ঈসা নবি কি শ্রেষ্ঠ নবি?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

হ্যাঁ, হজরত ঈসা শুধু শ্রেষ্ঠ নবিই ছিলেন না, তিনি হলেন মানবজাতির একমাত্র সফল উদ্ধারকর্তা।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

সবচেয়ে বেশি লোকের স্বীকৃতি: শ্রেষ্ঠত্ব পরিমাপের মাপকাঠি কী হবে, তা জানা দরকার প্রথমে। যদি বাহ্যিক দিক বিবেচনা করি, তবে বলতে হয় কত বেশিলোক তাঁর মত এবং পথ অবলম্বন করে। এই দিক থেকে নিঃসন্দেহে পৃথিবীতে মসীহের অনুসারী লোকের সংখ্যাই বেশি এবং দিন দিন তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিতাবের দিক থেকে ইঞ্জিল শরিফই আজ পর্যন্ত সর্বাধিক বেশি বিক্রিত এবং আলোচিত পুস্তক। সারা পৃথিবীতে ইঞ্জিল শরিফ নিয়েই গবেষণা হয়েছে সবচেয়ে বেশি এবং সবচেয়ে বেশি সংখ্যক এ সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

বিভিন্ন ধর্মের স্বীকৃতি: স্বীকৃতির দিক বিবেচনা করলে দেখা যায়, ইঞ্জিলধারী লোক ছাড়াও তৌরাতের অনুসারী, জবুরের অনুসারী এবং কোরানের অনুসারীগণ হজরত ঈসাকে নবি হিসেবে মানেন যা অন্য কোন নবি বা মহাপুরুষের ক্ষেত্রে দেখা যায় না। উপরিউক্ত কিতাবগুলোতে হজরত ঈসা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দেওয়া হয়েছে। আগেকার কিতাবগুলোতে হজরত ঈসার আগমন সম্পর্কে বিশদ বিবরণ দেওয়া হয়েছে। তাঁর জন্ম, মৃত্যু এবং পুনরুত্থান সম্পর্কে ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে নবি-পয়গাম্বরগণ পরিষ্কার ভবিষ্যতবাণী করেছেন। কোরান শরিফ হজরত ঈসাকে সম্মানিত করেছে, ইঞ্জিল শরিফ পড়তে এবং তার অনুসারীদের কাছে কোন বিষয়ে জানার আগ্রহ থাকলে প্রশ্ন করতে বলা হয়েছে।

তিনি ইব্রাহিমের চেয়ে শ্রেষ্ঠ: পৃথিবীর একত্ববাদী আল্লাহর সেবাকারী তিনটি জাতিই হজরত ইব্রাহিমকে তাদের রুহানি পূর্বপুরুষ হিসেবে জানে। সেই তিন জাতি হলো, ইহুদি, ঈসায়ী ও মুসলমান। সেই ইব্রাহিমই হজরত ঈসার দিন দেখার আশা করেছিলেন, আর তিনি তা দেখেছিলেন। ঘটনাক্রমে একদিন ইহুদিরা গর্ব করে হজরত ঈসাকে বলেছিল যে, তাদের পূর্বপুরুষ ইব্রাহিমই শ্রেষ্ঠ। তার প্রেক্ষিতে হজরত ঈসা তাদের উপরিউক্ত কথাটি বলেছিলেন। তিনি আরো বলেছিলেন যে, হজরত ইব্রাহিমের জন্মের আগে থেকেই তিনি আছেন।

হজরত মুসার চেয়ে শ্রেষ্ঠ: হজরত মুসা ছিলেন ইসরাইল জাতির অবিসংবাদিত নেতা। তাঁর মধ্যদিয়ে ইসরাইল জাতির মুক্তির সনদ তৌরাত কিতাব রচিত হয়েছিল। এই সনদ হলো পৃথিবীর তাবৎ ধর্মগ্রন্থের সারবস্তু। তিনিই তাদের মিসরের গোলামি থেকে উদ্ধার করে এনেছিলেন এবং ৪০ বছর যাবৎ নেতৃত্ব দিয়ে কেনান দেশে পৌঁছে দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন সেই নেতা, যিনি জীবন বাজি রেখে তাঁর এই জাতির জন্য আল্লাহর কাছে সওয়াল জওয়াব করেছিলেন। তিনি হলেন সেই নেতা যার সাথে আল্লাহ সরাসরি কথা বলতেন। অথচ পাককালাম বলে, মুসা ছিলেন আল্লাহর গোলাম। আর গোলামের মতোই তিনি আল্লাহর কাছে বিশ্বস্ত ছিলেন। কিন্তু আল্লাহর কালাম অনুসারে হজরত ঈসা ছিলেন তাঁর পরিবারের ভার পাওয়া পুত্র। আর পুত্র মানেই হলো অধিকার। তিনি অধিকার নিয়ে কথা বলতেন, শিক্ষা দিতেন ও কাজ করতেন।

ইয়াহিয়ার চেয়ে শ্রেষ্ঠ: হজরত ইয়াহিয়া নবি শ্রেষ্ঠ নবিদের মধ্যে একজন ছিলেন। তিনি আল্লাহর কুদরতিতে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। জীবন যাপনের দিক থেকে সৎ ও নিষ্ঠাবান ছিলেন। হজরত ঈসা নিজেই বলেছেন যে, মানুষের মধ্যে হজরত ইয়াহিয়ার চেয়ে বড় আর কেউ নন। আর সেই বড় নবি ইয়াহিয়াও বলেছেন, “আমি তাঁর জুতোর ফিতার বাধঁন খুলবারও যোগ্য নয়। হজরত ইয়াহিয়া নিজের অবস্থা বুঝতে পেরেই বলেছিলেন, ‘আমাকে ক্ষয় পেতে হবে, তাঁকে বৃদ্ধি পেতে হবে।’ তিনি নিজেকে অস্বীকার করে হজরত ঈসাকে দেখিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘ঐ দেখ, আল্লাহর মেষশিশু যিনি দুনিয়ার পাপভার নিয়ে যান।’ আর একই কারণে হজরত ঈসা যখন নবি ইয়াহিয়ার কাছে তরিকাবন্দি নিতে এসেছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন, “আমারই বরং আপনার কাছে তরিকাবন্দি নেওয়া উচিত ছিল।”

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।