ঈমানের মধ্যদিয়ে নাজাত পেলে শরিয়ত কেন দেওয়া হয়েছিল?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

শরিয়ত দেওয়া হয়েছিল, মানুষ যে গুনাহগার তা যেন তারা বুঝতে পারে।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

হজরত মুসার মধ্য দিয়েই প্রথম লিখিত শরিয়ত দেওয়া হয়েছিল। এর আগে মৌখিকভাবে আল্লাহ মানুষকে প্রয়োজনীয় হুকুম দিতেন এবং তা পালনের জন্য তাগিদ দিতেন। আদন বাগানে মানুষের জন্য একটি মাত্র আদেশ ছিল, আর মানুষ সেই একটি আদেশই পালন করতে ব্যর্থ হয়েছিল। অতঃপর লিখিত শরিয়ত দেবার আগে, মানুষকে আল্লাহ বিভিন্নভাবে তাঁর ইচ্ছার কথা জানাতেন কিন্তু মানুষ কোনভাবেই তাঁর ইচ্ছামতো চলতো না। হাবিল কাবিল থেকে শুরু করে, বাবিলের ভাষাভেদ, নুহ নবির সময়কার মহাবন্যা, সাদুম ও আমুরা শহরের বিনাশ প্রমাণ করে যে, মানুষ শরিয়ত পালন করতে পারে না। সবচেয়ে বড় কথা হলো, মানুষ যে গুনাহগার একথাও মানুষ উপলব্ধি করতে পারে না। মানুষের এই বোধ বা উপলব্ধি জাগানোর জন্যই আল্লাহ পরে লিখিত শরিয়ত দিয়েছিলেন।

হজরত পৌল বলেন, “…এ কথা ঠিক যে, শরিয়ত না থাকলে গুনাহ কি তা আমি জানতে পারতাম না। “লোভ করো না”, শরিয়ত যদি এই কথা না বলতো, তবে লোভ কি তা আমি জানতাম না। গুনাহ সেই হুকুমের সুযোগ নিয়ে, আমার মধ্যে সব রকম লোভ জাগিয়েছে। কারণ শরিয়ত না থাকলে, গুনাহ যেন মরার মতো পড়ে থাকে। আমার জীবনে শরিয়ত আসবার আগে আমি বেঁচেই ছিলাম, কিন্তু সেই হুকুম আসবার সঙ্গে সঙ্গে গুনাহও বেঁচে উঠল আর আমারও মৃত্যু ঘটল। যে হুকুমের ফলে জীবন পাবার কথা, তা আমার জন্য মৃত্যু নিয়ে আসল” (রোমীয় ৭:৭-১০)। হ্যাঁ, সত্যি তাই। শরিয়ত দেওয়া হয়েছিল যেন আমরা আমাদের অবস্থা বুঝতে পারি। শরিয়ত আয়নার মতো, আয়না সমস্যা দেখাতে পারে কিন্তু সমস্যা সমাধান করতে পারে না। শরিয়ত দেওয়া হয়েছে যেন আমরা আমাদের অন্তরের চিত্রটা দেখতে পাই, দুষ্ট ক্ষতসমূহ যেন ধরা পড়ে, আমরা যেন আমাদের পাপ বুঝতে পারি। শরীরের রোগ ধরতে পারাটা অবশ্যই বড় কথা; কিন্তু তা-ই কি যথেষ্ট? নিশ্চয় না। তার জন্য চিকিৎসা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ঔষধ সেবন করলেই কেবল রোগের প্রতিকার হয়।

মানুষ যখন বুঝতে পারে সে গুনাহগার এবং কোনভাবে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে না, তখন তার জন্য প্রয়োজন এর প্রতিকার করা। হজরত ঈসা মসীহ এই জন্যই দুনিয়াতে এসেছিলেন। একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে। তিনি মানুষের জন্য কোরবানি হতে এসেছিলেন। আর সেই কাজ তিনি ক্রুশের উপরে করেছিলেন। যুগে যুগে কোরবানিই হলো আসল এবাদত। হজরত নুহ, ইবরাহিম, ইসহাক, ইয়াকুব, দাউদ সকলেই পশু কোরবানি দিয়েছিলেন কিন্তু সেই পশু কোরবানি ছিল আসল কোরবানির চিহ্নমাত্র। সেই কারণে আল্লাহপাক হজরত ইবরাহিমকে নিজের প্রিয় পুত্র কোরবানি দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। আসলে পুত্রকে কোরবানি দেওয়াও হজরত ইবরাহিমের জন্য আল্লাহর উদ্দেশ্য ছিল না, ছিল ঈমানের পরীক্ষা। সেই জন্য কোন অস্থায়ী ও অযোগ্য কোরবানি নয়, নিজের পবিত্র রক্ত দিতে, আসল কোরবানি নিয়ে এসেছিলেন হজরত ঈসা মসীহ। তাঁর উপর কেবল ঈমান এনেই গুনাহ থেকে নাজাত লাভ করা যায়।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।