়া আর নেই। … মূর্তি পূজার অভ্যাস ছিল বলে মূর্তির কাছে উৎসর্গ করা খাবার এখনও পর্যন্ত কেউ কেউ সেই হিসাবেই খেয়ে থাকে, তাদের বিবেক দুর্বল বলে নাপাক হয়” (১করিন্থীয় ৮:১-১৩)।

পাককিতাবে স্পষ্ট লেখা আছে, প্রতিমাপূজা করো না। কেউ যদি প্রতিমা পূজা করে, সে স্পষ্টতই আল্লাহর আদেশ অমান্য করে। ইঞ্জিল শরিফের কোথাও প্রতিমাপূজা সংক্রান্ত কোন নির্দেশনা নেই, বরং তার বিরুদ্ধেই কিতাবের বাণী সোচ্চার হয়ে আছে। আর একটি কথা বলা ভালো যে, কাঠ, বাঁশ কিংবা মাটি দিয়েই যে প্রতিমা বানানো যায় তা-ই যে কেবল প্রতিমা তা নয়, আল্লাহর কালাম অনুসারে সবরকমের অবাধ্যতাই প্রতিমা পূজার সমান। এছাড়া যেকোন লোভ, মাদকাসক্তি যা আল্লাহর চেয়েও বেশি আকর্ষণীয় বলে মনে হয় এবং মানুষ যখন তার জন্য লালায়িত হয় তখনই প্রতিমাপূজা হয়। যদিও হওয়া উচিত নয়, তথাপি এই অবাধ্যতার প্রতিমা পূজা থেকে মাঝেমাঝে ঈসায়ীরাও মুক্ত নয়।

এবাদাতখানায় হজরত ঈসার কিংবা বিবি মরিয়মের বা অন্যকোন মহাপুরুষের মূর্তি রাখা প্রসঙ্গে। প্রকৃত ঈসায়ীরা কখনও কোন মূর্তি তাদের এবাদতখানায় রাখে না। তবে ঈসায়ীদের মধ্যে দুএকটি দল আছে, যারা স্বাকার উপাসনায় বিশ্বাসী, তারা হজরত ঈসার কাল্পনিক ছবি বা মূর্তি এবাদতখানায় ও ঘরে সাজিয়ে রাখে; কেউ কেউ ব্যবসার স্থানেও রাখে। এগুলো কুসংস্কার এবং ভ্রান্ত ধারণামাত্র। পাককিতাবে এগুলোর মোটেই স্থান নেই। আল্লাহর কালামে লেখা আছে, “পূজার উদ্দেশ্যে তোমরা কোন মূর্তি তৈরি করবে না, তা আকাশের কোন কিছুর মতো হোক বা মাটির উপরকর কোনকিছুর মতো হোক কিংবা পানির মধ্যেকার কোনকিছুর মতো হোক। তোমরা তাদের পূজাও করবে না, তাদের সেবাও করবে না। কারণ কেবলমাত্র আমি আল্লাহই তোমাদের মাবুদ। আমার পাওনা এবাদত আমি চাই” (তাওরাত শরিফ, হিজরত ২০:৪,৫ আয়াত)।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসায়ীরা এবাদতের আগে অজু করে না কেন?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

ঈসায়ীরা পাকসাফ হওয়ার জন্য বাহ্যিক কিছুর উপর নির্ভর করে না।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

ইসলামি অজু পাকসাফ হওয়ার প্রতীক। প্রত্যেক মুসলমান নামাজ বা কোরান পড়ার আগে অজু করেন। কথিত আছে, অজু সঠিক না হলে, তার কোন ধর্মকর্মই গ্রাহ্য হবে না। অজুর নিয়ম হলো দুই হাতের কনুই পর্যন্ত ধোয়া, দুই পায়ের পাতার উপরের গিট পর্যন্ত ধোয়া, নাক ও কানের ছিদ্রসমেত মুখমণ্ডল ধোয়া। অজু করার সময় একটি নিয়ত পড়তে হয়, আর পড়তে পড়তে পাকসাফ হতে হয়। অজুর সময় কোথাও যদি একচুল পরিমাণ শুকনো থাকে অর্থাৎ পানি না যায় কিংবা অজুর নিয়ত যদি সঠিকভাবে পড়া না হয়, তবে তার সেই দিনকার এবাদত কবুল হবে না।

আগেই বলা হয়েছে যে, ঈসায়ীরা পাকসাফ হওয়ার জন্য বাহ্যিক কোনকিছুর উপর নির্ভর করে না। হজরত ঈসার কথা হলো মানুষের বাইরে থেকে যা ভিতরে যায়, তা মানুষকে নাপাক করে না বরং ভিতর থেকে যা বেরিয়ে আসে তা-ই মানুষকে নাপাক করে। তিনি বুঝাতে চেয়েছেন, মানুষের অন্তর থেকে সব রকম কুচিন্তা, মন্দতা, ব্যভিচার, লোভ ইত্যাদি বেরিয়ে আসে ও মানুষকে নাপাক করে। যদি কারো অন্তর পরিষ্কার না হয়, তবে অজু করলেও মানুষ নাপাক থাকতে পারে। তিনি মানুষের অন্তর পরিষ্কার করার জন্য নিজের জীবন কোরবানি দিতে এসেছিলেন। যে ব্যক্তি হজরত ঈসা মসীহকে নাজাতদাতা ও প্রভু বলে বিশ্বাস ও গ্রহণ করেন তার সব পাপ ক্ষমা হয়, তার অন্তর পরিষ্কার হয়, তখনই তিনি এবাদত করার উপযুক্ত হন। তার আর অজুর প্রয়োজন নেই। হজরত ঈসাকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেছিলেন, যে গোসল করেছে তার হাত ধোয়ার প্রয়োজন হয় না।

অজুকে যদি পয়পরিষ্কার বলা হয়, তবে এর যথেষ্ট মূল্য আছে। কারণ সবসময় আমরা হাতে কিছু না কিছু ধরি, আর স্বাভাবিকভাবেই হাতে রোগজীবাণু লাগে। তাই হাত-পা-মুখ ধুলে পরিচ্ছন্ন থাকা যায়। বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও এটি স্বাস্থ্যসম্মত এবং গ্রহণযোগ্য। কিন্তু যদি এটি ধর্মীয় উপকরণ বলা হয়, তখন ঈসায়ীদের দৃষ্টিতে এর কোন মূল্য থাকে না। কারণ হজরত ঈসা তাঁর পবিত্র রক্ত দিয়ে, তাদের পাকসাফ করেছেন। অতএব, ঈসায়ীদের কাছে বাহ্যিক অজুর কোন বিশেষত্ব নেই।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসায়ীদের ধর্মকর্ম কেমন? (নামাজ, রোজা, হজ্জ, জাকাত, কোরবানি, দানখয়রাত, জানাজা, ইত্যাদি)।

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

ধর্মকর্ম পালনের ব্যাপারে ঈসায়ীদের কঠিন আদেশ দেওয়া আছে; অন্যথায় তাদের ঈমান মিথ্যা বা মৃত (ইয়াকুব ২:১৬, ১৭) ।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

মানুষ বাস্তববাদী, সামাজিক ও রুহানি জীব। সমাজে বাস করতে হলে, যেমন সমাজের নিয়ম মানতে হয়, তেমনি আল্লাহর রাজ্যের প্রজা অর্থাৎ ঈসায়ী হলেও তাদের আল্লাহর কালাম অনুসারে জীবন যাপন করতে হয়। এখন প্রশ্ন হলো, এই কাজগুলো নাজাতের জন্য করা, না কি সামাজিকতা কিংবা রুহানিকতার জন্য করা? ঈসায়ীরা নাজাতের জন্য এসব ধর্মকর্ম করে না। কারণ এগুলোর মধ্যদিয়ে প্রকৃতপক্ষে নাজাত পাওয়া যায় না। এর কারণ হলো কেউ এসব ধর্মকর্ম পালন করতে পারে না। আল্লাহর কালাম বলে, ধার্মিক কেউ নেই, একজনও নেই (রোমীয় ৩:২৩)। ধর্মকর্ম করে কেউ ধার্মিক হতে পারলে, এই আয়াত নাজেল হতো না।

নাজাত লাভের জন্য ঈসায়ীরা হজরত ঈসার উপর ঈমান আনে। কারণ তাদের সাফায়াতকারী হবার জন্যই ঈসা মসীহ কোরবানি হয়ে, কাফফারা দিয়েছেন। হজরত ঈসার উপর যারা ঈমান আনে, তারা আল্লাহর রাজ্যের প্রজা হয়। আর প্রজা হিসাবে তাদের উচিত যুক্তিসংগত সামাজিক, রুহানি ও নাগরিক হিসাবে ধর্মকর্ম ও সামাজিক দায়িত্ব পালন করা। তবে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ও জানাজার বিষয়ে কথা আছে। জানাজা সাধারণত মৃত ব্যক্তির জন্য করা হয়। ঈসায়ীরা মৃত ব্যক্তির জন্য জানাজা পড়ে না। কারণ তাতে কোন লাভ নেই। মৃত্যুর পর সেই ব্যক্তি ইহজীবনে যা করেছে তার কিছুই জানাজার মধ্যদিয়ে বদলানো যায় না। তবে সেই জানাজা বা মুনাজাত যদি মৃত ব্যক্তির আত্মীয়স্বজনদের জন্য হয়, তবে ঈসায়ীরা তা করতে প্রস্তুত। আল্লাহর কালামে লেখা আছে, “যাতে আল্লাহর উপরে যারা ঈমান এনেছে তারা অন্যদের উপকার করবার কাজে নিজেদের ব্যস্ত রাখবার দিকে মন দেয়। মানুষের পক্ষে এই সব ভাল এবং উপকারী (তীত ৩:৮)।

ঈসায়ীরা হজরত মুহম্মদের উম্মত হয় না কেন?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

হজরত মুহম্মদ নিজেই নিজের বিষয়ে এবং অন্যদের বিষয়ে কী হবে তা জানেন না, তাই তারা তাঁর উম্মত হয় না।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

কোরান শরিফে বলা হয়েছে, “বল, আমি কোন নতুন রসুল নহি। আমি জানি না, আমার ও তোমাদের ব্যাপারে কী করা হবে … আর আমি তো এক স্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র (সুরা আহকাফ ৪৬:৯)। যিনি নিজের বিষয়েই জানেন না বলেছেন, তবে অন্যদের দায়দায়িত্ব তিনি কীভাবে নেবেন? রোজ কেয়ামতের মাঠে যা যা হবে তার বিবরণ ইঞ্জিল শরিফে খুব পরিষ্কারভাবে বর্ণিত আছে। লেখা আছে, হজরত ঈসা তাঁর উম্মতদের জন্যই ফিরে আসবেন, আর এটাই স্বাভাবিক। লেখা আছে, যারা মারা গেছে, সেদিন তারা পুনর্জীবিত হবে। আর যারা জীবিত আছে, তারা ঈসা মসীহের সাথে সাক্ষাত করার জন্য আকাশে উঠে যাবে। এরপর ঈসা মসীহ সিংহাসনে বসে বিচার করবেন। তিনি গোটা মানব জাতিকে দুই ভাগে ভাগ করবেন; একদল তার ডানদিকে অপর দল তার বাঁদিকে রাখবেন। যারা বাঁদিকে থাকবে তারা হলেন সেই অবিশ্বাসীরাই যারা ঈসার উপর ঈমান আনেনি। তাদের তিনি অনন্ত শাস্তি ভোগ করার জন্য আগুনের হ্রদে ফেলে দেবেন, যেখানে শয়তান ও তার অনুসারীরা থাকবে। যারা ডানদিকে থাকবে, তারা হলেন সেই সব ঈমানদারেরা যারা হজরত ঈসার উপর ঈমান এনেছেন। তাদের তিনি অনন্ত সুখ ভোগ করার নির্দেশ দেবেন এবং তাদের নিয়ে একহাজার বছর রাজত্ব করবেন।

কোরান শরিফ বলে, “স্মরণ কর, যখন ফিরিশতাগণ বলল, ‘হে মারইয়াম! নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাকে তাঁর পক্ষ থেকে একটি কালেমার সুসংবাদ দিচ্ছেন। তাঁর নাম মসীহ মারইয়াম পুত্র ঈসা, সে দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানিত এবং সান্নিধ্যপ্রাপ্তদের অন্যমত হবে” (সুরা আল-ইমরান ৪৫ আয়াত)। কোরান এবং ইঞ্জিল অনুসারে যাকে আল্লাহ নিজেই দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানিত করেছেন তাঁর উম্মত হওয়াই তো বেশি যুক্তিসংগত।

কোরান শরিফ অনুসারে হজরত মুহম্মদ নিজেই জানেন না তাঁর উম্মতদের ব্যাপারে কী হবে বা না হবে বরং তার আক্ষেপ হবে যে, তিনি তাদের জন্য কিছুই করতে পারবেন না। কোরান শরিফে আল্লাহ হজরত মুহম্মদকে বলতে বলেন, “বল, আমি কোন নূতন রসুল নহি। আমি জানি না, আমার ও তোমাদের ব্যাপারে কী করা হবে। আমি আমার প্রতি যা ওহি করা হয় কেবল তারই অনুসরণ করি। আমি তো এক স্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র” (সুরা আহকাফ ৯ আয়াত)।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

পঞ্চম অধ্যায়
ঈসায়ীদের ধর্মকর্ম সম্পর্কে

ঈসায়ীরা কি হজরত মুহম্মদকে নবি হিসাবে সম্মান করে?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

হ্যাঁ, যেহেতু পৃথিবীর কোটি কোটি লোক হজরত মুহম্মদকে মানে ও বিশ্বাস করে, সেহেতু ঈসায়ীরাও তাঁকে একজন মহাপুরুষ হিসাবে সম্মান করে।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

নবি শব্দের মানে হলো ভবিষ্যত প্রবক্তা আর রসুল হলো আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ। যদি এই শব্দগুলো দিয়ে সাফায়াতকারী ধরা হয়, তবে ঈসায়ীরা তাঁকে মানে না বলতে হবে। কারণ ইঞ্জিল শরিফ অনুসারে সাফায়াতকারী একজনই আছেন, আর তিনি হলেন হজরত ঈসা কালেমাতুল্লাহ। পাককালাম বলে যে, আল্লাহ যেমন একজন ঠিক তেমনি আল্লাহ ও মানুষের মধ্যে সাফায়াতকারীও একজনই আছেন, আর তিনি হলেন হজরত ঈসা মসীহ।

পাককিতাবের কথা অনুযায়ী হজরত ঈসা দুনিয়াতে সাফায়ত করার জন্য এসেছিলেন। তিনি নিজের জীবন কোরবানি দিয়ে সাফায়াত করার গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছিলেন। পাককিতাবে লেখা আছে, “মসীহ আমাদের জন্য একটা নতুন ও জীবন্ত পথ খুলে দিয়েছেন, যেন আমরা পর্দার মধ্যদিয়ে অর্থাৎ তাঁর শরীরের মধ্য দিয়ে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হতে পারি” (ইবরানি ১০:২০)। শুধু তা নয়, তিনি এখনও প্রতিদিন আমাদের জন্য সাফায়ত করছেন যেন আমরা শয়তানের কুটকৌশল থেকে রক্ষা পাই। পাককিতাব বলে, “…এইজন্য যারা তাঁর মধ্যদিয়ে আল্লাহর কাছে আসে, তাদের তিনি সম্পূর্ণভাবে নাজাত করতে পারেন। কারণ তাদের পক্ষে অনুরোধ করবার জন্য তিনি সবসময় জীবিত আছেন” (ইবরানি ৭:২৫)। ঈসা নামের অর্থ হলো উদ্ধারকর্তা। এ নাম ফেরেশতা তাঁর জন্মের আগেই রেখেছিলেন। সুতরাং ঈসায়ীদের তথা সকল মানুষের একমাত্র সাফায়াতকারী হলেন ঈসা কালেমাতুল্লাহ।

তবে হজর মুহম্মদকে একজন মহাপুরুষ বলতে ঈসায়ীদের কোন বাধা নেই। এই অর্থে যদি নবি বা রসুল বলা হয়, তবে তাঁকে নবি বলতেও দোষের কিছু নেই।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০