কেন ঈসায়ী হওয়া প্রয়োজন?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

গুনাহ থেকে নাজাত পেয়ে অনন্তকাল আল্লাহর সাথে বেহেস্তে স্থান পাবার জন্য।

ব্যখ্যামূলক উত্তর: ঈসায়ী ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়া ও ঈসায়ী হওয়া এক কথা নয়। ঈসায়ী হওয়া মানে কোন ধর্ম পালন করা নয়। ঈসায়ী হওয়াকে যদি কেউ ধর্মের অন্তর্তুক্ত হওয়া মনে করে, তবে ভুল হবে। হজরত ঈসা নিজে কোন ধর্ম স্থাপন করেননি, বা নিজেও ঈসায়ী হিসেবে পরিচিত ছিলেন না। হজরত ঈসার উপর ঈমান আনার মধ্যদিয়েই মানুষ ঈসায়ী হয়। ঈসায়ী একটি জাতি গোষ্ঠীর নামমাত্র, এতে কোন বিশেষত্ব নেই। কেউ যদি অন্যকোন নাম ব্যবহার করতে চায়, তবে তা হবে তার ব্যক্তিগত ব্যপার। হজরত ঈসা মানুষকে নাম পরিবর্তন, ধর্ম পরিবর্তন কিংবা জাতি পরিবর্তনের কথা বলেন নি। তিনি মন বা হৃদয় পরিবর্তনের কথা বলেছেন। এভাবে তিনি আল্লাহর রাজ্যে আসার দাওয়াত দিয়েছেন। আল্লাহর রাজ্যে ঢুকতে তিনি নতুন জন্মের কথা বলেছেন। তিনি বলেন, নতুন জন্ম না হলে কেউ আল্লাহর রাজ্যে ঢুকতে পারে না। যেহেতু পাপের বেতন মৃত্যু এবং হজরত আদমের অবাধ্যতার মধ্য দিয়ে আমরা সবাই মরে গিয়েছিলাম, সেহেতু হজরত আদমের সাথে আমরাও তাঁর রক্তে জন্মগ্রহণ করে, আল্লাহর রাজ্য থেকে রেরিয়ে গিয়েছিলাম। এখন আল্লাহর রাজ্যে ঢুকতে হলে, তাঁর স্থাপিত ব্যবস্থায় ঈমান আনতে হবে অর্থাৎ হজরত ঈসার কোরবানিতে বিশ্বাস করে, আমাদের নতুন জন্ম লাভ করতে হবে।

ঈসায়ী হওয়া মানে হজরত ঈসাকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করা। এই বিশ্বাস তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট। বিষয় তিনটি হলো, হজরত ঈসার মৃত্যু, কবর এবং পুনরুত্থান।

প্রথমত: হজরত ঈসার মৃত্যু আমাদের ঈমানের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তিনি আমাদের হয়ে মৃত্যু বরণ করেছেন, যে শাস্তি আমাদের পাবার প্রয়োজন ছিল, তিনি আল্লাহর ইচ্ছায় সেই শাস্তি গ্রহণ করেছেন। তাঁর মৃত্যু ছিল আমাদের পাপের কাফফারা। তাই তার মৃত্যুকে যদি আমরা বিশ্বাস না করি, তবে আমাদের বিশ্বাসের বা ঈমানের কোন মূল্যই নেই।

দ্বিতীয়ত: কবর হলো মৃত্যুর নিশ্চয়তা। হজরত ঈসা যে মৃত্যু বরণ করেছিলেন, কবর তার ধ্রুব সত্যতা প্রমাণ করে। হজরত ঈসা আগেই ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন যে, মৃত্যু বরণ করবেন এবং তৃতীয় দিন কবর থেকে উঠবেন। তাঁর এই ঘোষণার কারণে, ক্রুশে দেবার পর তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য সৈন্যরা তাঁর পাঁজরে বর্শা দিয়ে খোঁচা দিয়েছিল এবং সেখান থেকে পানি ও রক্ত বেরিয়ে এসেছিল। মৃত্যু নিশ্চিত হলে, তাকে কবর দেওয়া হয়েছিলে। লেখা আছে, “পরে লাশটি ক্রুশ থেকে নামিয়ে, কাফন দিয়ে জড়ালেন এবং পাথর কেটে তৈরি করা একটি কবরের মধ্যে দাফন করলেন” (ইঞ্জিল শরিফ, লূক ২৩:৫৩)।

তৃতীয়ত: পুনরুত্থান। পুনরুত্থান হলো ঈসায়ী ঈমানের অন্যতম দিক। হজরত ঈসা যদি মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে না উঠতেন, তবে তাঁর ভবিষ্যতবাণীসহ অন্যান্য নবিদের সকল ভবিষ্যৎবাণী মিথ্যা প্রমাণিত হতো। হজরত ঈসার ভবিষ্যতবাণীকে মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য কর্তৃপক্ষ থেকে এই কবর সীলগালা করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আল্লাহর কি অপার লীলা! তখন ভূমিকম্প হলো আর কবরের পাথর সরে গেল। উপড়ে গেলো সব সীলগালা। আল্লাহর ইচ্ছায় হজরত ঈসা কবর থেকে উঠলেন। তিনি তার সাহাবিদের এবং অন্যান্য লোকদের দেখা দিলেন।

হজরত ঈসার মৃত্যু, কবর এবং পুনরুত্থানই হলো ঈসায়ী ঈমানের ভিত্তি। সেই সাথে আল্লাহ এবং তাঁর চরিত্রকে বোঝা এবং বুঝতে পেরে তাঁর দেওয়া উপায় হিসাবে আল্লাহর উপর নির্ভর করাই হলো ঈসায়ী হওয়া। অতএব, জীবন পেতে হলে এবং অনন্তকাল আল্লাহর সাথে থাকতে হলে ঈসায়ী হওয়া প্রয়োজন।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।