ঈসায়ী, ইহুদি ও মুসলমানদের আল্লাহর মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কি?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

এককথায় এই তিন জাতির আল্লাহ একই আল্লাহ, তবে প্রত্যেক জাতি তাদের মনস্তাত্ত্বিক ধারণায় আল্লাহর বিভিন্ন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের উপর গুরুত্ব দিয়ে থাকে অর্থাৎ এক এক জাতি আল্লাহর বিশেষ বিশেষ গুণের উপর জোর দেয়।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

আল্লাহ একই আল্লাহ। প্রত্যেক জাতির জন্য আলাদা কোন আল্লাহ আছে বলে ঈসায়ীরা বিশ্বাস করে না। ঈসায়ী, ইহুদি এবং মুসলমানদের আল্লাহ যে অভিন্ন তাতে কোন সন্দেহ নেই। এই তথ্য কিতাব অনুসারেই সত্য। ঈসায়ী, ইহুদি এবং মুসলমানরা প্রায় একই মূল সত্যে বিশ্বাসী; আর সেই বিশ্বাস হলো আল্লাহ এক এবং অদ্বিতীয়। তবে এই ত্রিবিধ জাতিগণের আচরণ অনুযায়ী দেখা যায় যে, ঈসায়ীগণ আল্লাহকে প্রেমময় আল্লাহ ও ধার্মিক আল্লাহ, বলে জানে এবং তারা মানে মাবুদ মমতায়পূর্ণ ও দয়াময়, তিনি সহজে রেগে ওঠেন না, তাঁর অটল মহব্বতের সীমা নেই। ইহুদিগণ নিয়মতান্ত্রিক আল্লাহ এবং মুসলমানগণ একদিকে রহমতের আল্লাহ আরেকদিকে কাহারু বা কঠোর আল্লাহ হিসেবেই মানে। এগুলো হলো এক এক জাতির চিন্তা, দর্শন ও ধর্মীয়-সামাজিক চরিত্র অনুসারে আল্লাহ সম্পর্কে তাদের চিন্তাভাবনা। আল্লাহর উপরে বর্ণিত তিনটি গুণই অপরিহার্য। আল্লাহ প্রেমময় তাতে যেমন সন্দেহ নেই তেমনি আল্লাহ সবকিছুকে নিয়মের মধ্যে আবদ্ধ রেখেছেন তা-ও অস্বীকার করার উপায় নেই; আবার কোন কোন বিষয়ে আল্লাহ কঠোর হন তা-ও ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে দেখতে পাই। কিন্তু কোন একটি বিষয়ে জোর দিতে গিয়ে, আল্লাহর অপরাপর গুণগুলোকে এড়িয়ে যাওয়াও কিতাব সম্মত নয়। মনে রাখতে হবে যে, এই তিন গুণাবলী ছাড়াও আল্লাহর আরও অনেক গুণ রয়েছে যা মানব জাতির কল্যাণে সদাসর্বদা নিয়োজিত। উদাহরণস্বরূপ ‘সত্য’, ‘ন্যায়পরায়ণতা’, ‘বিশ্বস্ততা’ ও ‘ধার্মিকতা’ ইত্যাদিও আল্লাহর প্রধান প্রধান গুণাবলী। এ গুণগুলো না থাকলে মানবজাতি বহুকাল আগেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত।

ঈসা মসীহ সম্পর্কে: যুগে যুগে যেসব নবি-পয়গাম্বর এ দুনিয়াতে এসেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ঈসা মসীহের নাম অনন্য সাধারণ। প্রায় দু’হাজার বছর আগে, তাঁর অসাধারণ জন্ম, অলৌকিক কাজ, বিস্ময়কর শিক্ষা, অবিস্মরণীয় মৃত্যু এবং অকল্পনীয় পুনরুত্থান ঈসা মসীহ সম্পর্কে মানুষের মনে বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছিল। অতঃপর যুগে যুগে মানুষ প্রশ্ন করেছে তিনি কে? আজ দু’হাজার বছর পরেও মানুষ নানা প্রশ্ন করছে, তিনি আসলে কে? কারণ নবিরা যেসব আশ্চর্য কাজ করেছিলেন তার চেয়ে তিনি আরো বেশি কিছু করেছিলেন। নবিরা যেভাবে শিক্ষা দিতেন তার চেয়ে তিনি আরো বেশিদূর এগিয়ে গিয়েছেন। মৃত্যুর মধ্যদিয়ে সব নবিই জীবনের ইতি টেনেছেন কিন্তু সেই মৃতুকেও তিনি পরাজিত করেছেন। মসীহের জন্মের আগে তাঁর সম্পর্কে ভবিষ্যতবাণী করে গিয়েছিলেন এবং তাঁর জন্ম ও পুনরুত্থানের পর শতশত মনীষী তাঁর সম্পর্কে কথা বলেছেন, অনেকে তাঁর উপর ঈমান এনেছেন। আজো তাঁর সম্পর্কে সাধারণ মানুষ যেসব প্রশ্ন করে তার কিছু উত্তর নিম্নে দেওয়া হলো।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।