কোন ব্যক্তি ঈসায়ী হলে কি তাকে ঘরবাড়ি ত্যাগ করতে হয়?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

না, কোন ব্যক্তি ঈসায়ী হলে সাধারণত ঘরবাড়ি ত্যাগ করতে হয় না।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

কোন ব্যক্তি যদি নিজ বাড়িতে থেকে ঈসায়ী ঈমান-আকিদা ঠিক রেখে চলতে পারে, তবে তার বাড়ি ত্যাগ করা উচিত নয়। বরং যতদূর সম্ভব ঈমানদার ব্যক্তি তার পরিবারের সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে চলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, শুধু ভাষা ও সংস্কৃতিগত কারণে বাড়ি থেকে বের হয়ে, অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছে।

উদাহরণ: যেমন- কালাম নামের এক ব্যক্তি এক খ্রিস্টান ভদ্রলোকের কাছ থেকে সুখবর পেয়ে এবং পড়াশুনা করে জানতে পেরেছে যে, সে পাপী। সে আরো পড়াশোনা করে, কোরান ও বাইবেলের সাথে মিলিয়ে দেখে। বাইবেলের শব্দগুলো কালামের কাছে অপরিচিত মনে হয়। সে ভাবে, সে ভুল করেছে; আবার তার ফিরে যাওয়া উচিত। তবু সত্য তার কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। অতঃপর ভাষাগত ও সামাজিক নিয়মকানুনের উপর কিছু সন্দেহ থাকলেও সে ঈসাকে নাজাতদাতা হিসাবে বিশ্বাস করে, যদিও তাকে বলা হয়েছে যে, সে যিশুকেই বিশ্বাস করছে। সেই খ্রিস্টান ভদ্রলোকের কৃষ্টি-সংস্কৃতি অনুসারে, কালাম বাইবেল পড়ে, গির্জায় যেতে শুরু করে। অতঃপর আল্লাহকে ঈশ্বর, ঈসাকে যিশু, নবিকে ভাববাদী, কিতাবুল মোকাদ্দসকে বাইবেল এবং পানিকে জল ইত্যাদি বলা শুরু করে। কিছুদিন স্থানীয় পাদ্রির কাছ থেকে শিক্ষা নেবার পর, সে বাপ্তিষ্ম গ্রহণ করে; তার নাম পরিবর্তন করে, একটি ইংলিশ নাম যুক্ত করে দেয়া হয়। তার নাম হয় মাইকেল। তখন থেকে তাকে বলা হলো যে, সে খ্রিস্টান হয়ে গেছে। সে আর মুসলমান নয়; সে যেকোন কিছু খেতে পারে। অর্থাৎ খ্রিস্টান হবার পর তার জন্য সামাজিক নিয়মকানুনসহ ধর্মকর্ম বলতে কিছু নেই। যেমন নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ইত্যাদি এবং হারাম-হালাল বলতেও কিছু নেই; যেমন কাঁকড়া, কাশিম, শুকর ইত্যাদি; অর্থাৎ সে এখন থেকে সবই খেতে পারে।

কালাম সরল বিশ্বাসে এগোয়, বাড়িতে গিয়ে একই সাক্ষ্য দেয়। রুহানি পরিবর্তনের চেয়েও খ্রিস্টান সমাজের ইচ্ছায় বাহ্যিক কর্মকাণ্ডের উপর সে বেশি জোর দেয়। বাড়ি গিয়ে অন্তরে কী পরিবর্তন হয়েছে বা সে যে গুনাহের ক্ষমা পেয়েছে তার সাক্ষ্য না দিয়ে, নামাজ আর পড়তে হবে, না, রোজা আর রাখতে হবে না, এমনকি এখন থেকে হারাম জিনিস সে খেতে পারবে তারই সাক্ষ্য দেয়। ফলে তার মা’বাবা খুবই বিরক্ত হয়ে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। যুবক অবস্থায় এই পরিস্থিতি তার জন্য ভয়াবহ। সে ছাত্র, কে তাকে লেখাপড়া করার সুযোগ দেবে, কে-ই বা তার ভরণ-পোষণ করবে? ফলে, পরগাছার মতো কাউকে ধরে সে বাঁচতে চায়; এখানে ওখানে গিয়ে চাকরি খোঁজে, এভাবে সে পরনির্ভশীল হয়ে ওঠে। কালাম না যেতে পারে তার পরিবারের কাছে, পুরোপুরি না মিশতে পারছে খ্রিস্টান সমাজের সাথে। কোনরকম বাঁচার মতো একটি খ্রিস্টান প্রতিষ্ঠানে চাকরি খুঁজে পেয়ে, কিছু খ্রিস্টান লোকের সাথে পরিচিত হয়ে উঠলেও মনের সংগোপনে সে একাকী জীবন যাপন করতে থাকে।

এই অবস্থা অনাকাঙ্কিত। সে যদি বাহ্যিক বিষয় নিয়ে সাক্ষ্য না দিতো, সামাজিক নিয়মকানুনের উপর বেশি কথা না বলতো, তবে পরিপক্ক এবং স্বাবলম্বী হয়ে ওঠা পর্যন্ত তার বাড়িতে থেকেই সে ঈসায়ী ঈমানদার জীবন যাপন করতে পারতো। তাকে যা করতে হতো তা হলো, ঈসাকে যিশু না বলে ঈসা বলতে থাকা এবং ঈশ্বর, ভাববাদি, জল ইত্যাদি না বলে, আগে যে ভাষা সে ব্যবহার করতো তা করতে থাকা। সে যদি অনাকাক্সিক্ষত ভাষা ও খাবারের মতো সামাজিক নিয়মকানুনগুলো আগের মতোই মেনে চলতো, নাম পরিবর্তন না করতো, তবে তাকে কেবল সাধারণ ধর্মকর্ম না করার জন্য বাড়ি থেকে বের হতে হতো না। কারণ মুসলমানদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি লোক ধর্মকর্ম ঠিকভাবে করে না।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।