Category Archives: সামাজিক বিষয়

যারা ধর্মান্তরিত হয় তারা কি জাহান্নামি?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

না, যারা ধর্মান্তরিত হয়, তারা জাহান্নামি নয়।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

ধর্মান্তর মানে একধর্ম থেকে অন্যধর্মে যাওয়া বা দীক্ষিত হওয়া। পৃথিবীর সকল ধর্মই মঙ্গলের কথা বলে, বলে সাম্য ও সুন্দরের কথা। কেউ যে পরিবেশে ও যে ধর্মের আওতাধীন পরিবারে জন্মগ্রহণ করে, সে সেই ধর্ম পালন করে। একসময় হয়তো কোন ব্যক্তির জন্মগ্রহণ করা পরিবারের ধর্ম ভালো নাও লাগতে পারে এবং সাথেসাথে অন্য কোন ধর্ম তার কাছে ভালো লাগতে পারে ও যৌক্তিক মনে হতে পারে। যদি কারো কোন ধর্মের বিধিবিধান ও সেই ধর্মীয় লোকদের আচার ব্যবহার ভালো লাগে তবে সে সেই ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে পারে। এটি মানুষের মৌলিক অধিকার। কোনকিছু জোর করে ভালো লাগানো যায় না; ভালো লাগার বিষয়টি মন থেকে আসে, আসে সাধারণ বিশ্বাস থেকে।

জাহান্নামি হবার প্রশ্নটি ধর্মান্তরিত হবার সাথে আসে না। কারণ মানুষ সাধারণত ভালো উদ্দেশ্য নিয়েই ধর্মান্তরিত হয়। ধর্মান্তরিত হলে যদি সত্যই মানুষ জাহান্নমি হয়, তবে নবি পয়গাম্বরগণও জাহান্নাম থেকে রেহাই পাবেন না। কারণ অনেক নবি আল্লাহর সুসংবাদ পেয়ে তাদের পূর্বের ভুল ধর্মীয় বিশ্বাস ত্যাগ করে, আল্লাহর দেওয়া ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন। যদি ধর্মান্তরিত হলে জাহান্নামি হতে হয়, তবে পাক-ভারত উপমহাদেশের সিংহভাগ লোকই জাহান্নামে যাবে, কারণ তারা একসময় পৌত্তলিক ধর্ম ছেড়ে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন।

তবে চরম সত্য কথা হলো, ধর্মান্তরিত হয়ে যেমন কেউ জাহান্নামি হয় না, তেমনি এর মধ্যদিয়ে বেহেশতে যাবার অধিকারও পায় না। বেহেশতে যাবার জন্য ধর্মান্তর নয়, প্রয়োজন বিশ্বাসান্তর। সেই বিশ্বাস কোন ধর্মকর্মে নয়, বরং আল্লাহর পরিকল্পনা অনুযায়ী মসীহের কোরবানিতে বিশ্বাস। কারণ আগেই বলা হয়েছে যে, মানুষ কোন ধর্মই যথার্থরূপে পালন করতে পারে না। এজন্যেই আল্লাহ হজরত ঈসা মসীহকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছিলেন যেন যারা তাঁর কাফফারামূলক কোরবানিতে বিশ্বাস করে তারা অনন্তজীবন লাভ করে।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসায়ী হলে কি নারী, বাড়ি, গাড়ি ইত্যাদি পাওয়া যায়?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

না, ঈসায়ী হলে নারী, বাড়ি, গাড়ি পাওয়া যায় না।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

ঈসায়ী হলে নারী, বাড়ি, গাড়ি পাওয়া তো যায়ই না বরং ক্ষেত্রবিশেষ যা আছে তাও ত্যাগ করতে হয়। সাধারণত ঈসায়ী হওয়ার পর পারিবারিক ও সামাজিক চাপ এতই বৃদ্ধি পায় যে, কোন কোন ঈসায়ী তার যা আছে তা-ও ত্যাগ করে ঈমানের পথে চলতে বাধ্য হয়। ঈসায়ী হওয়ার বিষয়টি বাহ্যিক জিনিস পত্রের উপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে রুহানি অবস্থার উপর। মানুষের জীবনে নারী, বাড়ি কিংবা গাড়িই বড় কথা নয়, বড় কথা হলো নাজাত, অনন্ত জীবনের নিশ্চয়তা ও সুখ। হজরত ঈসার উপর ঈমান আনার মধ্য দিয়ে, মানুষ সেই নিশ্চয়তা ও সুখ লাভ করে। সুতরাং তখন পার্থিব জীবনের ভোগবিলাস তার কাছে বড় হয়ে দেখা দেয় না।

একথাও ঠিক যে, ঈসায়ী হওয়া মানে আল্লাহর সন্তান হওয়া এবং আল্লাহর সন্তানকে আল্লাহ ্িনজেই দেখাশোনা করেন। ফলে ঈসায়ী হবার পর যে কেবল দুঃখ-কষ্ট নেমে আসে তা নয়, তার সাথে আল্লাহর অপার রহমতও তার উপর বর্র্তায়। তিনি আল্লাহর রহমতেই তার প্রয়োজনীয় জিনিস তিনি পান। আল্লাহ আকাশ থেকে তাঁর বান্দাদের জন্য দান ফেলে দেন না, তিনি অন্য বান্দাদের অন্তরে কথা বলেন এবং সেইভাবে অন্য কোন ঈসায়ী ঈমানদার আল্লাহর সাহায্য পায়। এই দিক থেকে কোন ঈসায়ী আর এক ঈসায়ীকে দয়াপরবশ হয়ে কিছু দিতেও পারেন। প্রথমিক যুগে সমাজের ঈমানদারেরা পরস্পর পরস্পরকে সহায়তা করতেন, জীবনের সকল কিছুতে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ থাকতেন।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

কোন ব্যক্তি ঈসায়ী হলে কি তাকে ঘরবাড়ি ত্যাগ করতে হয়?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

না, কোন ব্যক্তি ঈসায়ী হলে সাধারণত ঘরবাড়ি ত্যাগ করতে হয় না।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

কোন ব্যক্তি যদি নিজ বাড়িতে থেকে ঈসায়ী ঈমান-আকিদা ঠিক রেখে চলতে পারে, তবে তার বাড়ি ত্যাগ করা উচিত নয়। বরং যতদূর সম্ভব ঈমানদার ব্যক্তি তার পরিবারের সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে চলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, শুধু ভাষা ও সংস্কৃতিগত কারণে বাড়ি থেকে বের হয়ে, অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছে।

উদাহরণ: যেমন- কালাম নামের এক ব্যক্তি এক খ্রিস্টান ভদ্রলোকের কাছ থেকে সুখবর পেয়ে এবং পড়াশুনা করে জানতে পেরেছে যে, সে পাপী। সে আরো পড়াশোনা করে, কোরান ও বাইবেলের সাথে মিলিয়ে দেখে। বাইবেলের শব্দগুলো কালামের কাছে অপরিচিত মনে হয়। সে ভাবে, সে ভুল করেছে; আবার তার ফিরে যাওয়া উচিত। তবু সত্য তার কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। অতঃপর ভাষাগত ও সামাজিক নিয়মকানুনের উপর কিছু সন্দেহ থাকলেও সে ঈসাকে নাজাতদাতা হিসাবে বিশ্বাস করে, যদিও তাকে বলা হয়েছে যে, সে যিশুকেই বিশ্বাস করছে। সেই খ্রিস্টান ভদ্রলোকের কৃষ্টি-সংস্কৃতি অনুসারে, কালাম বাইবেল পড়ে, গির্জায় যেতে শুরু করে। অতঃপর আল্লাহকে ঈশ্বর, ঈসাকে যিশু, নবিকে ভাববাদী, কিতাবুল মোকাদ্দসকে বাইবেল এবং পানিকে জল ইত্যাদি বলা শুরু করে। কিছুদিন স্থানীয় পাদ্রির কাছ থেকে শিক্ষা নেবার পর, সে বাপ্তিষ্ম গ্রহণ করে; তার নাম পরিবর্তন করে, একটি ইংলিশ নাম যুক্ত করে দেয়া হয়। তার নাম হয় মাইকেল। তখন থেকে তাকে বলা হলো যে, সে খ্রিস্টান হয়ে গেছে। সে আর মুসলমান নয়; সে যেকোন কিছু খেতে পারে। অর্থাৎ খ্রিস্টান হবার পর তার জন্য সামাজিক নিয়মকানুনসহ ধর্মকর্ম বলতে কিছু নেই। যেমন নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ইত্যাদি এবং হারাম-হালাল বলতেও কিছু নেই; যেমন কাঁকড়া, কাশিম, শুকর ইত্যাদি; অর্থাৎ সে এখন থেকে সবই খেতে পারে।

কালাম সরল বিশ্বাসে এগোয়, বাড়িতে গিয়ে একই সাক্ষ্য দেয়। রুহানি পরিবর্তনের চেয়েও খ্রিস্টান সমাজের ইচ্ছায় বাহ্যিক কর্মকাণ্ডের উপর সে বেশি জোর দেয়। বাড়ি গিয়ে অন্তরে কী পরিবর্তন হয়েছে বা সে যে গুনাহের ক্ষমা পেয়েছে তার সাক্ষ্য না দিয়ে, নামাজ আর পড়তে হবে, না, রোজা আর রাখতে হবে না, এমনকি এখন থেকে হারাম জিনিস সে খেতে পারবে তারই সাক্ষ্য দেয়। ফলে তার মা’বাবা খুবই বিরক্ত হয়ে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। যুবক অবস্থায় এই পরিস্থিতি তার জন্য ভয়াবহ। সে ছাত্র, কে তাকে লেখাপড়া করার সুযোগ দেবে, কে-ই বা তার ভরণ-পোষণ করবে? ফলে, পরগাছার মতো কাউকে ধরে সে বাঁচতে চায়; এখানে ওখানে গিয়ে চাকরি খোঁজে, এভাবে সে পরনির্ভশীল হয়ে ওঠে। কালাম না যেতে পারে তার পরিবারের কাছে, পুরোপুরি না মিশতে পারছে খ্রিস্টান সমাজের সাথে। কোনরকম বাঁচার মতো একটি খ্রিস্টান প্রতিষ্ঠানে চাকরি খুঁজে পেয়ে, কিছু খ্রিস্টান লোকের সাথে পরিচিত হয়ে উঠলেও মনের সংগোপনে সে একাকী জীবন যাপন করতে থাকে।

এই অবস্থা অনাকাঙ্কিত। সে যদি বাহ্যিক বিষয় নিয়ে সাক্ষ্য না দিতো, সামাজিক নিয়মকানুনের উপর বেশি কথা না বলতো, তবে পরিপক্ক এবং স্বাবলম্বী হয়ে ওঠা পর্যন্ত তার বাড়িতে থেকেই সে ঈসায়ী ঈমানদার জীবন যাপন করতে পারতো। তাকে যা করতে হতো তা হলো, ঈসাকে যিশু না বলে ঈসা বলতে থাকা এবং ঈশ্বর, ভাববাদি, জল ইত্যাদি না বলে, আগে যে ভাষা সে ব্যবহার করতো তা করতে থাকা। সে যদি অনাকাক্সিক্ষত ভাষা ও খাবারের মতো সামাজিক নিয়মকানুনগুলো আগের মতোই মেনে চলতো, নাম পরিবর্তন না করতো, তবে তাকে কেবল সাধারণ ধর্মকর্ম না করার জন্য বাড়ি থেকে বের হতে হতো না। কারণ মুসলমানদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি লোক ধর্মকর্ম ঠিকভাবে করে না।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

যৌনসংক্রান্ত ব্যাপারে কি ঈসায়ীদের কোন বাচবিচার নেই? তারা কি নিয়মসিদ্ধ বিয়ে করে?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

ঈসায়ীরা নিয়মসিদ্ধ বিয়ে করে।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

পাককালাম অনুসারে ঈসায়ীদের কোন স্ত্রীলোকের প্রতি লোভ পর্যন্ত না করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ইঞ্জিল শরিফে ঈসায়ীদের শরীরকে আল্লাহর থাকবার ঘর বলা হয়েছে। সাবধান করা হয়েছে, সেই ঘর যেন কোনভাবে অপপিত্র করা না হয়। আল্লাহর কালামের অবাধ্য হয়ে, কেউ যদি বিয়ের আগে যৌনাচার করে, তবে তা হবে ব্যভিচার; যা আল্লাহ ঘৃণা করেন। এ ধরনের কাজের প্রতি কোন কিতাবি সমর্থন নেই। ঈসায়ীদের ক্ষেত্রে ব্যভিচার বিষয়ে কঠিন শিক্ষা রয়েছে। হজরত ঈসার শিক্ষা অনুযায়ী, ব্যভিচার করলেই যে ব্যভিচার হয় তা নয় বরং কারো প্রতি কামনার দৃষ্টিতে দেখলেই ব্যভিচারের দোষে দোষী হয়। অতএব, বোঝা যায় যে, যৌন সংক্রান্ত ব্যাপারে ঈসায়ীদের জন্য অবশ্যই কঠিন বাধ্যবাধকতা আছে।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসায়ীরা কি মানুষকে টাকা দিয়ে ঈসায়ী বানায়?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

না, ঈসায়ীরা মানুষকে টাকা দিয়ে ঈসায়ী বানায় না।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

ঈসায়ী বানানোর বিষয় নয়। কাউকে ঈসায়ী বানানো যায় না। কোন ব্যক্তি যখন বুঝতে পারেন যে, আল্লাহ পবিত্র এবং ধার্মিক কিন্তু মানুষ হিসেবে তিনি গুনাগাহর, সাথে সাথে একথাও বুঝতে পারেন যে, হজরত ঈসা তার গুনাহর শাস্তি নেবার জন্য মৃত্যু বরণ করে, কবরস্থ হয়েছে এবং কবর থেকে পুনরুত্থিত হয়েছেন। যখন এ বিশ্বাসে তাঁর উপর ঈমান আনেন তখনই তিনি ঈসায়ী হন। ঈসায়ী হওয়া অন্তরের বিষয়, বাহ্যিক বিষয় এর মাপকাঠি নয়। এছাড়া টাকার লোভে যে ঈসায়ী হয়, সে প্রকৃত ঈসায়ী নয়। যে প্রকৃত ঈসায়ী হয়, তাকে বানাতে হয় না, সে বুঝেশুনেই ঈসায়ী হয়।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

একজন ঈসায়ী কি যে কাউকে বিয়ে করতে পারে?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

একজন প্রকৃত ঈসা যে কাউকে বিয়ে করতে পারে না।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

মানুষ সামাজিক জীব। সমাজের আর দশজনের সাথে মিলেমিশে চলাই স্বাভাবিক। প্রত্যেক সমাজের মধ্যে কিছু লিখিত, কিছু অলিখিত নিয়ম কানুন আছে। মানুষ সেসব নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। জেনেশুনে কিংবা অভ্যস্ত হওয়ার ফলে, মনের অজান্তেই মানুষ সামাজিক নিয়মগুলো পালন করে। ঈসায়ীরাও যে যেখানে থাকুক না কেন সেই সমাজের রীতিনীতি তাদের মেনে চলা উচিত। মনে রাখতে হবে, সমাজে অনেক কর্মকাণ্ড আছে যা কিতাব সমর্থন করে না, তা পালন করতে গিয়ে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে নেমে আসে দুঃসহ যন্ত্রণা। সমাজ মানুষের মঙ্গলের জন্য, আবার একটি ছোট্ট ভুলের জন্য সেই সামাজিক নিয়মই মানুষের জীবনে চরম অশান্তি ডেকে আনে। বিয়ে একটি সামাজিক অনুষ্ঠান। কিন্তু বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা প্রধানত ধর্মগত, অতঃপর আইনগত।

ধর্মীয় বিশ্বাস: প্রত্যেক মানুষ তার নিজের ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে চলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এমনকি প্রগতিবাদী লোকেরাও সভা সমিতিতে প্রগতির কথা বললেও দেখা যায়, ধর্মীয় প্রশ্নে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনাকাঙ্খিত আচরণ প্রকাশ পায়। মুষ্টিমেয় নাস্তিক শ্রেণীর কথা বাদ দিলে, আদিকাল থেকেই মানুষ সমাজের কোন না কোন ধর্মীয় মূল্যবোধ নিয়েই জীবনযাপন করে। ধর্মীয় মূল্যবোধের কথা যখন বলা হয়, তখন বিভিন্ন ধর্মের কথা আসে। পৃথিবীতে এমন হাজারো প্রমাণ আছে যে, একই ধর্মের অনুসারী হয়েও কিছু ছোটখাটো বিষয়ে অমতের কারণে নিজেরা কলহ করে লক্ষলক্ষ লোক প্রাণ দিয়েছে। আমরা প্রোটেস্টান এবং রোমান ক্যাথলিকদের ধর্মযুদ্ধ, এ্যাংলিক্যান-প্রেসবিটারিয়ানদের দ্বন্দ্বের কথা জানি; জানি উমাইয়া-আব্বসীয় বংশের যুদ্ধের কথা, শিয়া-সুন্নি-ওহাবি-আহমদিয়া-ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয় ইত্যাদি সম্প্রদায়ের বিয়োগান্ত পরিণতির কথা তো বলাই বাহুল্য। এ থেকে বোঝা যায় যে, মানুষ তার মনের গোপনে একটি নিজস্ব ধর্মীয় বিশ্বাসকে লালন করে। কিন্তু বিয়ের ক্ষেত্রে দেখা যায়, পাত্র বা পাত্রী পছন্দ হলে, কোন কোন লোক কিছুদিনের জন্য ধর্মীয় মূল্যবোধকে জলাঞ্জলি দেয়। আর নিজের ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত না হলেও পছন্দসই পাত্রপাত্রীকেই বিয়ে করে।

পরিণাম: আপাতদৃষ্টিতে ভাল মনে হলেও উপরিউক্ত বিয়ের পরিণাম ভাল হয় না। ঈসায়ীদের মধ্যে অনেক পরিবার সারাজীবন দুঃখকষ্টের শিকারে পরিণত হয়েছে এই অপরিণত সিদ্ধান্তের জন্য। সংসার ভেঙে ছারখার হয়েছে। ছেলেমেয়েরা কোন্ পরিচয়ে মানুষ হবে এই দ্বন্দ্বে পড়ে পুরো ধর্মীয় বিশ্বাসটাকেই বাদ দিতে দেখা গেছে। এমনও দেখা গেছে, স্বামী বড় নেতা, কোন এনজিওর পরিচালক, ইমাম, দক্ষ সমাজকর্মী, দোর্দণ্ড প্রতাপে সমাজে নেতৃত্ব দিচ্ছে, মিটিং মিছিল করছে; আর স্ত্রীও সমানে সমান। অর্থাৎ সামাজিক মর্যাদার দিক থেকে কেউ কারো চেয়ে কম নয়; অথচ ঘরে লাগাতার যুদ্ধ চলছে যা বাইরে থেকে দেখে বোঝার কোন সাধ্য নেই। দিনের পর দিন সেই নেতা-নেত্রী পারিবারিক জীবনে সম্পূর্ণ পরাজিত, বিধ্বস্ত এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে।

কিতাবে লেখা আছে, “তোমরা অসম যোঁয়ালে কাঁধ দিও না।” এই অসম যোঁয়াল ঈমানদার এবং অঈমানদারের বিয়ের ক্ষেত্রে বিবেচনা করা যায়। একজন ঈমানদার হজরত ঈসা মসীহের উপর ঈমান এনে কিতাব অনুযায়ী জীবন যাপন করে। এই অবস্থায় সে যখন ঈমান আনেনি এমন কোন লোককে আবেগতাড়িত হয়ে বিয়ে করে, তখন উভয়ের চালচলন, উভয়ের মধ্যে পার্থক্য এবং মতবিরোধের সৃষ্টি করে। এই কঠিন বাস্তবতায় উভয়েই তিলে তিলে নিঃশ্বেসিত হয়। বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই দেখা যায়, নিজেদের মধ্যে তো বটে, আত্মীয় স্বজনকে নিয়ে আরো বেশি অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অতঃপর কোলে আসে সন্তান, ধীরে ধীরে বড় হয়। তখন স্বামী চায় তার মতো করে সন্তানকে মানুষ করতে, আবার স্ত্রী চায় তার মতো করে গড়ে তুলতে। শুধু তাই নয়, উভয়ের আত্মীয়স্বজনও নিজের নিজের ধর্মীয় কিংবা আদর্শগত ভাবধারায় তাদের আত্মীয়-সন্তানদের মানুষ করার জন্য উভয়কে অনুপ্রাণিত করে, প্রভাবিত করে, চাপ দেয়। তখন সমস্যা নিজেদের মধ্য থেকে সন্তানদের মধ্যেও বিস্তার লাভ করে। সন্তানরা মানসিক দ্বন্দ্বে হাবুডুবু খায়। জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিসহ।

ঈসায়ী হলেও ভাবতে হবে: বিয়ের ক্ষেত্রে শুধু ঈসায়ী বা খ্রিস্টান হলেই যে বিয়ে করতে হবে বা বিয়ে করার জন্য উপযুক্ত কিংবা বিয়ে করা যেতে পারে এমন চিন্তাধারাও ভুল। ঈসায়ী হলেও কোন কোন পাত্র-পাত্রীর ক্ষেত্রবিশেষ অসম যোঁয়াল হতে পারে। আমাদের দেশে অনেক ঈমানদার আছে যারা অজ্ঞানতা, কুসংস্কার, কুপমণ্ডুকতায় বাস করে। ঈসায়ী বা খ্রিস্টান নাম থাকলেও হয়তো দেখা যাবে কারো কারো বিশ্বাস আসলে কিতাবসম্মত নয়। অনেকে ঈসায়ী নামে পরিচয় দিলেও তারা হজরত ঈসাকে প্রভু বলে স্বীকার করে না, নিয়মিত কিতাব পাঠ করে না, মুনাজাত করে না, সাপ্তাহিক এবাদতে যোগ দেয় না বরং অন্যান্য ধর্মের নিয়ম মতোই জীবন যাপন করে। এই অবস্থায় তাদের কারো সাথে বিয়ে হলে, একজন প্রকৃত ঈমানদারের জীবনে নেমে আসতে পারে ভারসাম্যহীনতা ও দ্বান্দ্বিক জটিলতা।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০