Category Archives: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর

নতুন জন্ম এবং পুনর্জন্মের পার্থক্য কী? ঈসায়ীরা কি পুনর্জন্মে বিশ্বাসী?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

ঈসায়ীরা তথাকথিত পুনর্জন্মে নয়, নতুন জন্মে বিশ্বাসী।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

একটি প্রচলিত বিশ্বাস আছে যে, মানুষ মৃত্যুর পর যার যার কর্ম অনুযায়ী পুনরায় জন্মগ্রণ করেন। আর সেই জন্ম এরূপ যে, কেউ যদি ভালো জীবন যাপন করে, তবে সে আরো উন্নততর মানুষ হয়ে জন্মায়। আর যদি কেউ অপেক্ষাকৃত খারাপ জীবন যাপন করে, তবে সে অপেক্ষাকৃত নিকৃষ্ট জীবজন্তু হিসাবে জন্মায়। এই বিশ্বাস অনুযায়ী মানুষ পুনর্জন্মে মানুষ হয়ে যেমন জন্মাতে পারে তেমনি হাতী, ঘোড়া, বাঘ, ভল্লুক, কুকুর, বিড়াল ইত্যাদি হয়েও জন্মাতে পারে। অর্থাৎ এই বিশ্বাস অনুসারে, মানুষের পুনর্জন্ম কর্মের উপর নির্ভর করে।

ঈসায়ীরা এরূপ পুনর্জন্মে নয় বরং নতুন জন্মে বিশ্বাসী। এই বিশ্বাস উল্লেখিত বিশ্বাসের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। ঈসায়ীদের বিশ্বাস অনুযায়ী মানুষ কখনও পশু হয়ে জন্মাতে পারে না। আল্লাহ মানুষকে শ্রেষ্ঠ জীব হিসাবে নিজের সুরতে ও সিফতে সৃষ্টি করেছেন। অন্যান্য সৃষ্ট জীবের মধ্যে মানুষ অনন্যসাধারণ। অন্যান্য জিনিসকে আল্লাহ মুখের কথাতেই সৃষ্টি করেছেন কিন্তু মানুষকে নিজের হাতে ধরে সৃষ্টি করেছেন এবং ফুঁ দিয়ে তার মধ্যে প্রাণবায়ু দিয়েছেন। এছাড়া আল্লাহর কালাম অনুযায়ী মানুষ মৃত্যুর পরে শেষ বিচারের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে এবং শেষবিচারের পর, হয় বেহেশত না হয় দোজখ লাভ করে।

ইঞ্জিল শরিফে যে নতুন জন্মের কথা বলা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ রুহানি অর্থে বলা হয়েছে। অর্থাৎ নতুন জন্ম হলো আত্মার নতুন জন্ম। হজরত আদমের গুনাহর মধ্যদিয়ে মানুষ মৃত্যু (রুহানি অর্থে) বরণ করেছে। এই রুহানি মৃত ব্যক্তিরা জীবিত মানুষের মতো আচরণ করলেও রুহানি দিক থেকে আল্লাহর সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। এই মৃত আত্মাকে নতুন জীবন দেওয়াই হলো নতুন জন্ম। রক্তমাংসের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। এ হলো রুহানি জন্ম, আল্লাহ থেকে এ জন্ম হয়। আল্লাহর কালামে লেখা আছে, “তবে যত জন তাঁর (ঈসার) উপর ঈমান এনে তাঁকে গ্রহণ করল, তাদের প্রত্যেককে তিনি আল্লাহর সন্তান হবার অধিকার দিলেন। একদিক থেকে এই নতুন জন্ম হলো আল্লাহর কাছ থেকে পাওয়া একটি বিশেষ অধিকার।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

মৃত্যুর পর ঈসায়ীরা কোথায় যায়?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

মৃত্যুর পর ঈসায়ীদের দেহ মাটিতে মিশে যায় এবং রুহ আল্লাহর কাছে চলে যায়।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

সকল মানুষের জন্য মৃত্যুর পর কবরেই হয় তার গন্তব্য স্থান। মাটির দেহ মাটিতেই মিশে যায়। তবে রুহানি মৃত্যু ভিন্ন জিনিস। রুহানি মৃত্যু হলো, আল্লাহর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া। কোন ঈসায়ীর মৃত্যু হওয়া মানে তার রুহের মৃত্যু হওয়া বোঝায় না। গুনাহের ফলেই রুহের মৃত্যু হয়। একজন গুনাহগার যখন ঈসাতে ঈমান এনে তাঁকে গ্রহণ করেন তখন তিনি অনন্তজীবন পান। তাঁর রুহের আর মৃত্যু নেই। এই কারণে দৈহিকভাবে মৃত্যু হলেও কোন প্রকৃত ঈসায়ীর রুহানি মৃত্যু হয় না। তিনি মৃত্যুর পর রুহে আল্লাহর কাছে বেহেশতে অবস্থান করেন। শেষকালে একদিন ঈসায়ীরা নতুন দেহ নিয়ে, মাটি ও সাগর থেকে উঠে আসবে। আর হজরত ঈসা মসীহের সাথে একহাজার বছরের রাজত্বে যোগদান করবে।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈমানের মধ্যদিয়ে নাজাত পেলে শরিয়ত কেন দেওয়া হয়েছিল?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

শরিয়ত দেওয়া হয়েছিল, মানুষ যে গুনাহগার তা যেন তারা বুঝতে পারে।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

হজরত মুসার মধ্য দিয়েই প্রথম লিখিত শরিয়ত দেওয়া হয়েছিল। এর আগে মৌখিকভাবে আল্লাহ মানুষকে প্রয়োজনীয় হুকুম দিতেন এবং তা পালনের জন্য তাগিদ দিতেন। আদন বাগানে মানুষের জন্য একটি মাত্র আদেশ ছিল, আর মানুষ সেই একটি আদেশই পালন করতে ব্যর্থ হয়েছিল। অতঃপর লিখিত শরিয়ত দেবার আগে, মানুষকে আল্লাহ বিভিন্নভাবে তাঁর ইচ্ছার কথা জানাতেন কিন্তু মানুষ কোনভাবেই তাঁর ইচ্ছামতো চলতো না। হাবিল কাবিল থেকে শুরু করে, বাবিলের ভাষাভেদ, নুহ নবির সময়কার মহাবন্যা, সাদুম ও আমুরা শহরের বিনাশ প্রমাণ করে যে, মানুষ শরিয়ত পালন করতে পারে না। সবচেয়ে বড় কথা হলো, মানুষ যে গুনাহগার একথাও মানুষ উপলব্ধি করতে পারে না। মানুষের এই বোধ বা উপলব্ধি জাগানোর জন্যই আল্লাহ পরে লিখিত শরিয়ত দিয়েছিলেন।

হজরত পৌল বলেন, “…এ কথা ঠিক যে, শরিয়ত না থাকলে গুনাহ কি তা আমি জানতে পারতাম না। “লোভ করো না”, শরিয়ত যদি এই কথা না বলতো, তবে লোভ কি তা আমি জানতাম না। গুনাহ সেই হুকুমের সুযোগ নিয়ে, আমার মধ্যে সব রকম লোভ জাগিয়েছে। কারণ শরিয়ত না থাকলে, গুনাহ যেন মরার মতো পড়ে থাকে। আমার জীবনে শরিয়ত আসবার আগে আমি বেঁচেই ছিলাম, কিন্তু সেই হুকুম আসবার সঙ্গে সঙ্গে গুনাহও বেঁচে উঠল আর আমারও মৃত্যু ঘটল। যে হুকুমের ফলে জীবন পাবার কথা, তা আমার জন্য মৃত্যু নিয়ে আসল” (রোমীয় ৭:৭-১০)। হ্যাঁ, সত্যি তাই। শরিয়ত দেওয়া হয়েছিল যেন আমরা আমাদের অবস্থা বুঝতে পারি। শরিয়ত আয়নার মতো, আয়না সমস্যা দেখাতে পারে কিন্তু সমস্যা সমাধান করতে পারে না। শরিয়ত দেওয়া হয়েছে যেন আমরা আমাদের অন্তরের চিত্রটা দেখতে পাই, দুষ্ট ক্ষতসমূহ যেন ধরা পড়ে, আমরা যেন আমাদের পাপ বুঝতে পারি। শরীরের রোগ ধরতে পারাটা অবশ্যই বড় কথা; কিন্তু তা-ই কি যথেষ্ট? নিশ্চয় না। তার জন্য চিকিৎসা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ঔষধ সেবন করলেই কেবল রোগের প্রতিকার হয়।

মানুষ যখন বুঝতে পারে সে গুনাহগার এবং কোনভাবে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে না, তখন তার জন্য প্রয়োজন এর প্রতিকার করা। হজরত ঈসা মসীহ এই জন্যই দুনিয়াতে এসেছিলেন। একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে। তিনি মানুষের জন্য কোরবানি হতে এসেছিলেন। আর সেই কাজ তিনি ক্রুশের উপরে করেছিলেন। যুগে যুগে কোরবানিই হলো আসল এবাদত। হজরত নুহ, ইবরাহিম, ইসহাক, ইয়াকুব, দাউদ সকলেই পশু কোরবানি দিয়েছিলেন কিন্তু সেই পশু কোরবানি ছিল আসল কোরবানির চিহ্নমাত্র। সেই কারণে আল্লাহপাক হজরত ইবরাহিমকে নিজের প্রিয় পুত্র কোরবানি দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। আসলে পুত্রকে কোরবানি দেওয়াও হজরত ইবরাহিমের জন্য আল্লাহর উদ্দেশ্য ছিল না, ছিল ঈমানের পরীক্ষা। সেই জন্য কোন অস্থায়ী ও অযোগ্য কোরবানি নয়, নিজের পবিত্র রক্ত দিতে, আসল কোরবানি নিয়ে এসেছিলেন হজরত ঈসা মসীহ। তাঁর উপর কেবল ঈমান এনেই গুনাহ থেকে নাজাত লাভ করা যায়।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসায়ীদের ঈমান কী?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

ঈমান আরবি শব্দ, মানে বিশ্বাস। সাধারণত ঈসায়ীরা আল্লাহ, ফেরেশতা, বেহেস্ত, দোজখ, নবি-পয়গাম্বর, মৃত্যু, পরকাল ইত্যাদিতে বিশ্বাস করে।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

শাব্দিক অনুবাদের খাতিরে ঈমান মানে বিশ্বাস অনুবাদ করা গেলেও ঈমান শব্দের কিতাবি ধারণার সাথে বিশ্বাস কথাটার অনেক দূরত্ব আছে। উদাহরণস্বরূপ, অনেকে ভূত বিশ্বাস করে, অনেকে করে না। পার্থক্য হলো, যারা ভূত বিশ্বাস করে, তারা ভূতের কথা শুনে ভয় পায়। অন্ধকারে চলাফেরায় ভূতের উপস্থিতি থাকতে পারে বলে ভয়েভয়ে থাকে। আবার অনেকে বলে, তারা সব নবিদের বিশ্বাস করে। আসলে, এই ধরনের বিশ্বাস আর ভূতের উপর বিশ্বাসের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। আবার একজন আর এক জনকে বলে, আমি তোমাকে বিশ্বাস করি; আবার কেউকেউ বলে, আমি আপনাকে বিশ্বাস করি না। এই বিশ্বাসের সাথে ঈমানের কোন সম্পর্ক নেই। বিশ্বাস মানে আস্থা রাখা, নির্ভর করা ইত্যাদি। একমানুষ আর এক মানুষকে সামর্থ্য না থাকলেও মনের জোরে বিশ্বাস করতে পারে এবং সেই বিশ্বাসে দ্বিতীয় পক্ষের অসামর্থের কারণে বিরূপ প্রভাবও পড়তে পারে।

ঈসায়ীদের ঈমান একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত বিশ্বাস। এই ঈমান কোন তথ্য জানার ঈমান নয়। যেমন অনেকে বলেন, ‘আমি আল্লাহ আছে, বিশ্বাস করি’। কিতাবের মতে, এরূপ ঈমান ভূতেরও আছে। অথচ এইরূপ ঈমান থেকে ভূত কখনও লাভবান হবে না। ঈসায়ীদের ঈমান হলো, আল্লাহর পুরো পরিকল্পনার উপর ঈমান, যার সাথে মানুষের গুনাহ থেকে নাজাত লাভের ইতিহাস রয়েছে। এই ইতিহাস হলো, আল্লাহ মানুষসহ সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। কোনকিছুই তাঁকে ছাড়া সৃষ্ট হয়নি। আল্লাহ মানুষকে নিজের সুরতে ও সিফতে সৃষ্টি করে তাকে ইচ্ছাশক্তি দিয়েছেন যেন মানুষ তার পছন্দ মতো জীবন যাপন করতে পারে। এই পছন্দের স্বাধীনতা এবং অধিকারের সুযোগ নিয়ে মানুষ আল্লাহর অবাধ্য হয়েছে এবং অনন্ত শাস্তির যোগ্য হয়েছে। এই অসহায় অবস্থায় আল্লাহ মানুষকে ভালোবাসেন বলে, তিনি তার জন্য একজন উদ্ধারকর্তাকে পাঠিয়ে, নাজাতের ব্যবস্থা করেছেন। সেই নিষ্পাপ উদ্ধারকর্তা দুনিয়াতে এসে, মানুষের জন্য কাফফারা দিয়েছেন বলে, মানুষ গুনাহ থেকে নাজাত লাভ করার সুযোগ পেয়েছে। এই উদ্ধারকর্তা হলেন, হজরত ঈসা মসীহ, যিনি কালের পরিক্রমায় এই দুনিয়াতে এসে নিজে মৃত্যু বরণ করে, গুনাহগারদের শাস্তি নিজেই বহন করেছেন এবং কবরে গিয়েছেন। যেহেতু তিনি নিষ্পাপ ছিলেন, সেহেতু তিনি মৃত্যুকে জয় করে, কবর থেকে উঠেছেন। এই পুরো ইতিহাসই হলো ঈসায়ীদের ঈমান।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসায়ী হলে কি নারী, বাড়ি, গাড়ি ইত্যাদি পাওয়া যায়?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

না, ঈসায়ী হলে নারী, বাড়ি, গাড়ি পাওয়া যায় না।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

ঈসায়ী হলে নারী, বাড়ি, গাড়ি পাওয়া তো যায়ই না বরং ক্ষেত্রবিশেষ যা আছে তাও ত্যাগ করতে হয়। সাধারণত ঈসায়ী হওয়ার পর পারিবারিক ও সামাজিক চাপ এতই বৃদ্ধি পায় যে, কোন কোন ঈসায়ী তার যা আছে তা-ও ত্যাগ করে ঈমানের পথে চলতে বাধ্য হয়। ঈসায়ী হওয়ার বিষয়টি বাহ্যিক জিনিস পত্রের উপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে রুহানি অবস্থার উপর। মানুষের জীবনে নারী, বাড়ি কিংবা গাড়িই বড় কথা নয়, বড় কথা হলো নাজাত, অনন্ত জীবনের নিশ্চয়তা ও সুখ। হজরত ঈসার উপর ঈমান আনার মধ্য দিয়ে, মানুষ সেই নিশ্চয়তা ও সুখ লাভ করে। সুতরাং তখন পার্থিব জীবনের ভোগবিলাস তার কাছে বড় হয়ে দেখা দেয় না।

একথাও ঠিক যে, ঈসায়ী হওয়া মানে আল্লাহর সন্তান হওয়া এবং আল্লাহর সন্তানকে আল্লাহ ্িনজেই দেখাশোনা করেন। ফলে ঈসায়ী হবার পর যে কেবল দুঃখ-কষ্ট নেমে আসে তা নয়, তার সাথে আল্লাহর অপার রহমতও তার উপর বর্র্তায়। তিনি আল্লাহর রহমতেই তার প্রয়োজনীয় জিনিস তিনি পান। আল্লাহ আকাশ থেকে তাঁর বান্দাদের জন্য দান ফেলে দেন না, তিনি অন্য বান্দাদের অন্তরে কথা বলেন এবং সেইভাবে অন্য কোন ঈসায়ী ঈমানদার আল্লাহর সাহায্য পায়। এই দিক থেকে কোন ঈসায়ী আর এক ঈসায়ীকে দয়াপরবশ হয়ে কিছু দিতেও পারেন। প্রথমিক যুগে সমাজের ঈমানদারেরা পরস্পর পরস্পরকে সহায়তা করতেন, জীবনের সকল কিছুতে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ থাকতেন।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

কোন ব্যক্তি ঈসায়ী হলে কি তাকে ঘরবাড়ি ত্যাগ করতে হয়?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

না, কোন ব্যক্তি ঈসায়ী হলে সাধারণত ঘরবাড়ি ত্যাগ করতে হয় না।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

কোন ব্যক্তি যদি নিজ বাড়িতে থেকে ঈসায়ী ঈমান-আকিদা ঠিক রেখে চলতে পারে, তবে তার বাড়ি ত্যাগ করা উচিত নয়। বরং যতদূর সম্ভব ঈমানদার ব্যক্তি তার পরিবারের সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে চলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, শুধু ভাষা ও সংস্কৃতিগত কারণে বাড়ি থেকে বের হয়ে, অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছে।

উদাহরণ: যেমন- কালাম নামের এক ব্যক্তি এক খ্রিস্টান ভদ্রলোকের কাছ থেকে সুখবর পেয়ে এবং পড়াশুনা করে জানতে পেরেছে যে, সে পাপী। সে আরো পড়াশোনা করে, কোরান ও বাইবেলের সাথে মিলিয়ে দেখে। বাইবেলের শব্দগুলো কালামের কাছে অপরিচিত মনে হয়। সে ভাবে, সে ভুল করেছে; আবার তার ফিরে যাওয়া উচিত। তবু সত্য তার কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। অতঃপর ভাষাগত ও সামাজিক নিয়মকানুনের উপর কিছু সন্দেহ থাকলেও সে ঈসাকে নাজাতদাতা হিসাবে বিশ্বাস করে, যদিও তাকে বলা হয়েছে যে, সে যিশুকেই বিশ্বাস করছে। সেই খ্রিস্টান ভদ্রলোকের কৃষ্টি-সংস্কৃতি অনুসারে, কালাম বাইবেল পড়ে, গির্জায় যেতে শুরু করে। অতঃপর আল্লাহকে ঈশ্বর, ঈসাকে যিশু, নবিকে ভাববাদী, কিতাবুল মোকাদ্দসকে বাইবেল এবং পানিকে জল ইত্যাদি বলা শুরু করে। কিছুদিন স্থানীয় পাদ্রির কাছ থেকে শিক্ষা নেবার পর, সে বাপ্তিষ্ম গ্রহণ করে; তার নাম পরিবর্তন করে, একটি ইংলিশ নাম যুক্ত করে দেয়া হয়। তার নাম হয় মাইকেল। তখন থেকে তাকে বলা হলো যে, সে খ্রিস্টান হয়ে গেছে। সে আর মুসলমান নয়; সে যেকোন কিছু খেতে পারে। অর্থাৎ খ্রিস্টান হবার পর তার জন্য সামাজিক নিয়মকানুনসহ ধর্মকর্ম বলতে কিছু নেই। যেমন নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ইত্যাদি এবং হারাম-হালাল বলতেও কিছু নেই; যেমন কাঁকড়া, কাশিম, শুকর ইত্যাদি; অর্থাৎ সে এখন থেকে সবই খেতে পারে।

কালাম সরল বিশ্বাসে এগোয়, বাড়িতে গিয়ে একই সাক্ষ্য দেয়। রুহানি পরিবর্তনের চেয়েও খ্রিস্টান সমাজের ইচ্ছায় বাহ্যিক কর্মকাণ্ডের উপর সে বেশি জোর দেয়। বাড়ি গিয়ে অন্তরে কী পরিবর্তন হয়েছে বা সে যে গুনাহের ক্ষমা পেয়েছে তার সাক্ষ্য না দিয়ে, নামাজ আর পড়তে হবে, না, রোজা আর রাখতে হবে না, এমনকি এখন থেকে হারাম জিনিস সে খেতে পারবে তারই সাক্ষ্য দেয়। ফলে তার মা’বাবা খুবই বিরক্ত হয়ে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। যুবক অবস্থায় এই পরিস্থিতি তার জন্য ভয়াবহ। সে ছাত্র, কে তাকে লেখাপড়া করার সুযোগ দেবে, কে-ই বা তার ভরণ-পোষণ করবে? ফলে, পরগাছার মতো কাউকে ধরে সে বাঁচতে চায়; এখানে ওখানে গিয়ে চাকরি খোঁজে, এভাবে সে পরনির্ভশীল হয়ে ওঠে। কালাম না যেতে পারে তার পরিবারের কাছে, পুরোপুরি না মিশতে পারছে খ্রিস্টান সমাজের সাথে। কোনরকম বাঁচার মতো একটি খ্রিস্টান প্রতিষ্ঠানে চাকরি খুঁজে পেয়ে, কিছু খ্রিস্টান লোকের সাথে পরিচিত হয়ে উঠলেও মনের সংগোপনে সে একাকী জীবন যাপন করতে থাকে।

এই অবস্থা অনাকাঙ্কিত। সে যদি বাহ্যিক বিষয় নিয়ে সাক্ষ্য না দিতো, সামাজিক নিয়মকানুনের উপর বেশি কথা না বলতো, তবে পরিপক্ক এবং স্বাবলম্বী হয়ে ওঠা পর্যন্ত তার বাড়িতে থেকেই সে ঈসায়ী ঈমানদার জীবন যাপন করতে পারতো। তাকে যা করতে হতো তা হলো, ঈসাকে যিশু না বলে ঈসা বলতে থাকা এবং ঈশ্বর, ভাববাদি, জল ইত্যাদি না বলে, আগে যে ভাষা সে ব্যবহার করতো তা করতে থাকা। সে যদি অনাকাক্সিক্ষত ভাষা ও খাবারের মতো সামাজিক নিয়মকানুনগুলো আগের মতোই মেনে চলতো, নাম পরিবর্তন না করতো, তবে তাকে কেবল সাধারণ ধর্মকর্ম না করার জন্য বাড়ি থেকে বের হতে হতো না। কারণ মুসলমানদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি লোক ধর্মকর্ম ঠিকভাবে করে না।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

যৌনসংক্রান্ত ব্যাপারে কি ঈসায়ীদের কোন বাচবিচার নেই? তারা কি নিয়মসিদ্ধ বিয়ে করে?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

ঈসায়ীরা নিয়মসিদ্ধ বিয়ে করে।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

পাককালাম অনুসারে ঈসায়ীদের কোন স্ত্রীলোকের প্রতি লোভ পর্যন্ত না করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ইঞ্জিল শরিফে ঈসায়ীদের শরীরকে আল্লাহর থাকবার ঘর বলা হয়েছে। সাবধান করা হয়েছে, সেই ঘর যেন কোনভাবে অপপিত্র করা না হয়। আল্লাহর কালামের অবাধ্য হয়ে, কেউ যদি বিয়ের আগে যৌনাচার করে, তবে তা হবে ব্যভিচার; যা আল্লাহ ঘৃণা করেন। এ ধরনের কাজের প্রতি কোন কিতাবি সমর্থন নেই। ঈসায়ীদের ক্ষেত্রে ব্যভিচার বিষয়ে কঠিন শিক্ষা রয়েছে। হজরত ঈসার শিক্ষা অনুযায়ী, ব্যভিচার করলেই যে ব্যভিচার হয় তা নয় বরং কারো প্রতি কামনার দৃষ্টিতে দেখলেই ব্যভিচারের দোষে দোষী হয়। অতএব, বোঝা যায় যে, যৌন সংক্রান্ত ব্যাপারে ঈসায়ীদের জন্য অবশ্যই কঠিন বাধ্যবাধকতা আছে।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসায়ীরা কি মানুষকে টাকা দিয়ে ঈসায়ী বানায়?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

না, ঈসায়ীরা মানুষকে টাকা দিয়ে ঈসায়ী বানায় না।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

ঈসায়ী বানানোর বিষয় নয়। কাউকে ঈসায়ী বানানো যায় না। কোন ব্যক্তি যখন বুঝতে পারেন যে, আল্লাহ পবিত্র এবং ধার্মিক কিন্তু মানুষ হিসেবে তিনি গুনাগাহর, সাথে সাথে একথাও বুঝতে পারেন যে, হজরত ঈসা তার গুনাহর শাস্তি নেবার জন্য মৃত্যু বরণ করে, কবরস্থ হয়েছে এবং কবর থেকে পুনরুত্থিত হয়েছেন। যখন এ বিশ্বাসে তাঁর উপর ঈমান আনেন তখনই তিনি ঈসায়ী হন। ঈসায়ী হওয়া অন্তরের বিষয়, বাহ্যিক বিষয় এর মাপকাঠি নয়। এছাড়া টাকার লোভে যে ঈসায়ী হয়, সে প্রকৃত ঈসায়ী নয়। যে প্রকৃত ঈসায়ী হয়, তাকে বানাতে হয় না, সে বুঝেশুনেই ঈসায়ী হয়।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

একজন ঈসায়ী কি যে কাউকে বিয়ে করতে পারে?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

একজন প্রকৃত ঈসা যে কাউকে বিয়ে করতে পারে না।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

মানুষ সামাজিক জীব। সমাজের আর দশজনের সাথে মিলেমিশে চলাই স্বাভাবিক। প্রত্যেক সমাজের মধ্যে কিছু লিখিত, কিছু অলিখিত নিয়ম কানুন আছে। মানুষ সেসব নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। জেনেশুনে কিংবা অভ্যস্ত হওয়ার ফলে, মনের অজান্তেই মানুষ সামাজিক নিয়মগুলো পালন করে। ঈসায়ীরাও যে যেখানে থাকুক না কেন সেই সমাজের রীতিনীতি তাদের মেনে চলা উচিত। মনে রাখতে হবে, সমাজে অনেক কর্মকাণ্ড আছে যা কিতাব সমর্থন করে না, তা পালন করতে গিয়ে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে নেমে আসে দুঃসহ যন্ত্রণা। সমাজ মানুষের মঙ্গলের জন্য, আবার একটি ছোট্ট ভুলের জন্য সেই সামাজিক নিয়মই মানুষের জীবনে চরম অশান্তি ডেকে আনে। বিয়ে একটি সামাজিক অনুষ্ঠান। কিন্তু বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা প্রধানত ধর্মগত, অতঃপর আইনগত।

ধর্মীয় বিশ্বাস: প্রত্যেক মানুষ তার নিজের ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে চলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এমনকি প্রগতিবাদী লোকেরাও সভা সমিতিতে প্রগতির কথা বললেও দেখা যায়, ধর্মীয় প্রশ্নে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনাকাঙ্খিত আচরণ প্রকাশ পায়। মুষ্টিমেয় নাস্তিক শ্রেণীর কথা বাদ দিলে, আদিকাল থেকেই মানুষ সমাজের কোন না কোন ধর্মীয় মূল্যবোধ নিয়েই জীবনযাপন করে। ধর্মীয় মূল্যবোধের কথা যখন বলা হয়, তখন বিভিন্ন ধর্মের কথা আসে। পৃথিবীতে এমন হাজারো প্রমাণ আছে যে, একই ধর্মের অনুসারী হয়েও কিছু ছোটখাটো বিষয়ে অমতের কারণে নিজেরা কলহ করে লক্ষলক্ষ লোক প্রাণ দিয়েছে। আমরা প্রোটেস্টান এবং রোমান ক্যাথলিকদের ধর্মযুদ্ধ, এ্যাংলিক্যান-প্রেসবিটারিয়ানদের দ্বন্দ্বের কথা জানি; জানি উমাইয়া-আব্বসীয় বংশের যুদ্ধের কথা, শিয়া-সুন্নি-ওহাবি-আহমদিয়া-ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয় ইত্যাদি সম্প্রদায়ের বিয়োগান্ত পরিণতির কথা তো বলাই বাহুল্য। এ থেকে বোঝা যায় যে, মানুষ তার মনের গোপনে একটি নিজস্ব ধর্মীয় বিশ্বাসকে লালন করে। কিন্তু বিয়ের ক্ষেত্রে দেখা যায়, পাত্র বা পাত্রী পছন্দ হলে, কোন কোন লোক কিছুদিনের জন্য ধর্মীয় মূল্যবোধকে জলাঞ্জলি দেয়। আর নিজের ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত না হলেও পছন্দসই পাত্রপাত্রীকেই বিয়ে করে।

পরিণাম: আপাতদৃষ্টিতে ভাল মনে হলেও উপরিউক্ত বিয়ের পরিণাম ভাল হয় না। ঈসায়ীদের মধ্যে অনেক পরিবার সারাজীবন দুঃখকষ্টের শিকারে পরিণত হয়েছে এই অপরিণত সিদ্ধান্তের জন্য। সংসার ভেঙে ছারখার হয়েছে। ছেলেমেয়েরা কোন্ পরিচয়ে মানুষ হবে এই দ্বন্দ্বে পড়ে পুরো ধর্মীয় বিশ্বাসটাকেই বাদ দিতে দেখা গেছে। এমনও দেখা গেছে, স্বামী বড় নেতা, কোন এনজিওর পরিচালক, ইমাম, দক্ষ সমাজকর্মী, দোর্দণ্ড প্রতাপে সমাজে নেতৃত্ব দিচ্ছে, মিটিং মিছিল করছে; আর স্ত্রীও সমানে সমান। অর্থাৎ সামাজিক মর্যাদার দিক থেকে কেউ কারো চেয়ে কম নয়; অথচ ঘরে লাগাতার যুদ্ধ চলছে যা বাইরে থেকে দেখে বোঝার কোন সাধ্য নেই। দিনের পর দিন সেই নেতা-নেত্রী পারিবারিক জীবনে সম্পূর্ণ পরাজিত, বিধ্বস্ত এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে।

কিতাবে লেখা আছে, “তোমরা অসম যোঁয়ালে কাঁধ দিও না।” এই অসম যোঁয়াল ঈমানদার এবং অঈমানদারের বিয়ের ক্ষেত্রে বিবেচনা করা যায়। একজন ঈমানদার হজরত ঈসা মসীহের উপর ঈমান এনে কিতাব অনুযায়ী জীবন যাপন করে। এই অবস্থায় সে যখন ঈমান আনেনি এমন কোন লোককে আবেগতাড়িত হয়ে বিয়ে করে, তখন উভয়ের চালচলন, উভয়ের মধ্যে পার্থক্য এবং মতবিরোধের সৃষ্টি করে। এই কঠিন বাস্তবতায় উভয়েই তিলে তিলে নিঃশ্বেসিত হয়। বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই দেখা যায়, নিজেদের মধ্যে তো বটে, আত্মীয় স্বজনকে নিয়ে আরো বেশি অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অতঃপর কোলে আসে সন্তান, ধীরে ধীরে বড় হয়। তখন স্বামী চায় তার মতো করে সন্তানকে মানুষ করতে, আবার স্ত্রী চায় তার মতো করে গড়ে তুলতে। শুধু তাই নয়, উভয়ের আত্মীয়স্বজনও নিজের নিজের ধর্মীয় কিংবা আদর্শগত ভাবধারায় তাদের আত্মীয়-সন্তানদের মানুষ করার জন্য উভয়কে অনুপ্রাণিত করে, প্রভাবিত করে, চাপ দেয়। তখন সমস্যা নিজেদের মধ্য থেকে সন্তানদের মধ্যেও বিস্তার লাভ করে। সন্তানরা মানসিক দ্বন্দ্বে হাবুডুবু খায়। জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিসহ।

ঈসায়ী হলেও ভাবতে হবে: বিয়ের ক্ষেত্রে শুধু ঈসায়ী বা খ্রিস্টান হলেই যে বিয়ে করতে হবে বা বিয়ে করার জন্য উপযুক্ত কিংবা বিয়ে করা যেতে পারে এমন চিন্তাধারাও ভুল। ঈসায়ী হলেও কোন কোন পাত্র-পাত্রীর ক্ষেত্রবিশেষ অসম যোঁয়াল হতে পারে। আমাদের দেশে অনেক ঈমানদার আছে যারা অজ্ঞানতা, কুসংস্কার, কুপমণ্ডুকতায় বাস করে। ঈসায়ী বা খ্রিস্টান নাম থাকলেও হয়তো দেখা যাবে কারো কারো বিশ্বাস আসলে কিতাবসম্মত নয়। অনেকে ঈসায়ী নামে পরিচয় দিলেও তারা হজরত ঈসাকে প্রভু বলে স্বীকার করে না, নিয়মিত কিতাব পাঠ করে না, মুনাজাত করে না, সাপ্তাহিক এবাদতে যোগ দেয় না বরং অন্যান্য ধর্মের নিয়ম মতোই জীবন যাপন করে। এই অবস্থায় তাদের কারো সাথে বিয়ে হলে, একজন প্রকৃত ঈমানদারের জীবনে নেমে আসতে পারে ভারসাম্যহীনতা ও দ্বান্দ্বিক জটিলতা।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসায়ীরা কি পোপের নির্দেশে জীবন যাপন করে?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

না, প্রকৃত ঈসায়ীরা পোপের নির্দেশে জীবন যাপন করে না।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

আল্লাহর কালাম বলে, ধার্মিক কেউ নেই, একজনও নেই, সকলেই গুনাহ করেছে এবং আল্লাহর গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। ঈসায়ী হবার পর অর্থাৎ আল্লাহর দেয়া ধার্মিকতা লাভের পর, ঈসায়ীদের মধ্যে কোন বড় ছোট নেই। তারা সকলেই সরাসরি আল্লাহর সাথে যোগাযোগ করতে পারে। কোন পোপ বা কোন ইমামের মধ্যস্থতা নিয়ে ঈসায়ীদের আল্লাহর কাছে যেতে হয় না। আল্লাহর কালাম অনুযায়ী, ঈসায়ীদের মধ্যস্থ একজনই আছেন, তিনি ঈসায়ীদের খোদাবন্দ ঈসা মসীহ। আল্লাহ ব্যতীত একমাত্র তিনিই নিষ্পাপ হিসাবে জন্মেছিলেন। এবং তিনি গুনাহগারদের হয়ে ক্রুশে কাফফারাস্বরূপ মৃত্যু বরণ করেছিলেন।

সামাজিকভাবে ধর্মীয় জীবন যাপন করার জন্য বিশেষ করে আল্লাহর কালাম শিক্ষা দেবার জন্য ঈসায়ীদের মধ্যে ইমাম বা খাদেম থাকলেও তারা তাদের মধ্যস্থ মনে করে না বা কিতাব সেভাবে বর্ণনা করে না। ইমাম সমাজে নৈমিত্তিক শিক্ষা দেবার কাজ করেন এবং রুহানি নিয়ম শৃঙ্খলা মানার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেন। সামাজিক দিক দিয়ে তাঁর ইমাম পদমর্যাদা থাকলেও তিনি কোনভাবে আল্লাহর চোখে সাধারণ ঈমানদারের চেয়ে বেশি কিছু নন।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০