Category Archives: কিতাব

ইঞ্জিল শরিফে কি হজরত মুহম্মদ (স:) এর আগমনের কথা লেখা আছে?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

না, ইঞ্জিল শরিফে হজরত মুহম্মদের আগমনের কথা লেখা নেই এবং হজরত ঈসা হজরত মুহম্মদের বিষয়ে কোন ভবিষ্যতবাণী করেননি।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

কেউ কেউ ধারণা করে যে, ইঞ্জিল শরিফে হজরত মুহম্মদের আগমনের কথা লেখা আছে। তারা ইউহোন্না কিতাবে পাকরুহের আগমন বিষয়ে তাঁর নিজের ভবিষ্যত বাণীর কথা উল্লেখ করেন। রেফারেন্স হিসাবে তারা দেখান, ইউহোন্না ১৪:১৫-১৬ আয়াত। এখানে লেখা আছে, “তোমরা যদি আমাকে মহ্বত কর তবে আমার সমস্ত হুকুম পালন করবে। আমি পিতার কাছে চাইব, আর তিনি তোমাদের কাছে চিরকাল থাকবার জন্য আর একজন সাহায্যকারীকে পাঠিয়ে দেবেন।” এই সাহায্যকারীকে অনেকে হজরত মুহম্মদ বলে মনে করে থাকেন।

বিষয়টি গভীরভাবে ভেবে দেখা প্রয়োজন। প্রথমত, যারা উপরিউক্ত আয়াতটি নিয়ে কথা বলেন, পরের আয়াতটি পড়লেই বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যায়। পরের আয়াতে সুস্পষ্টভাবে লেখা আছে যে, সেই সাহায্যকারী হলেন সত্যের রুহ যাঁকে দুনিয়ার লোক দেখতে পায় না এবং তাকে জানেও না। এই দিক থেকে বিচার করলে দেখা যায়, হজরত মুহম্মদকে দুনিয়ার লোক দেখেছে এবং জেনেছে। এই প্রতিজ্ঞা হজরত ঈসা তাঁর উম্মতদের কাছে করেছিলেন। তিনি আরো বলেছিলেন, দুনিয়ার লোক না দেখতে পেলেও কিংবা না জানলেও তোমরা তাঁকে জানো। এখানে তিনি নিজের কথাই বলেছেন। আর সেই সময় হজরত ঈসার উম্মতদের পক্ষে, ৫৭০ বছর পর জন্মগ্রহণ করা হজরত মুহম্মদকে দেখা ও জানার প্রশ্নই আসে না (ইউহোন্না ১৪:১৭)। সুতরাং সেই সাহায্যকারী হজরত মুহম্মদ নন। দ্বিতীয়ত, যে সাহায্যকারী আসার কথা, সেই বিষয়ে কালামে লেখা আছে, “যে সাহায্যকারীকে আমি পিতার কাছ থেকে তোমাদের কাছে পাঠিয়ে দেব, তিনি যখন আসবেন, তখন তিনিই আমার বিষয়ে সাক্ষি দেবেন। ইনি হলেন সত্যের রুহ, যিনি পিতার কাছ থেকে আসবেন আর তোমরাও আমার বিষয়ে সাক্ষি হবে” (ইউহোন্না ১৫:২৬)। তিনি আরো বলেন, “… সেই সত্যের রুহ যখন আসবেন, তখন তিনি তোমাদের পথ দেখিয়ে পূর্ণসত্যে নিয়ে যাবেন। তিনি নিজ থেকে কথা বলবেন না কিন্তু যা কিছু শোনেন তা-ই বলবেন, আর যা কিছু ঘটবে তাও তিনি তোমাদের জানাবেন। সেই সত্যের রুহ আমারই মহিমা প্রকাশ করবেন, কারণ আমি যা করি ও বলি তা-ই তিনি তোমাদের কাছে প্রকাশ করবেন” (ইউহোন্না ১৬:১৩, ১৪)।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ইঞ্জিল শরিফ অনুসারে কেয়ামতের আলামত কী?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

কেয়ামতের সময় দুনিয়ার অবস্থা কল্পনাতীত ভয়াবহ হবে। মানুষ সীমাহীন দুঃখকষ্ট ভোগ করবে। কিন্তু ঈসা মসীহের উম্মতেরা মসীহের আশ্রয়ে নিরাপদে থাকবে। তাদের আকাশে মেঘের মধ্যে তুলে নেয় হবে। পরে মসীহ তাঁর রাজত্ব কায়েম করবেন এবং সিংহাসনে বসে সমস্ত জাতির বিচার করবেন।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

কেয়ামতের আলামত সম্পর্কে ইঞ্জিল শরিফের বিভিন্ন সুরায় বিশদ বর্ণনা দেয়া হয়েছে। বর্ণিত আলামতের সবটুকু এই ক্ষুদ্র পরিসরে তুলে ধরা খুবই কঠিন। তবে সংক্ষিপ্ত আকারে দুনিয়ার অবস্থা, ঈসার উম্মতদের এবং ঈসা মসীহের অবস্থা তিনটি ধারায় তুলে ধরা হলো:

প্রথমত, দুনিয়ার অবস্থা: কেয়ামতের সময় দুনিয়ার অবস্থা কীরকম হবে তার বর্ণনা দিতে গিয়ে, হজরত ঈসা বলেন, “…আমি তোমাদের সত্যই বলছি, এখানে একটা পাথরের উপরে আর একটা পাথর থাকবে না; সমস্তই ভেঙে ফেলা হবে।” যুদ্ধের আওয়াজ শোনা যাবে। জাতির বিপক্ষে জাতির ভয়াবহ যুদ্ধ হবে। দেশে দেশে ভূমিকম্প হবে। মানুষের মধ্যে দুষ্টতা বেড়ে যাবে। সর্বনাশা ঘৃণার জিনিসকে পবিত্র জায়গায় রাখা হবে। তখন মানুষের এমন কষ্ট হবে যে, দুনিয়ার শুরু থেকে সেই সময় পর্যন্ত কখনও হয়নি এবং এরপরও শেষ হবে না। সেই সময় সূর্য অন্ধকার হয়ে যাবে, চাঁদ আর আলো দেবে না, তারাগুলো আসমান থেকে খসে পড়ে যাবে এবং চাঁদ-সূর্য-তারা আর স্থির থাকবে না” (ইঞ্জিল শরিফ, মথি ২৪ অধ্যায়)।

দ্বিতীয়ত, উম্মতদের অবস্থা: যুদ্ধের খবরাখবর শোনা গেলেও হজরত ঈসা তাঁর উম্মতদের অভয় দিয়ে বলেছেন, তাদের জন্য ভয় নেই, কারণ এসব হবেই হবে। তিনি আরো বলেন, অনেকেই আমার নাম নিয়ে এসে বলবে, ‘আমিই মসীহ’; এই বলে ঈমানদারগণকে ঠকাবে। হজরত ঈসা তাঁর উম্মতদের বিষয়ে বলেছেন, “সেই সময়ে লোকে তোমাদের কষ্ট দেবার জন্য ধরিয়ে দেবে এবং তোমাদের খুন করবে। আমার জন্য সব লোকেরা তোমাদের ঘৃণা করবে। সেই সময় অনেকে পিছিয়ে যাবে এবং একে অন্যকে ধরিয়ে দেবে।” স্থির থাকবার বিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন যে, তারা যেন কারো ঠকামিপূর্ণ কথায় বিশ্বাস না করে। তবে তিনি তাদের সর্বদা সতর্ক ও প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। তিনি বলেন, “তোমরা সতর্ক থাক, কারণ তোমাদের প্রভু কোন্দিন আসবেন তা তোমরা জানো না। সেই জন্য তোমরা প্রস্তুত থাক, কারণ যে সময়ের কথা তেমরা চিন্তাও করবে না, সেই সময়েই ইবনে আদম আসবেন।

তৃতীয়ত, হজরত ঈসা মসীহের অবস্থা: আমরা জানি যে, কেয়ামতের অর্থাৎ শেষ সময় হজরত ঈসা এই দুনিয়াতে ফিরে আসবেন। তবে সেই দিন বা সময়ের কথা কেউ জানে না; কেবল আল্লাহই জানেন, কখন তিনি আসবেন। নুহ নবির সময়ে যেমন হঠাৎ বন্যা এসেছিল, তেমটি তিনি হঠাৎ আসবেন। তাঁর উম্মদের তিনি বলেছেন যে, তাদের বিচলিত হবার কোন কারণ নেই। কারো কথা শোনা কিংবা অনুসন্ধান করারও কোন প্রয়োজন নেই, “কেননা বিদ্যুৎ যেমন পূর্বদিকে দেখা দিয়ে পশ্চিম দিক পর্যন্ত চমকে যায়, ইবনে আদমের আসা সেইভাবেই হবে”। ইঞ্জিল শরিফে হজরত ঈসা নিজেই কেয়ামতের সময় তাঁর নিজের অবস্থা সম্পর্কে বলেন। তিনি বলেন, এমন সময় আসমানে ইব্নেআদমের চিহ্ন দেখা দেবে, দেখেই তাঁকে চেনা যাবে। মানুষ ইবনে আদমকে শক্তি ও মহিমার সঙ্গে মেঘে করে আসতে দেখবে। এই সময় ‘জোরে জোরে শিঙা বেজে উঠবে আর সঙ্গে সঙ্গে ইবনে আদম তাঁর ফেরেশতাদের পাঠিয়ে দেবেন। সেই ফেরেশতারা দুনিয়ার একদিক থেকে অন্যদিক পর্যন্ত, চারদিক থেকে তাঁর বাছাই করা বান্দাদের একসঙ্গে জড়ো করবেন (ইঞ্জিল শরিফ মথি ২৪ অধ্যায়)। হজরত ঈসা আরো বলেন, ইবনে আদম সমস্ত ফেরেশতাদের সঙ্গে নিয়ে যখন নিজের মহিমায় আসবেন, তখন তিনি বাদশাহ হিসাবে তাঁর সিংহাসনে মহিমার সাথে বসবেন এবং সকল জাতির বিচার করবেন (মথি ২৫ অধ্যায়)।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসা মসীহের সাহাবিরাই বর্তমান যে ইঞ্জিল শরিফ পাওয়া যায় তা লিখেছেন, আমরা তা কেন মানবো?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

ইঞ্জিল শরিফ হজরত ঈসার সাহাবিরা লিখলেও তা আল্লাহর কালাম হিসাবে স্বীকৃত।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

বলা হয়ে থাকে যে, ঈসা মসীহের সাহাবিরাই অর্থাৎ সাধারণ মানুষেরাই ইঞ্জিল শরিফের লেখক। সুতরাং আমাদের সেই লেখা পড়ার ও মানার কোন যৌক্তিকতা নেই। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, আল্লাহ সাধারণত খুব সাধারণ মানুষকেই তাঁর কাজে ব্যবহার করেছেন। আল্লাহ হজরত ঈসার আগেকার যে নবিদের মনোনীত করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে হজরত মুসা এবং হজরত দাউদ উল্লেখযোগ্য। দেখা যায়, এই দু’জনই একসময় ভেড়ার রাখাল ছিলেন। আল্লাহ সবসময় সাধারণ লোকদের দিয়ে অসাধারণ কাজ করেছেন। হজরত ঈসার সাহাবিরা সাধারণ লোক ছিলেন সত্য; কিন্তু তাদের মধ্যে কয়েকজন নবি, কয়েকজন শিক্ষক, কয়েকজন প্রচারক ইত্যাদি ছিলেন। তাঁরা একসময় অসাধ্য সাধন করেছিলেন। তাঁরা হজরত ঈসার মতো রোগীদের সুস্থ করেছিলেন, মৃতকে জীবন দিয়েছিলেন, প্রাকৃতিক শক্তির উপর বিজয়ী হয়েছিলেন। অর্থাৎ সাধারণ লোক হলেও আল্লাহ তাঁদের অসাধারণ ক্ষমতা দিয়েছিলেন। আল্লাহ তাদের মধ্যে কয়েকজনকে নবি হিসাবে কিতাব লেখার জন্য নিযুক্ত করেছিলেন। সেজন্য ইঞ্জিল শরিফের লেখকদের একজন বলেছেন, “…এই কথা মনে রেখ যে, কিতাবের মধ্যেকার কোন কথা নবিদের মনগড়া নয়, কারণ নবিরা তাদের ইচ্ছামতো কোন কথা বলেন নি; পাকরুহের দ্বারা পরিচালিত হয়েই তাঁরা আল্লাহর দেওয়া কথা বলেছেন” (২ পিতর ১:২০, ২১ আয়াত)।

এছাড়া যেসব কিতাব পাককিতাবের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, তা অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করেই গ্রহণ করা হয়েছে। এই লেখাগুলোর মধ্যে যদি আগের কিতাবের বিষয়বস্তুর সাথে ধারবাহিকতা না থাকতো, তবে যে মহান সাধকেরা এগুলো একসাথে যুক্ত করেছেন তথা আল্লাহর কালাম হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন, তা দিতেন না। পাককিতাবের একজন লেখক বলেছেন, “পাককিতাবের প্রত্যেকটি কথা আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে এবং তা শিক্ষা, চেতনা দান, সংশোধান এবং সৎ জীবনে গড়ে উঠবার জন্য দরকারি” (২ তীমথিয় ৩:১৬ আয়াত)। অর্থাৎ আল্লাহর কালামের প্রত্যেকটি কথা আমাদের পড়া উচিত যেন আমরা সংশোধিত হই এবং সৎ জীবনে গড়ে উঠি। কোরান শরিফে বলা হয়েছে, “হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ, তাঁর রসুলে, তিনি যে কিতাব তাঁর রসুলের প্রতি অবর্তীর্ণ করেছেন তাতে এবং যে কিতাব তিনি পূর্বে অবতীর্ণ করেছেন তাতে ঈমান আন” (সূরা নিসা ১৩৬)। পূর্বে যেসব কিতাব নাজেল হয়েছে, ইঞ্জিল শরিফ যা পাকরুহের পরিচালনায় হজরত ঈসার সাহবীগণ কর্তৃক লিখিত হয়েছে, তা অন্যতম। তাতে ঈমান আনার জন্য কোরানও নির্দেশ দিয়েছে।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

কোরানের দৃষ্টিতে ইঞ্জিল শরিফের গুরুত্ব কী?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

কোরানের দৃষ্টিতে ইঞ্জিল শরিফ খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিতাব। কোরানের অনুসারীদের তা পড়তে বলা হয়েছে।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

একটি ধারণা প্রচলিত আছে যে, একশ চারখানা আসমানি কিতাবের মধ্যে চারটি হলো শ্রেষ্ঠ কিতাব; ইঞ্জিল তাদের মধ্যে একটি। কোরান শরিফে ইঞ্জিল শরিফ পড়ার এবং চর্চা করার তাগিদ দেয়া হয়েছে জোড়ালোভাবে। কোরান শরিফে বলা হয়েছে, “বল, হে আহলে কিতাব, তোমরা কোন পথের উপরই নহ, যে পর্যন্ত না তোমরা তাওরাত, ইঞ্জিল ও তোমাদের রক্ষক হতে অবতীর্ণ কিতাবের অনুসরণ কর।” (সুরা মায়িদা ৬৮ আয়াত)। এখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, যদি কেউ ইঞ্জিল শরিফ অনুসরণ না করে, তবে তার কোন ভিত্তিই নেই। সে নড়বড়ে এক খুঁটির মতো।

সুরা ইউনুস ৯৪ আয়াতে বলা হয়েছে, “আমি তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি, তাতে যদি তুমি সন্দেহে থাক তবে তোমার পূর্বের কিতাব যারা পাঠ করে, তাদের জিজ্ঞাসা কর।” হজরত মুহম্মদের সময়ের পূর্বের কিতাবগুলো হলো বিশেষত তাওরাত, জবুর ও ইঞ্জিল শরিফ। তৎকালে ইঞ্জিল বিশ্বাসী লোকেরাই অন্যান্য আসমানি কিতাব বিশ্বাস ও অনুসরণ করতো। সুতরাং এখানেও কোরানের দৃষ্টিতে ইঞ্জিল শরিফের গুরুত্ব বুঝানো হয়েছে।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ইঞ্জিল শরিফ ছাড়া ঈসায়ীরা আর কোন্ কোন্ কিতাব বিশ্বাস করে?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

ইঞ্জিল শরিফ ছাড়া, ঈসায়ীরা সকল আসমানি কিতাবই বিশ্বাস করে।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

ঈসা নবির উম্মতদের কিতাবের নাম কিতাবুল মোকাদ্দস। কিতাবুল মোকাদ্দস হলো অনেকগুলো কিতাবের সমন্বয়। কিতাবুল মোকাদ্দস দ্ইুভাগে বিভক্ত; একভাগের নাম আগের কিতাব, যেগুলো ঈসা মসীহের জন্মের আগে নাজেল হয়েছে সেগুলো, যার সংখ্যা ৩৯টি। দ্বিতীয়ভাগের নাম ইঞ্জিল শরিফ। এই ইঞ্জিল শরিফে ২৭খানা কিতাব রয়েছে।

এখন প্রশ্ন হলো, ইঞ্জিল শরিফ ছাড়া ঈসায়ীরা আর কোন্ কোন্ কিতাব বিশ্বাস করে? এর সহজ উত্তর হলো ঈসায়ীরা ইঞ্জিল শরিফ ছাড়া আরো ৩৯খানা কিতাব বিশ্বাস করে। সেগুলো হলো: তাওরাত শরিফের পাঁচটি খণ্ড, যেমন: পয়দায়েশ, হিজরত, লেবীয়, শুমারি, দ্বিতীয় বিবরণ। নবিদের অন্যান্য কিতাবের মধ্যে রয়েছে: ইউসা, কাজীগণ, রূত, ১শামুয়েল, ২শামুয়েল, ১বাদশাহনামা, ২বাদশাহনামা, ১খান্দাননামা, ২খান্দাননামা, উযায়ের, নহিমিয়া, ইষ্টের, আইয়ুব, জবুর শরিফ, মেসাল, হেদায়েতকারী, সোলায়মান, ইশাইয়া, ইয়ারমিয়া, মাতম, হেজকিল, দানিয়াল, হোসিয়া, যোয়েল, আমোস, ওবদিয়া, ইউনুস, মিকাহ্ , নাহুম, হাবাক্কুক, সফনিয়, হগয়, জাকারিয়া ও মালাখি।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ইঞ্জিল শরিফ কি বাতিল কিংবা পরিবর্তিত?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

না, আসমানি কিতাবসমূহ বাতিল কিংবা পরিবর্তন হয় না। ইঞ্জিল শরিফও তার ব্যতিক্রম নয় বরং নাজেল হওয়ার সময় যা ছিল হুবহু তা-ই আছে।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

বলা হয়ে থাকে যে, “ইঞ্জিল শরিফ বাতিল হয়ে গেছে, পরিবর্তিত হয়ে গেছে, বিকৃত হয়ে গেছে ইত্যাদি”। সাধারণত মানুষ এই অভিযোগ করার সময় তিনটি কারণ দেখায়। সেই তিনটি কারণ হলো:

  1. একটি আসমানি কিতাব নাজেল হবার পর পূর্ববর্তী আসমানি কিতাব এমনিতেই তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। অতএব, স্বাভাবিকভাবেই তা বাতিল হয়ে যায়।
  2. কিতাবগুলোকে ধর্মীয় নেতারা তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য পরিবর্তন, পরিবর্ধনের মাধ্যমে বাতিলযোগ্য করে ফেলেছে।
  3. বলা হয়ে থাকে যে, এসব আসমানি কিতাবকে যেভাবে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন ছিল, সেভাবে যতœ ও সংরক্ষণ করা যায়নি।

উপরিউক্ত অভিযোগগুলো সত্য হলে, ঈসায়ীদের ঈমান ও আমলের কোন অস্তিত্ব নেই- একথা বলা অযৌক্তিক হবে না। ঈসায়ীদের ঈমানের ভিত্তি হলো কিতাবুল মোকাদ্দস। এই কিতাবুল মোকাদ্দস যদি সত্যই বিকৃত বা বাতিল হয়ে থাকে, তবে তাদের ঈমানেরই বা মূল্য কী আছে?

একথা আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, আসমানি কিতাবগুলোর একটাও বাতিল বা বিকৃত হয়নি বরং আল্লাহর শাশ্বত ও চিরন্তন কালাম হিসাবে আজও নিখুঁতভাবে টিকে আছে। এবিষয়ে আমাদের যুক্তি তুলে ধরছি:

১। আল্লাহর কালাম পর্যায়ক্রমিকভাবে দেয়া হয়েছে। হজরত ঈসা মসীহ পর্যন্ত যে কালাম নাজেল হয়েছিল তার প্রত্যেকটি কিতাব এবং প্রত্যেকটি সহিফা যখনই দেওয়া হোক না কেন, তা সর্বকালের জন্য এবং সব মানুষের জন্যই প্রয়োজন। এদের বিষয়বস্তু দেখলেই আমরা সে কথা বুঝতে পারি। আগেকার কিতাবের বিষয়বস্ত হলো:

  • ক) আল্লাহ উত্তমরূপে সবকিছু সৃষ্টি করেছেন।
  • খ) শয়তান অহংকারের বশবর্তী হয়ে, আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করল এবং পতিত হলো।
  • গ) হজরত আদমের মধ্যদিয়ে পৃথিবীতে গুনাহ ঢুকল কিন্তু আল্লাহ পবিত্র, তাই গুনাহের বিচার করেন।
  • ঘ) আল্লাহ মহব্বতে পূর্ণ, তাই তিনি গুনাহগার মানুষেকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করেন।
  • ঙ) আল্লাহ গুনাহগারদের জন্য নাজাতদাতা পাঠানোর ওয়াদা করেছেন।
  • চ) তাওরাত কিতাবে বর্ণিত শরিয়ত নয়, মানুষ কেবল ঈমানের দ্বারাই নাজাত পাবে।
  • ছ) আল্লাহর মনোনীত বনি-ইসরাইল জাতির লোক, হজরত দাউদের বংশের মধ্যদিয়েই নাজাতদাতা আসবেন।
  • জ) একজন নিষ্পাপ ব্যক্তি, এক অবিবাহিত মেয়ের গর্ভে জন্মাবেন যার মধ্যদিয়ে নাজাত আসবে।

মানুষের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয় নাজাত। হজরত আদমের গুনাহের ফলে, মানুষ আল্লাহর সান্নিধ্য থেকে পৃথক হয়েছে। এই অবস্থা থেকে নাজাত লাভ করাই মানুষের একান্ত প্রয়োজনীয় বিষয়। তাই বর্ণিত বিষয়গুলো নাজাতকামী প্রত্যেক মানুষের জন্যই প্রয়োজন। আর আগেকার প্রত্যেক কিতাবের মধ্যেই নানাভাবে উপরিউক্ত কথাগুলোই নবিগণ বলে গেছেন।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০