হজরত ঈসা নিজে মানুষ হয়ে কীভাবে মানুষকে নাজাত দিতে পারেন?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

তিনি নাজাত দিতে পারেন কারণ তিনিই একমাত্র নিষ্পাপ মানুষ ছিলেন।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

একথা ধ্রুব সত্য যে, হজরত ঈসা একজন মানুষ ছিলেন। ঈসায়ী ইতিহাসে দেখা যায় কেউ কেউ ‘তিনি মানুষ নন, আত্মা কিংবা অন্যকিছু’ হিসেবেও আখ্যায়িত করতেন। কেউ কেউ তাঁকে অতিমানব হিসেবে এমনকি অনেকে তাঁকে জিনদের সমগোত্রীয় কিছু বলে প্রচার করতেন। এখনও বিশ্বব্যাপী হজরত ঈসার অস্তিত্ব নিয়ে নানা মুণির নানা মত রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেখতে হবে কিতাব কি বলে। ইঞ্জিল শরিফে তাঁর যে বংশ তালিকা দেওয়া হয়েছে (লূক ৩:২৩-৩৮) তাতে হজরত ঈসার জাগতিক পিতা ইউসুফ থেকে শুরু করে, হজরত আদম পর্যন্ত চলে গিয়েছেন। মানুষ হিসেবেই তিনি কোন এক মায়ের গর্ভে জন্মেছিলেন, লালিত পালিত হয়েছিলেন, জ্ঞানে ও বয়সে বেড়ে উঠেছিলেন, খাওয়া-দাওয়া করেছিলেন, মানুষের সুখ-দুঃখ অনুভব করেছিলেন, সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতে যোগ দিয়েছিলেন এবং মানুষ হিসেবেই তিনি কষ্টকর মৃত্যু গ্রহণ করেছিলেন। হজরত ঈসা নিজেও নিজেকে ইবনেআদম বা মানবপুত্র বলতেন।

এখন প্রশ্নের মৌলিক অংশ হলো, মানুষ হয়েও কী করে হজরত ঈসা মানুষকে গুনাহ থেকে নাজাত দিতে পারেন। হজরত ঈসা নিজেই বলেছেন যে, অন্ধ অন্ধকে পথ দেখাতে পারে না, দুইজনই গর্তে পড়ে। একজন মানুষও তেমনি আর একজন মানুষকে নাজাত দিতে পারে না, কারণ মানুষ পাপী। হজরত ঈসা যদি একজন মানুষ হন তবে কীভাবে তিনি নাজাত দেবেন? এর রহস্য এখানেই যে, হজরত ঈসা একজন আসল মানুষ অর্থাৎ খাঁটি মানুষ ছিলেন, পাপী ছিলেন না। মানুষকে আল্লাহ যে গুণ (সুরত ও সিফত) দিয়ে সৃষ্টি করেছিলেন হজরত ঈসার মধ্যে তার সবটুকুই ছিল। অথচ সুরত থাকলেও আসল জিনিস যে সিফত তা হজরত আদম অর্থাৎ প্রথম মানুষ অবাধ্যতার মধ্য দিয়ে হারিয়ে ফেলেছিলেন। আর হারিয়ে ফেলেছিলেন বলে, অন্যকে নাজাত দেওয়া তো দূরের কথা নিজেই আল্লাহর কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন। ফলে মানব বংশে যারা জন্ম লাভ করেছে, তাদের প্রত্যেকেই হজরত আদমের মতো গুনাহগার হয়েছে। হজরত ঈসা মানব বংশে জন্ম গ্রহণ করলেও আল্লাহর অসীম কুদরতের ফলে তাঁকে পাপ স্পর্শ করতে পারে নি।

হজরত ঈসা ছিলেন নিষ্পাপ মানুষ। আর এই নিষ্পাপ মানুষ স্বেচ্ছায় নিজের প্রাণ দিতে রাজি হয়েছিলেন যেন আমাদের উদ্ধার করতে বা নাজাত দিতে পারেন। অন্যান্য নবিগণ শরিয়তের কথা বলেছেন, শিক্ষা দিয়েছেন, আশ্চর্য কাজ করেছেন কিন্তু কেউই মানুষের নাজাতের জন্য কোরবানি হননি। অবশ্য এটা তাঁদের কাজ এবং দায়িত্বও ছিল না। এই কারণে ফেরেশ্তা বিবি মরিয়মের কাছে গিয়ে, তাঁর নামও রেখেছিলেন ঈসা, যার মানে নাজাতদাতা। রাখালদের সংবাদ দিতে গিয়ে ফেরেশতা বলেছিলেন, ‘তোমাদের জন্য আজ দাউদের শহরে উদ্ধারকর্তা জন্মেছেন’। সুতরাং তিনি নাজাত দিতে না পারলে মানুষের নাজাত আর কার দ্বারা সম্ভব হবে? আমরা গান গাই, ‘আর কোন নাম নাই যে নামে নাজাত পাই’।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।